একটি বা দুটি নয় অন্তত সতেরোটি ভিন্ন নাম ব্যবহার করে শেখ হাসিনার আমলে বিজ্ঞাপনের বাজারকে নিজেদের কাছে কুক্ষিগত করে রেখেছিল সাবেক সংসদ সদস্য এবং মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর ও প্রয়াত আলী জাকের পরিবারের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান এশিয়াটিক গ্রুপ।
৪০০০ কোটি টাকার বিজ্ঞাপনে বাজারের ৮০ ভাগ দখল করে রেখেছিল এশিয়াটিক গ্রুপ। জাতীয় দৈনিক আমার দেশ মিডিয়াতে ২৩ জানুয়ারি প্রকাশিত এক বিশেষ প্রতিবেদনে এ বিষয়টি ফুটে উঠেছে। এভাবে বিজ্ঞাপনের বাজারের দখল করার মাধ্যমে গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করেছে এশিয়াটিক গ্রুপ।
প্রয়াত আলী যাকের ছিলেন এশিয়াটিক গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা। তার মৃত্যুর পর গ্রুপটির দায়িত্ব নেন নীলফামারীর আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য এবং মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। তিনি বিএনপি কর্মী গোলাম রব্বানী হত্যা মামলার অন্যতম আসামি।
তবে শেখ হাসিনার পলায়নের পর আসাদুজ্জামান নূরকে এশিয়াটিক গ্রুপ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। আমার দেশ-এর লিখিত প্রশ্নের উত্তরে গ্রুপটি জানিয়েছে, গত বছর আগস্টে এশিয়াটিক গ্রুপের সব শেয়ার ছেড়ে দেন আসাদুজ্জামান নূর।
বর্তমানে এশিয়াটিক গ্রুপের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন প্রয়াত আলী যাকেরের স্ত্রী সারা যাকের। ছেলে ইরেশ যাকের রয়েছেন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে। আর মেয়ে শ্রেয়া সর্বজয়া রয়েছেন রেডিও স্বাধীনের দায়িত্বে। আসাদুজ্জামান নূরের ছেলে সুদীপ্ত এশিয়াটিক গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
সুদীপ্ত আরিকুজ্জামান কাজ করতেন এশিয়াটিক গ্রুপের আরেক প্রতিষ্ঠান ফোর থট পিআরে। তবে ৫ আগস্টের পর তিনি এখানে আছেন কি না, সে বিষয়ে কিছু বলেনি এশিয়াটিক গ্রুপ। ২০১৭ সালে টিমথি স্টিফেন গ্রিন নামের এক ব্রিটিশ নাগরিককে বিয়ে করেন নূরকন্যা সুপ্রভা। এশিয়াটিক গ্রুপের সঙ্গে তার যুক্ত থাকার বিষয়ে স্পষ্ট বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
আসাদুজ্জামান নূরের বিরুদ্ধে যেমন খুনের অভিযোগ আছে, তেমনি এশিয়াটিক গ্রুপের মাধ্যমে দেশের গণমাধ্যম শাসনের অভিযোগও রয়েছে। তার ক্ষমতার দাপটে বিজ্ঞাপনের বাজার যেমন শুধু এশিয়াটিকনির্ভর হয়ে পড়ে, তেমনি কোটি কোটি টাকার বিজ্ঞাপন বিল আটকে দিয়ে গণমাধ্যমগুলোকেও নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতেন তিনি।
দেশের গণমাধ্যমগুলোর অনেকেরই অভিযোগ বিজ্ঞাপনের প্রকৃত মূল্য থেকে কয়েকগুণ কম মূল্যে বিজ্ঞাপন প্রচার বা প্রকাশ করতে বাধ্য করা হয় এশিয়াটিকের মাধ্যমে। ফলে বিজ্ঞাপন সংখ্যা বাড়লেও আয় কমেছে, আর্থিকভাবে রুগ্ন হয়ে পড়েছে অনেক মিডিয়া।
মাসের পর মাস কোন নিউজ পেপার বা টিভি চ্যানেলকে অনৈতিক উপায়ে বয়কট করার মাধ্যমে গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করতেন আসাদুজ্জামান নূর। গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করার এটি একটি অপকৌশল ছিল। যারা ভুক্তভোগী পত্রিকা এবং টিভি চ্যানেলের অথোরিটি তারা জানান যে, ন্যায্যতার ভিত্তিতে দর মেনে নিতে তাদের আপত্তি ছিল।
এ কারণে এ ধরনের অপকৌশল প্রয়োগ করা হতো। এভাবে বিজ্ঞাপন বন্ধ করার হুমকি উপেক্ষা করার মতো অবস্থা টিভি চ্যানেল ও নিউজ পেপারের পক্ষে সম্ভব ছিল না।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।