জুমবাংলা ডেস্ক : বাংলাদেশের একটি বিভাগীয় শহরের বড় অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের চারতলার একটি ফ্ল্যাটের বাসিন্দা এক শিক্ষক দম্পতি। দুটি বাচ্চা আছে তাদের। কিছুদিন আগে তাদের বাসায় অদ্ভুত এক ঘটনা ঘটতে শুরু করে। হুটহাট ফ্ল্যাটের বিভিন্ন কক্ষে থেমে থেমে আগুন জ্বলে উঠছিল।
কখনো শোবার ঘরের আলমারির ভেতরে, কখনো ওয়ার্ড রোবে, কখনো বা খাটের তলায় আবার কখনো রান্নাঘরে। কোনোভাবেই এ আগুনের রহস্য উন্মোচন করা সম্ভব হচ্ছিল না। ফায়ার সার্ভিসের লোকজন গিয়েও বুঝতে পারছিলেন না কিভাবে এই আগুনের সূত্রপাত।
বাসার গ্যাস, বিদ্যুতের লাইন চেক করা হয়। যা সম্পূর্ণ ঠিকঠাক ছিল। তন্ন তন্ন করে খুঁজেও ঘরের কোথাও কোনো দাহ্য বস্তুর অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। তবু প্রতিদিন ঘরের বিভিন্ন জায়গায় জ্বলতে থাকে আগুন। সপ্তাহব্যাপী চলতে থাকে এই তাণ্ডব। ঘরে একজন গৃহকর্মী আছেন। তিনি ভীষণ বিশ্বাসী বলে জানিয়েছে ওই শিক্ষক পরিবার। গৃহকর্মীর কাজ হলো ওই দম্পতির এক এবং পাঁচ বছর বয়সী দুই সন্তানকে দেখাশোনা করা। আগুনের ঘটনা শুরুর পরও সব কিছুই ঠিকঠাক চলছিল।
এসব ক্ষেত্রে গৃহকর্মীর দিকে সন্দেহের তীর ছুটে যায়। কিন্তু সেই গৃহকর্মী উল্টো প্রায় প্রতিটি আগুন লাগার পর ধোঁয়া দেখে কিংবা গন্ধ পেয়ে সবাইকে সতর্ক করেছে বলে আগুন নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে পারেনি। এ জন্য ওই পরিবারের সবাই তার প্রতি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ। এদিকে সপ্তাহব্যাপী ১৩-১৪ বার আগুন লাগায় খাট, জাজিম, ওয়ার্ড রোব, বিছানা, কাপড়চোপড়, টেলিভিশন ইত্যাদি পুড়ে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে আনুমানিক তিন লাখ টাকা। আগুনের ঘটনা বন্ধে পারিবারিক বৈঠকও বসে। কিন্তু কোনো সমাধান পাওয়া যায়নি।
ঘটনাটি বলছিলেন একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা। তার মেয়ের বাসাতেই এ ঘটনা ঘটেছে। কোনো ক্লু পাওয়া না যাওয়ায় অতঃপর স্বজনদের কেউ কেউ এটাকে ভূতুড়ে কর্মকাণ্ড ধরে নিয়ে খোনকার ডেকে ‘বাড়ি পরিশোধন’ করার পরামর্শ দেন। এদিকে ওই পরিবারের কেউই ভূত-প্রেতে বিশ্বাসী নয়। তাই নিরুপায় হয়ে সতর্কতা হিসেবে একটি ছোট আকারের অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সারা ঘরে পানি ছিটানোর মতো লম্বা পাইপ কেনা হলো। আগুন নেভানোর জন্য বালতিতে পানি ভরে রাখা হলো। দেশলাই, মোমবাতিসহ আগুন সম্পর্কিত সব কিছু বাক্সে তালাবদ্ধ করে রাখা হলো।
এরপর দ’দিন হঠাৎ করেই আগুনের তাণ্ডব বন্ধ। বাড়ির সদস্যরা স্বস্তি ফিরে পান। কিন্তু দু’দিন যেতে না যেতেই এক লোড শেডিংয়ের রাতে বাসায় পোড়া মোমবাতির গন্ধ পাওয়া গেল। গৃহকর্মীকে জিজ্ঞেস করা হলে সে বলল, কোনো মোমবাতি ধরানো হয়নি। তবে একটু পরই গৃহকর্মী বরাবরের মতো আগুনের খবর দিল, ‘খালাম্মা ধোঁয়ার গন্ধ পাচ্ছেন?’ ফের শুরু হলো ছোটাছুটি। এ ঘর ও ঘর করে মাঝখানের শোবার রুমের আলমারির কোনায় লাল রঙের একটা কিছু দেখা গেল। টান দিয়ে আলমারির দরজা খুলতেই আগুনের শিখা। আলমারিতে রাখা শাড়িগুলো পুড়ছে!
আগুন নেভানোর পর ফের নজর গেল আলমারির নিচে পড়ে থাকা সেই লাল বস্তুটার দিকে। চামচে করে সেই বস্তুটি নিয়ে আগুনে ধরতেই তা গলে গেল। মানে এটা মোম! আগুন জ্বলার আগমুহূর্তে এই মোম পোড়া গন্ধ আসছিল। ভালো করে খুঁজে চুলার নিচেও কয়েক ফোঁটা মোম পাওয়া গেল। এবার আর সন্দেহ রইল না এটা কার কাজ। রাতে আর কোনো কিছু না বলে সকালে গৃহকর্মীর মা-বাবাকে ডেকে এনে তাদের সামনেই জেরা শুরু হলো। পুলিশে দেওয়ার কথা বলতেই গৃহকর্মী স্বীকার করে নিল, সেই এত দিন এই কাণ্ড ঘটিয়েছে!
কিন্তু কেন? জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গেল, মেয়েটি ইতোপূর্বে অনেক বাসায় কাজ করেছে। আর সে কোনো বাসায় কাজ করতে চায়নি। মা-বাবা জোর করে পাঠিয়েছে। এসব কথা ওই শিক্ষক পরিবারের কাছেও গোপন রেখেছিল গৃহকর্মী এবং তার মা-বাবা। মেয়েটি স্বাভাবিকভাবেই বাচ্চাদের দেখাশোনা করত। কখনোই কাজ করতে অস্বীকৃতি জানায়নি। কিন্তু ভেতরে ভেতরে সে কাজ করতে চাইছিল না। তাকে যেন আর কাজ করতে না পাঠানো হয়, এ জন্যই সে আগুন তাণ্ডব চালিয়েছে! মাঝে দুই দিন ওই গৃহকর্মী নিজের বাড়িতে যাওয়ায় ওই দুই দিন বাসার কোথাও আগুন ধরেনি। গৃহকর্মী ফিরতেই ফের শুরু হয় আগুনের তাণ্ডব। সেই গৃহকর্মীকে তার মা-বাবার জিম্মায় দেওয়া হয়েছে। বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হলেও পরিবারটিতে ফিরেছে স্বস্তি।
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের শেষকৃত্যে যে তিন দেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি ব্রিটেন
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।