জুমবাংলা ডেস্ক: বাজারে বিক্রি হওয়া দুধ নিয়ে গবেষণা প্রতিবেদনের প্রকাশের পর হুমকি দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক আ ব ম ফারুক। অবশ্য এই ‘হুমকির মধ্যেই’ দ্বিতীয় দফায় প্যাকেটজাত ও খোলা দুধ নিয়ে গবেষণা করে প্রতিবেদন করা হয়েছে।
দুধের ১০টি নমুনার সবগুলোতে অ্যান্টিবায়োটিকের অস্তিত্ব পাওয়ার কথা জানিয়েছেন বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টারের সদ্য সাবেক পরিচালক।
ভবিষ্যতেও এই পরীক্ষাসহ অন্যান্য পরীক্ষাগুলোর ফলাফল জনস্বার্থে প্রকাশ করার চেষ্টা করার কথা বলেছেন অধ্যাপক ফারুক। আর ‘হুমকির’ বিষয়ে বলেছেন, ‘আমাদের পরীক্ষাকে শক্তি দিয়ে, কালো টাকা দিয়ে বা হুমকি দিয়ে থামানো যাবেনা, ভুল প্রমাণ করা যাবে না৷ আমি এই দুধের নমুনা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পরীক্ষার আহ্বান জানাচ্ছি৷’
জার্মানভিত্তিক গণমাধ্যম ডয়েসে ভেলের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন আলোচিত হয়ে উঠা এই অধ্যাপক।
শনিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরো নতুন দুটি ক্ষতিকর অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়ার কথা জানানো হয়েছে৷ যে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের পাস্তুরিত দুধ দ্বিতীয় দফা পরীক্ষা করা হয়েছে তা হলো: প্রাণ, মিল্ক ভিটা, ইগলু, আড়ং ও ফার্ম ফ্রেশ৷
প্রথম দফায় ২৫ জুন যে পরীক্ষা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয় তাতে তিনটি করে অ্যান্টিবায়োটিকের কথা জনানোন হয়৷ গত সপ্তাহে ওই একই ব্র্যান্ডের দুধের নমুনা একই জায়গা থেকে সংগ্রহ করে ল্যাবে পরীক্ষা করা হয় আর তাতে মোট চারটি করে অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়া যায়৷
সবগুলো নমুনাতেই পাওয়া এন্টিবায়োটিক হলো: অক্সিটেট্রাসাইক্লিন, এনরোফ্লক্সাসিন, সিপ্রোফ্লক্সাসিন এবং লেভোফ্লক্সাসিন৷ এর মধ্যে আগের বারে ছিল না এমন নতুন যে দুটি অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়া গেছে তা হলো: অক্সিটেট্রাসাইক্লিন ও এনরোফ্লক্সাসিন৷
অধ্যাপক আ ব ম ফারুক বলেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম প্রথম দফা প্রতিবেদন প্রকাশের পর পরিস্থিতির উন্নতি হবে। কিন্তু কোনো উন্নতি হয়নি। যা আছে তাই রয়ে গেছে।’
‘বিএসটিআই এখনো দুধের মাত্র নয়টি উপাদান পরীক্ষা করে৷ অ্যান্টিবায়োটিক ও ডিটারজেন্ট-এর উপস্থিতি পরীক্ষা করা হয় না। এটা অবশ্যই করতে হবে। আমরা ১৯ ধরনের পরীক্ষা করেছি। সিঙ্গাপুরে করে ৫০ ধরনের পরীক্ষা। আমেরিকায় করে ৩৮ ধরনের পরীক্ষা।’
‘বিশ্ব সংস্থার গাইডলাইন মেনে একটি জাতীয় কমিটি গঠন করা হোক এই পরীক্ষার জন্য৷ আর নমুনা সংগ্রহ করতে হবে খুচরা বিক্রয় পর্যায় থেকে।’
প্রথম দফা প্রতিবেদন প্রকাশের পর গত ৯ জুলাই মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন অধ্যাপক ফারুকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি দেন৷
সচিব বলেন, ‘পিয়ার রিভিউড জার্নালে (গবেষণা প্রকাশের আন্তর্জাতিক জার্নাল) যদি প্রকাশ করে থাকেন তাহলে অবশ্যই আগামী সাত দিনের মধ্যে তা মন্ত্রণালয়ে হাজির করুন৷ যদি না করেন, মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আপনাদের (গবেষকদের) বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে।’
তবে, অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন শনিবার বলেন, ‘আমি কোনো হুমকি দেইনি৷ আমি বলেছি তিনি নিয়মনীতি মেনে গবেষণা করেননি৷ প্রকাশের ক্ষেত্রে নিয়ম মানেননি৷ আর সেজন্য আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছি৷ তাকে সাত দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট দিতে নিরাপদ খাদ্য অধিদপ্তর চিঠি দিয়েছে৷ তিনি দেননি৷ কাল (রবিবার) আবার তাঁকে চিঠি দেয়া হবে।’
এইসব দুধের মান যে ভালো তার কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারেননি কাজী ওয়াছি উদ্দিন৷ তারা কোনো পরীক্ষাও করে দেখেননি৷
তবে সচিব দাবি করেছেন, মন্ত্রণালয় ধেকে দুধ পরীক্ষার একটি উদ্যোগ নেয়া হয়েছে৷ কিন্তু কত দিনে তা হবে বলতে পারেননি৷ আর দ্বিতীয় দফা পরীক্ষার ফল নিয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চাননি৷
‘ডকুমেন্ট জমা দিতে বলার উনি কে?’
অধ্যাপক আ ব ম ফারুক বলেন, ‘আমাকে, আমার গবেষকদের এবং পরিবারের সদস্যদের এখনও নানাভাবে হুমকি দেয়া হচ্ছে, চাপ দেয়া হচ্ছে। বিএসটিআই ও সরকারি কর্মকর্তারা ব্যবসায়ীদের পক্ষে কাজ করছে৷ কালো টাকার মালিকরা আমার বিরুদ্ধে নেমেছে৷ কিন্তু বিএসটিআই ও সরকারের কাজতো ভোক্তাদের স্বার্থ দেখা৷ সেটা কেউ দেখছে না৷ আর আমার বিভাগের কিছু শিক্ষকও আমার বিরুদ্ধে লেগেছে যারা একসময় আমার ছাত্র ছিল৷ তাদের উদ্দেশ্যও আমার জানা আছে৷ সেগুলো প্রকাশ করতে চাই না।’
‘আমাকে ডকুমেন্ট জমা দিতে বলার তিনি কে? আমি কি মন্ত্রণালয়ের চাকরি করি? আদালত চাইলে দেব।’
বায়োমেডিক্যাল রিচার্স সেন্টারের পরিচালকের পদ থেকে স্বাভাবিক নিয়মে অধ্যাপক আ ব ম ফারুক পয়লা জুলাই থেকে অবসরে গেছেন৷ তবে নতুন পরিচালক যোগ না দেয়া পর্যন্ত তিনি কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।