জুমবাংলা ডেস্ক : রাজধানীর পাঁচতারকা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সাবেক এক কর্মীকে তুলে নিয়ে গিয়ে ১৪ ঘণ্টা আটকে রেখেছিল ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গত ২৮ আগস্ট এ ঘটনা ঘটে। চাকরিচ্যুত কর্মীদের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ায় এমনটি ঘটানো হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সাবেক ওই হোটেল কর্মীর নাম মো. নুরুজ্জামান। তিনি সেখানকার শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পরদিন চাকরিচ্যুতদের কর্মসূচি থাকায় রাতে ফোন করে কর্মসূচি বাতিলের জন্য চাপ দেওয়া হয়। তিনি তাতে রাজি হননি এবং ধরে নিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় ওই রাতে তিনি রাজধানীর মহাখালীতে পর্যটন করপোরেশনের হোটেল অবকাশে অবস্থান করেন। ভোরে তাঁকে তুলে নেয় ডিবি পুলিশ।
হোটেল অবকাশের একাধিক কর্মী জানান, ২৮ আগস্ট ভোর ৪টার পর ডিবি পুলিশের ১৩-১৪ সদস্যের একটি টিম হোটেলের অতিথি মো. নুরুজ্জামানকে তুলে নিয়ে যায়। সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ বা মামলার কথা উল্লেখ করেননি ডিবি কর্মকর্তারা। গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের স্বাক্ষরের আগের দিন এমন ঘটনা ঘটে।
নুরুজ্জামানকে যখন তুলে নিয়ে যাওয়া হয়, সে সময়ের ভিডিও ফুটেজ হাতে এসেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, হোটেল অবকাশের নিচতলায় অভ্যর্থনা কক্ষে প্রথমে তিনজন সাদা পোশাকের ডিবি সদস্য প্রবেশ করেন। কিছুক্ষণের মধ্যে একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ ১০ জন প্রবেশ করেন। হোটেলের একজন এবং দু’জন ডিবি সদস্য চার তলার পথে পা বাড়ান। কয়েক মিনিটের মধ্যে তারা নুরুজ্জামানকে সঙ্গে নিয়ে আসেন।
মো. নুরুজ্জামান বলেন, ২৭ আগস্ট সকালে রমনা থানায় নিজের নিরাপত্তা ঝুঁকির কথা জানিয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করি। সেদিন রাতে বাসায় যাচ্ছিলাম, রমনা থানার ওসি আমাকে ফোন করে বললেন, কাল আপনাদের কর্মসূচি আছে, সকালে সেখানে যাওয়ার আগে আমার সঙ্গে দেখা করে যাবেন। পরে বাসায় না গিয়ে আমি মহাখালীতে পর্যটন করপোরেশনের হোটেল অবকাশে যাই। একটি কক্ষ নিয়ে রাতে ঘুমিয়ে পড়ি।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে নুরুজ্জামান বলেন, ভোর ৪টার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এসেছেন জানিয়ে হোটেলের কর্মীরা আমাকে নিচতলায় যেতে বলেন। দরজা খুলে দেখি, ডিবির দু’জন সদস্যও হোটেল কর্মীদের সঙ্গে রয়েছেন। তারা বললেন, সঙ্গে যেতে হবে। একটি সাদা হায়েস মাইক্রোবাসে মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যায় আমাকে।
২৩ আগস্ট ‘ভারতীয় কর্মকর্তার স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। সেদিনই সকালে রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ঢাকার ইন্টারকন্টিনেন্টালে দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেন চাকরিচ্যুত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সেখানে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানান তারা। ২৫ আগস্ট হোটেলের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা। ফের ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েও সাড়া না পাওয়ায় ২৮ আগস্ট সকাল ১০টায় হোটেলের সামনে অবস্থান কর্মসূচি ছিল তাদের।
রাজধানীর ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর ও হাজারীবাগ এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখা আফসানা রহমানসহ কয়েকজন সেদিন সকাল থেকেই ভুক্তভোগীর স্ত্রীর সঙ্গে পুলিশের কাছে ধরনা দিতে থাকেন। আফসানা বলেন, সকাল ৯টার পর থেকে আমরা নিখোঁজ ব্যক্তির সন্ধানে সন্ধ্যা পর্যন্ত লেগে ছিলাম। বিকেল ৪টার দিকে ওসি ভুক্তভোগীর স্ত্রীকে বলেন, আন্দোলন করবে না– এই মর্মে মুচলেকা দিলে ছেড়ে দেওয়া হবে। পরে ওসি চিরকুটে একটি মোবাইল ফোন নম্বর লিখে দিয়ে ডিবি কার্যালয়ে গিয়ে ওই নম্বরে কথা বলতে বলেন। আমরা ডিবিতে গিয়ে বললেও তাঁকে ছাড়া হচ্ছিল না, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিন-চারজন শিক্ষার্থী আসেন এবং আমরা সেখানে চিৎকার করে নুরুজ্জামানকে ছেড়ে দেওয়ার কথা বলছিলাম। এক পর্যায়ে ফেসবুক লাইভে গেলে সন্ধ্যা ৬টার পর নুরুজ্জামানকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
সীমান্তে বিএসএফের কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের চেষ্টা, আটকে দিলো বিজিবি
মো. নুরুজ্জামানের স্ত্রী সুবাইয়া খাতুন বলেন, আমাকে জানানো হয়নি– আমার স্বামী কোথায় আছে। ছাত্ররা থানায় গিয়ে চাপ দিতে থাকলে বিকেল ৪টার দিকে জানায়, তাকে তারা আটক করে রেখেছে। আমাকে ওসি ধমক দিয়েছেন, দুর্ব্যবহার করেছেন। আমি এর বিচার চাই।
ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার উপকমিশনার (ডিসি-রমনা) শামীম হোসেন বলেন, এটা হোটেল কর্তৃপক্ষের মধ্যকার বিষয়; তারা বসে মিটমাট করে নিতে পারেন। তা না হলে আদালতে যেতে পারেন। আমরা তাঁকে পরামর্শ দিতে এখানে এনেছিলাম।
জানতে চাইলে গবেষক ও মানবাধিকার কর্মী রেজাউর রহমান লেনিন বলেন, ৫৪ ধারা অনুযায়ী যে কাউকে যে কোনো সময় আটক করতে পারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা আছে। সে অনুযায়ী পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে হবে। আমি আটকটিকে অবৈধ বলব। যে কোনো আদালতে এটি অবৈধ প্রমাণিত হতে বাধ্য। সূত্র : সমকাল
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।