লাইফস্টাইল ডেস্ক : হোমিওপ্যাথি একটি জনপ্রিয় বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি, যা অনেকেই বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার সমাধান হিসেবে ব্যবহার করেন। তবে প্রশ্ন হলো, হোমিওপ্যাথি কি আসলেই কাজ করে? এর কার্যকারিতা নিয়ে আধুনিক বিজ্ঞান কী বলে? আসুন সহজ ভাষায় এই বিষয়টি বিশ্লেষণ করি।
হোমিওপ্যাথির প্রতিষ্ঠাতা স্যামুয়েল হ্যানেম্যানের মতে, ‘সদৃশ সদৃশকে নিরাময় করে’। অর্থাৎ, যে পদার্থ কোনো স্বাস্থ্যবান মানুষের শরীরে নির্দিষ্ট লক্ষণ তৈরি করে, সেটি অত্যন্ত ক্ষুদ্র পরিমাণে অসুস্থ ব্যক্তির শরীরে দিলে সেই লক্ষণগুলো নিরাময় হতে পারে।
হোমিওপ্যাথির ওষুধগুলি মূলত অত্যন্ত পাতলা বা সংকুচিত করা হয়, যা মূল উপাদানের প্রায় খুব সামান্য উপস্থিতিও থাকে না।
বিজ্ঞানীরা হোমিওপ্যাথির কার্যকারিতা নিয়ে খুবই সংশয়ী। মূলত, হোমিওপ্যাথির ওষুধ তৈরির পদ্ধতিটি বিজ্ঞানের স্বীকৃত কোনো প্রক্রিয়ার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। হোমিওপ্যাথির ওষুধগুলি এতটাই পাতলা করা হয় যে, এতে মূল উপাদানের উপস্থিতি প্রায় থাকেই না।
এজন্য বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এতে শারীরিক কোনো সুফল পাওয়া সম্ভব নয়।
হোমিওপ্যাথির ক্ষেত্রেও অনেক সময় দেখা যায় রোগীরা আরোগ্য লাভ করছে বলে দাবি করেন। বিজ্ঞানীরা এর প্রধান কারণ হিসেবে প্লাসিবো ইফেক্ট এর কথা উল্লেখ করেছেন। প্লাসিবো ইফেক্ট তখন ঘটে যখন কোনো ওষুধ কার্যকরী না হলেও রোগী বিশ্বাস করে যে ওষুধ তাকে সুস্থ করছে, এবং সেই মানসিক বিশ্বাসের কারণে শারীরিক কিছু উন্নতি ঘটে।
অর্থাৎ, হোমিওপ্যাথির সুফল অনেক সময় মানসিক প্রশান্তি বা বিশ্বাসের কারণে হতে পারে, যদিও এতে শারীরিকভাবে কোনো উপকারী প্রভাব দেখা যায় না।
বিভিন্ন বড় আকারের গবেষণা এবং মেটা-অ্যানালাইসিসে দেখা গেছে, হোমিওপ্যাথি প্লাসিবো ওষুধের তুলনায় কার্যকর নয়। ২০০৫ সালে প্রকাশিত ল্যানসেট জার্নালের একটি মেটা-অ্যানালাইসিসে প্রমাণ পাওয়া গেছে যে, হোমিওপ্যাথিক ওষুধগুলির কার্যকারিতা প্লাসেবোর চেয়ে বেশি নয়। এছাড়াও, বিভিন্ন ক্লিনিকাল ট্রায়ালে হোমিওপ্যাথির কার্যকারিতা নিয়ে যে ফলাফল পাওয়া গেছে, তা খুবই সীমিত এবং অপ্রমাণিত।
অস্ট্রেলিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ সমীক্ষা প্রায় ১,৮০০ গবেষণার ফলাফল বিশ্লেষণ করে জানিয়েছে যে, কোনো নির্দিষ্ট স্বাস্থ্য সমস্যার জন্য হোমিওপ্যাথি কার্যকর প্রমাণিত হয়নি।
একইভাবে, যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (NHS) ২০১৭ সালে ঘোষণা করেছে, হোমিওপ্যাথির কার্যকারিতার প্রমাণ না থাকায় তারা এর জন্য আর ফান্ডিং করবে না।
যদিও হোমিওপ্যাথি কিছু ক্ষেত্রে সাধারণ রোগের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে গুরুতর বা জীবন-হুমকির রোগের ক্ষেত্রে এটি ব্যবহার করা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। কারণ, হোমিওপ্যাথির কার্যকারিতা প্রমাণিত নয় এবং এতে শারীরিক চিকিৎসার পরিবর্তে সময় নষ্ট হতে পারে। গুরুতর অসুস্থতার ক্ষেত্রে সঠিক বিজ্ঞানভিত্তিক চিকিৎসা নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
হোমিওপ্যাথির কার্যকারিতা নিয়ে এখনও আধুনিক বিজ্ঞানীর সন্দেহ রয়েছে। যদিও কিছু রোগী এতে মানসিক আরোগ্য লাভের কথা বলে থাকেন, বিজ্ঞানের মতে এটি মূলত প্লাসেবো ইফেক্টের কারণে হতে পারে। তাই হোমিওপ্যাথির ওপর সম্পূর্ণ নির্ভর না করে, সঠিক ও বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা পদ্ধতির ওপর গুরুত্ব দেওয়া উচিত, বিশেষ করে গুরুতর অসুস্থতার ক্ষেত্রে।
সূত্র: ল্যানসেট ও স্মিথসোনিয়ান ম্যাগাজিন
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।