বিজ্ঞান ও প্রযক্তি ডেস্ক : বছর কয়েক আগের ঘটনা। একটি বেসরকারি প্রযুক্তি সংস্থার কর্মী হেমন্তকুমার গোস্বামীর কাছে একটা ফোন আসে। প্রথমে অটোমেটেড ভয়েসে তাঁকে একটি বার্তা দেওয়া হলো—তাঁর বাড়িতে যে ওয়াইফাই রাউটার ব্যবহার হচ্ছে, সেটিই নাকি হ্যাক করা হয়েছে। ফলে ওই রাউটারের মাধ্যমে যে সব ল্যাপটপ, কম্পিউটার, স্মার্টফোনে ইন্টারনেট সংযোগ যাচ্ছে, সেই সবক’টিই যে কোনও সময়ে হ্যাক করতে পারে প্রতারকরা। তার মধ্যে দিয়ে ম্যালওয়্যার ঢুকে সবক’টি গ্যাজেটেরই দখল করে নিতে পারে তারা।তাই অবিলম্বে রাউটারের সিকিওরিটি ফিচার আপডেট করতে হলে মোবাইলের ১ বাটন প্রেস করতে বলা হয় হেমন্তকে। সেই নম্বরে প্রেস করলে আবার কাস্টমার কেয়ার এগজ়িকিউটিভ বলে পরিচয় দিয়ে তাঁর সঙ্গে কথাবার্তা শুরু করে। কথায় কথায় জানার চেষ্টা করে তাঁর রাউটারের পাসওয়ার্ড। হেমন্ত নিজে প্রযুক্তি সংস্থার কর্মী হওয়ায় চট করে সে ফাঁদে পা দেননি। কিন্তু সাইবার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটাও প্রতারণার একটা বড় ফাঁদ। যে কারও ক্ষেত্রে এমনটা হতে পারে।
ঠিক কী ভাবে কাজ করে প্রতারণা চক্র?
সাইবার বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, হেমন্তের কাছে যে ফোনটা এসেছিল, সেটা ওয়াইফাই রাউটারের পাসওয়ার্ড হ্যাক করার একটা কৌশল। এখানে যদি ভয় পেয়ে ব্রডব্যান্ড গ্রাহক তাঁর ওয়াইফাই রাউটারের আইডি বা পাসওয়ার্ড দিয়ে দেন, তাহলে তা সহজেই হ্যাক করে ফেলতে পারে প্রতারকরা। আবার এটা ছাড়াও গ্রাহকেরই নানা গাফিলতির সুযোগ নিয়ে রাউটারের পাসওয়ার্ড বদলে দিতে পারে তারা। তবে হেমন্ত এই ফাঁদে পা দেননি, এটা যেমন ঠিক, তেমন এটাও বাস্তব যে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে রাউটার হ্যাক হয়ে যেতে পারে আমার-আপনার, মানে সাধারণ ব্রডব্যান্ড গ্রাহকদের ভুলচুকের জন্যই।
যাতে সরাসরি ব্রডব্যান্ড রাউটার হ্যাক করে একসঙ্গে অনেকগুলি গ্যাজেটের দখল নিতে পারে সাইবার অপরাধীরা। বিশেষজ্ঞদের ব্যাখ্যা, কোনও রাউটার সাধারণত প্রতারকদের শিকার হতে পারে যখন তার সফটওয়্যার নিয়মিত আপডেট করা হয় না অথবা পাসওয়ার্ড নিয়মিত বদল করা হয় না এমন ক্ষেত্রে। সেক্ষেত্রে প্রতারকরা সহজেই কোনও ব্যক্তি বা কোনও প্রতিষ্ঠানে ইন্টারনেট সংযোগের জন্য ব্যবহৃত ব্রডব্যান্ড রাউটার নিজেদের কব্জায় এনে ফেলতে পারে। ‘সাইবারস্কুপ’ নামে একটি সংস্থার সমীক্ষা অনুযায়ী, ব্রডব্যান্ড রাউটার ব্যবহারকারীদের মধ্যে অন্তত ৮৩ শতাংশ রাউটার নিয়মিত আপডেট করেন না।
এর ফল কী হতে পারে?
প্রথমেই যেটা বলা হলো, আপনার স্মার্টফোন, ল্যাপটপ বা কম্পিউটারের দখল নিতে পারে প্রতারকরা। তারপরের ক্ষতিটা মারাত্মক। পুলিশ ও সাইবার বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, অনেকে এই ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহার করে অফিসের রোজকার কাজ, ছেলেমেয়ের পড়াশোনা, শপিং, ব্যাঙ্কিং লেনদেনের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে থাকেন। ফলে রাউটার হ্যাক হয়ে গেলে এমন সব ক্ষেত্রেই অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড, এমনকী ব্যাঙ্কিং সংক্রান্ত তথ্য চুরি করে ফেলতে পারে প্রতারকরা।
তারপরে সেই তথ্য ব্যবহার করে গ্রাহকদের অ্যাকাউন্টে সিঁধ কাটতে পারে তারা। আবার সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড চুরি করে নিয়ে আপনাকে নানাভাবে ব্ল্যাকমেলিংয়ের সুযোগও খুঁজতে পারে। আবার এমনও হতে পারে যে, আপনার অফিস বা ব্যবসা সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ সব ডেটার দখল নিয়ে র্যানসমওয়্যার অ্যাটাক চালানো হলো।
এ থেকে তাহলে বাঁচার রাস্তা কী?সাইবার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সবার আগে দরকার আপনার রাউটারের সফটওয়্যার নিয়মিত আপডেট করা, কারণ, তার সঙ্গে সিকিওরিটি ফিচার্সও আপডেটেড হয়। সঙ্গে পাসওয়ার্ডও নিয়ম করে বদল করা দরকার। পাসওয়ার্ডের ক্ষেত্রে একটু জটিল পাসওয়ার্ড দেওয়া অভ্যাস করুন (যেমন ক্যাপিটাল ও স্মল লেটার, চিহ্ন, সংখ্যা মিলিয়ে)। ওয়াইফাই রাউটারের সুরক্ষার জন্য ফায়ারওয়াল প্রোটেকশন ও ওয়াইফাই এনক্রিপশন চালু করুন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।