স্পোর্টস ডেস্ক : মাঝে পেরিয়ে গেছে মাস দুয়েক। তবে বাবর আজমের ব্যাটে মরচে ধরেনি একটুও। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজ যেখানে শেষ করেছিলেন, ঠিক সেখান থেকেই যেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে শুরু করলেন তিনি। অবিশ্বাস্য ধারাবাহিকতায় পাক দলপতি উপহার দিলেন আরেকটি সেঞ্চুরি। ঝড়ো ইনিংসে শেষের কঠিন সমীকরণ মেলালেন খুশদিল শাহ। দারুণ জয়ে তিন ম্যাচ সিরিজে এগিয়ে গেল পাকিস্তান।
গতপরশু রাতে মুলতান ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ১৪ বছর পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ফেরার উপলক্ষ জয়ে রাঙাল পাকিস্তান। তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে বাবরের দল জিতল ৫ উইকেটে। বিফলে গেল শেই হোপের ১২৭ রানের দারুণ ইনিংস। এই ওপেনারের সেঞ্চুরি ও শামার ব্রুকসের ফিফটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৮ উইকেট হারিয়ে করে ৩০৫ রান। পাকিস্তান সেটি পেরিয়ে যায় ৪ বল বাকি থাকতে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডেতে এই প্রথম তিনশ রান তাড়া করে জিতল পাকিস্তান। ২০০৮ সালে আবু ধাবিতে ২৯৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জয় ছিল আগের রেকর্ড। আজ একই ভেন্যুতে হবে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে।
এই সংস্করণে টানা তৃতীয় সেঞ্চুরিতে ১০৭ বলে ৯ চারে ১০৩ রানের ইনিংস খেলেন বাবর। ম্যাচ সেরার পুরস্কারও জেতেন তিনি। তবে, মাত্র ২৩ বলে ৪ ছক্কা ও একটি চারে অপরাজিত ৪১ রানের ইনিংস খেলে জয় নিশ্চিত করা খুশদিলের হাতে পুরস্কারটি তুলে দেন পাকিস্তান অধিনায়ক। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে তার নাম ঘোষণা করলেন ধারাভাষ্যকার ও সঞ্চালক বাজিদ খান। বাবর এগিয়ে গেলেন। নিয়ম অনুযায়ী আগে তার ম্যাচের বলটিতে স্বাক্ষর করার কথা স্পন্সরদের জন্য। বাজিদ তা মনে করিয়ে দিলেন বাবরকে। কিন্তু পাকিস্তান অধিনায়ক সেদিকে না তাকিয়ে সোজা মাইক্রোফোনের সামনে গিয়ে বললেন, ‘আমার ম্যান অব দ্য ম্যাচটি আমি খুশদিলকে দিতে চাই…।’ এটুকু বলেই থেমে থাকলেন না। অপ্রস্তুত হয়ে পড়া খুশদিল শাহর দিকে তাকিয়ে বাবর বললেন, ‘আসো…!’ ব্যস, বদলে গেল ম্যান অব মাচ। এটা স্রেফ সৌজন্যতার বদল নয়, অফিসিয়ালিই ম্যাচ সেরার পুরস্কার নিলেন খুশদিল। জয়ে অবদান আছে ইমাম উল হক ও মোহাম্মদ রিজওয়ানেরও। ওপেনার ইমাম ৭১ বলে করেন ৬৫। ৬১ বলে ৫৯ রান করেন কিপার-ব্যাটসম্যান রিজওয়ান।
সিরিজটি মূলত গত ডিসেম্বরে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সে সময় টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলার পর ওয়েস্ট ইন্ডিজ শিবিরে ক রো না ছড়িয়ে পড়ায় স্থগিত হয়ে যায় ওয়ানডে সিরিজ। পরে পাকিস্তানে রাজনৈতিক অস্থিরতায় রাওয়ালপিন্ডি থেকে ম্যাচের ভেন্যু সরিয়ে নেওয়া হয় মুলতানে। এই মাঠে সবশেষ কোনো আন্তর্জাতিক ওয়ানডে হয়েছিল
২০০৮ সালের এপ্রিলে; পাকিস্তানের বিপক্ষে সেদিন হেরেছিল বাংলাদেশ।
ঐতিহাসিক এই প্রেক্ষাপটে বাবর নিজে অংশ হলেন ইতিহাসের, দৃষ্টান্ত দিলেন নেতৃত্বের, দলও পেল রেকর্ডরাঙা এক জয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৮ উইকেটে ৩০৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমেছিল পাকিস্তান। ৫ উইকেটের জয়ে শতক তুলে নেন বাবর (১০৩)। তার হাতেই ম্যাচসেরার পুরস্কার ওঠা খুব স্বাভাবিক। কিন্তু বাবরের ম্যাচসেরা অন্য কেউ। নিজের পুরস্কার তার হাতে তুলে দিতে কার্পণ্য করেননি পাকিস্তান অধিনায়ক। পাকিস্তান জয়ের জন্য ১২ বলে ২১ রানের সমীকরণে থাকতে ক্যারিবিয়ান পেসার রোমারিও শেফার্ডের করা ৪৯তম ওভারে ১৫ রান নেন খুশদিল শাহ ও মোহাম্মদ নওয়াজ। খুশদিল একাই নেন ১৪ রান। ২৩ বলে ৪১ রানে অপরাজিত থেকে পাকিস্তানের জয়ে দারুণ ভূমিকা রাখা খুশদিলের হাতে ম্যাচসেরার পুরস্কার তুলে দেওয়ার পর বাবর বলেছেন, ‘অসাধারণ ব্যাটিংয়ের জন্য পুরস্কারটা তাকে দিতে চাই। রান তাড়ার পরিকল্পনায় আমাদের লক্ষ্যটা ছিল পরিষ্কার।’
পরিকল্পনার ছাপটা বাবরের ব্যাটিং দেখেই বোঝা গেছে। ৫৯ বলে অর্ধশতক তুলে নেওয়ার পথে বিপজ্জনক শট খেলেননি। পরের অর্ধশতক পেতে লেগেছে ৪৪ বল- চিকিৎসকেরা ‘সার্জিক্যাল নাইফ’ হাতে যেমন দক্ষ, ব্যাট হাতে বাবরও যেন তাই! ইতিহাসের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে দ্বিতীয়বারের মতো টানা তিন ওয়ানডেতে শতকের নজির গড়লেন বাবর।
ওয়ানডেতে টানা চার ইনিংসে শতকের রেকর্ড আছে, ২০১৫ বিশ্বকাপে গড়েছিলেন কুমার সাঙ্গাকারা। কিন্তু একাধিকবার টানা তিন ওয়ানডেতে শতক? বাবর ছাড়া আর কারও নেই। মুলতানে প্রথম ওয়ানডে শেষে পাকিস্তান অধিনায়ক বলেছেন, ‘নিজের খেলা ও শক্তির জায়গা নিয়ে কাজ করে যেতে চাই। আমরা ম্যাচটা যত দূর সম্ভব টানতে চেয়েছি, উইকেটও বেশ কঠিন ছিল। গরমের মধ্যেও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলাররা ভালো বল করেছে। যেকোনো সিরিজেই তো প্রস্তুতি থাকে, আমাদেরও গরম নিয়ে প্রস্তুতি ছিল। আমরা তো এর চেয়েও কঠিন কন্ডিশনে খেলেছি।’ ৪ বল হাতে রেখে পাকিস্তানের এই জয়ের পেছনের কারণটা বাবর বোঝালেন এভাবে, ‘ক্রিকেট তো পাল্টেছে। আমাদের পরিকল্পনা করে সব সময় সক্রিয় থাকতে হবে। পরিকল্পনা ছিল এবং তা সফলভাবে বাস্তবায়নও করা হয়েছে।’
২০১৬ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে এই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেই টানা তিন ওয়ানডেতে শতক তুলে নেন বাবর। এবার টানা তিন ওয়ানডেতে শতকের পথে বাবর প্রথম দুটি পান গত এপ্রিলে ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজে।
পাকিস্তানের হয়ে ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ শতকের রেকর্ড গড়তে আরও চার ইনিংসে তিন অঙ্কের ঘরে পৌঁছাতে হবে বাবরকে। ২০ শতক নিয়ে সবার ওপরে থাকা সাঈদ আনোয়ারের পরই বাবর (১৭)। কাল আরও একটি কীর্তি গড়েন বাবর। পাকিস্তানের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে পাঁচ ইনিংসের মধ্যে চার ইনিংসেই শতকের দেখা পেলেন। গত বছর বার্মিংহামে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৫৮ রানের ইনিংস খেলার পর লাহোরে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলেন ৫৭ রানের ইনিংস। এরপর শতক পেলেন টানা তিন ইনিংসেই।
পাকিস্তানের হয়ে টানা তিন ওয়ানডেতে বাবরের আগে শতক পেয়েছেন শুধু সাঈদ আনোয়ার ও জহির আব্বাস। আরও সাত ক্রিকেটার শতক পেয়েছেন টানা তিন ওয়ানডেতে- হার্শেল গিবস, এবি ডি ভিলিয়ার্স, কুইন্টন ডি কক, রস টেলর, জনি বেয়ারস্টো, বিরাট কোহলি ও রোহিত শর্মা। মোট ১১ ব্যাটসম্যান এই নজির গড়লেও শুধু বাবরই একাধিকবার তা করে দেখালেন। তালিকায় যেহেতু কোহলি আছেন, তাই কাল বাবরের গড়া আরেকটি নজির জানানো যায়। ওয়ানডেতে অধিনায়ক হিসেবে দ্রুততম ১০০০ রান করার পথে কোহলির রেকর্ড ভেঙেছেন বাবর। এর আগে ১৭ ইনিংসে রেকর্ডটি গড়া কোহলিকে পেছনে ফেলতে ১৩ ইনিংস লাগল বাবরের।
ছবিতে প্রথমেই কী দেখলেন আপনি?, উত্তরই বলে দেবে আপনার ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।