জুমবাংলা ডেস্ক : সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলোতে ব্যবসায়ীদের অংশগ্রহণ বেড়েই চলেছে। আগামী বুধবার থেকে শুরু হতে যাওয়া স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও এই চিত্র দেখা যাচ্ছে।
প্রথম দফার এই উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রার্থীদের দশ বছরের সম্পদের বিশ্লেষণ করে দুর্নীতি বিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ বা টিআইবি বলছে, এবারের নির্বাচনে কোনো প্রার্থীর আয় ১৮ হাজার গুণ পর্যন্তও বেড়েছে।
দশ বছরের ব্যবধানে সবচেয়ে বেশি সম্পদ বেড়েছে গাজীপুরের কাপাসিয়ার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী রওশন আরা সরকারের। দশ বছরে তার আয় বেড়েছে ১৮ হাজার ২৩৩ গুণ।
টিআইবি বলছে, এবার উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রার্থীদের প্রায় ৭০ শতাংশই ব্যবসায়ী। আর গত উপজেলা নির্বাচনের চেয়ে এবার কোটিপতি প্রার্থী বেড়েছে প্রায় ৩ গুণ।
গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কোটিপতি প্রার্থী ছিলেন ৩৭ জন, এবার তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৪ জনে।
সারাদেশের ৪৯৫ উপজেলার মধ্যে প্রথম ধাপে আগামী ৮ মে ভোট অনুষ্ঠিত হবে ১৫২ উপজেলায়।
টিআইবির রিপোর্টে বলা হয়েছে, হলফনামায় অনেকের অবিশ্বাস্য ও গগনচুম্বী হারে আয় ও সম্পদ বেড়েছে। আবার অনেকে সম্পদ দেখিয়েছে প্রায় শূন্যের কাছাকাছি। এ বিষয়গুলো অনেকটাই প্রশ্নবিদ্ধ।
সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বিবিসি বাংলাকে বলেন, মানুষের বহুগুণ সম্পদ বেড়েছে কিন্তু নির্বাচন কমিশন, রাজস্ব বোর্ড, দুদক দেখছে না এগুলো বৈধ আয়ের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কি না। তাহলে হলফনামায় এই তথ্য দিয়ে কী লাভ?”
যদিও প্রার্থীদের এই আয় ও সম্পদ অর্জনকে বেশ স্বাভাবিক মনে করছে আওয়ামী লীগ। দলটি বলছে, দেশ এগিয়েছে তাই বেড়েছে সম্পদ আর আয়।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম বিবিসি বাংলাকে বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির একটা পরিবর্তন হয়েছে। বাজেটের আকার বেড়েছে বলেই প্রার্থীদের ব্যক্তিগত কিংবা কোম্পানির আয় বেশি দেখা যাচ্ছে।”
১৪৪টি উপজেলায় প্রার্থীদের নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামা বিশ্লেষণ করে সোমবার প্রতিবেদন প্রকাশ করে টিআইবি।
এতে বলা হয়েছে, প্রথম দফায় ১৪৪টি উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থীদের মধ্যে শতকরা ৬৯.৮৬ শতাংশই ব্যবসায়ী। বাকিদের মধ্যে ১১ দশমিক ১৯ শতাংশ পেশা হিসেবে দেখিয়েছে কৃষিকাজকে। এছাড়া ৬ দশমিক ৩২ শতাংশ আইনজীবী আর ৪ দশমিক ১৫ শতাংশ রয়েছেন শিক্ষক।
টিআইবি প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ২০১৯ সালের উপজেলা নির্বাচনে একই উপজেলায় ৫৩ শতাংশ প্রার্থী ব্যবসায়ী ছিলেন। তার আগে ২০১৪ সালে একই উপজেলায় ৪৮ শতাংশ প্রার্থী ছিলেন ব্যবসায়ী।
প্রথম ধাপের নির্বাচনে তিনটি পদের মধ্যে উপজেলায় চেয়ারম্যান পদের প্রার্থীদের শতকরা ৭০ শতাংশ, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৬৯ শতাংশ এবং সংরক্ষিত নারী ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীদের ২৪ শতাংশই ব্যবসায়ী।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বিবিসি বাংলাকে বলেন, “নির্বাচন নামক মৌলিক গণতান্ত্রিক চর্চা কিন্তু ব্যাপকভাবে ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে এখন। এটাই আমাদের উদ্বেগের জায়গা।”
তবে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মনে করছে নির্বাচনে প্রার্থীদের বড় একটা অংশ ব্যবসায়ী মানে এই নয় যে, রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ ব্যবসায়ীদের হাতে।
দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাসিম বিবিসি বাংলাকে বলেন, এই চিত্র দেখেই বলা যাবে না ব্যবসায়ীরা রাজনীতিতে আগ্রহী বা ব্যবসায়ীরা নেতৃত্ব দিচ্ছে। প্রার্থী হিসেবে তারা নির্বাচন করছে। বাস্তবতা হলো রাজনীতি শেষ পর্যন্ত রাজনীতিবিদদের কাছেই থাকবে, ব্যবসায়ীদের কাছে না।
৯৪ জন কোটিপতি প্রার্থী
চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে ১১৭ জন কোটিপতি। যেখানে ৫৬০ চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে ৯৪ জন কোটিপতি। এছাড়া ৬১১ ভাইস চেয়ারম্যানের মধ্যে ১৭ জন ও ৪৩৫ মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের মধ্যে ৬ কোটিপতি প্রার্থী এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কোটিপতি প্রার্থী ছিলেন ৩৭ জন। গত নির্বাচনের সঙ্গে তুলনায় এ সংখ্যা বেড়েছে প্রায় তিন গুণ।
প্রার্থীদের মধ্যে অস্থাবর সম্পদের তালিকার শীর্ষে আছেন গোপালগঞ্জ সদরের চেয়ারম্যান প্রার্থী কামরুজ্জামান ভূঁইয়া, তার মোট অস্থাবর সম্পদ ২৫ কোটি ২৪ লাখ টাকা।
তালিকার দুই নম্বরে আছেন রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার আনোয়ারুল ইসলাম, তার সম্পদ ২০ কোটি ৩০ লাখ টাকা। তৃতীয় অবস্থানে আছেন আতাহার ইশরাক শাবাব চৌধুরী, তার অস্থাবর সম্পদ মূল্য প্রায় ১৯ কোটি টাকা।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বিবিসি বাংলাকে বলেন, “নির্বাচনে প্রার্থীদের অনেকেরই হলফনামার তথ্য নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে। তারপরও যতটুকু আয় দেখিয়েছে তাতে দৃশ্যত আয় অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে দেখা গেছে। সরকারের কোনো প্রতিষ্ঠান এটা যাচাই বাছাই না করায় এই আয় বেড়েই চলছে।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এক সময় স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে স্থানীয় জনসেবকরা অংশ নিতো। তখন প্রচারণার ধরনও ছিল আলাদা। এখন টাকার কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে প্রার্থী ও ভোটাররা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমেদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, “নির্বাচন মানেই এখন টাকার খেলা। যার টাকা আছে সে ভোট করছে। যার টাকা নাই সে ভোট করছে না।”
এই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রার্থীদের দশ বছরের সম্পদের তথ্য উপাত্ত তুলে ধরে টিআইবি বলছে, এবারের নির্বাচনে প্রার্থীদের কারও সম্পদ ১৮ হাজার গুণও বেড়েছে।
২০১৪ সাল, ২০১৯ সাল ও চলতি বছরের উপজেলা নির্বাচনের তথ্য বিশ্লেষণ করে টিআইবি বলছে, দশ বছরের ব্যবধানে সবচেয়ে বেশি সম্পদ বেড়েছে গাজীপুরের কাপাসিয়ার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী রওশন আরা সরকারের। দশ বছরে তার সম্পদ বেড়েছে ১৮ হাজার ২৩৩ গুণ।
এরপরই রয়েছে গাজীপুর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান রীনা পারভীন। দশ বছরে তার সম্পদ বেড়েছে ১০ হাজার ৭৪ গুণ।
আর মাত্র ৫ বছরের ব্যবধানে যাদের সম্পদ বহুগুণ বেড়েছে তাদের মধ্যে সবার ওপরে খাগড়াছড়ির রামগড়ের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী বিশ্ব প্রদীপ কুমার কারবারী।
২০১৯ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তুলনায় তার সম্পদ বেড়েছে ৩ হাজার ৩১৯ শতাংশ। এরপরই রয়েছেন ময়মনসিংহ ধোবাউড়া উপজেলার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা খাতুন। তার সম্পদ বেড়েছে ২ হাজার ১৫০ শতাংশ।
স্থানীয় নির্বাচনের হলফনামা বিশ্লেষণে প্রাপ্ত ফলাফলকে বিস্ময়কর উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বিবিসি বাংলাকে, এসব প্রার্থীদের মধ্যে যারা একই পদে ছিলেন তাদের সকলের ক্ষেত্রেই আমরা দেখেছি তাদের অনেকেরই আয় দৃশ্যত অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে।-বিবিসি বাংলা
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।