জুমবাংলা ডেস্ক : পরিবারের পেট চালাতে টানতে হয় তেলের ঘানি। তবে অন্যরা গরু দিয়ে ঘানি টানালেও তাদের নেই সেই সম্বল। তাই পেট চালাতে ১০ বছর ধরে গরুর পরিবর্তে পেটের সঙ্গে ঘানির বাঁশ লাগিয়ে চক্রাকারে ঘুরছেন আব্দুল খালেক দম্পতি। তাদের সঙ্গে সাহায্য করেন মেয়ে। তারা সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার কুনকুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা।
কাঠের তৈরি কাতলার ওপর প্রায় ২০০ কেজির পাথর বসিয়ে ঘাড়ে জোয়াল বেঁধে এই ঘানি টানেন তারা। প্রতিদিন একটানা আট ঘণ্টা করে এমনভাবে পরিশ্রম করেন এই দম্পতি। এর বিনিময়ে ১০ কেজি সরিষা থেকে বের হয় তিন কেজি তেল। স্থানীয় হাটে এই তেল বিক্রি করতে পারলেই চলে সংসারের চাকা।
নিজের তিন ছেলে সংসার পেতে আগেই আলাদা হয়ে গেছেন। তাই প্রতিদিন ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত এভাবেই জীবন সংগ্রাম চালান হতদরিদ্র আব্দুল খালেক প্রামাণিক ও রাহালা দম্পতি। তাদের সঙ্গে সহযোগিতা করেন মেয়ে।
জমি বলতে তাদের ওই বাড়ির ভিটেটুকুই। বংশ পরস্পরায় তারা এই পেশায়। তবে এক সময় ছিল গরু। যা দিয়েই টানা হতো ঘানি। ১০ বছর আগে আব্দুল খালেক অসুস্থ হয়ে পড়েন। চিকিৎসার জন্য বিক্রি করে দেন ঘানি টানা গরু। এরপর আর সামর্থ্য হয়নি গরু কেনার। সেই থেকে বাবা-মায়ের সঙ্গে ঘানি টানায় সহযোগিতা করে আসছেন মেয়ে।
আব্দুল খালেক বলেন, ‘স্থানীয় রতনকান্দি হাট থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে সরিষা কিনে আনি। এরপর ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত ঘানি টেনে তেল বের করি। হাটে ৩০০ টাকা কেজি দরে এই তেল বিক্রি করে চাল কিনে আনি। তারপর পেটে ভাত যায়। প্রতিদিন এভাবেই আমাদের সংসার চলে। ঘানি টেনে যে তেল পাই তা বিক্রি করে তিন বেলা খাবার ও ওষুধ জোটানো কঠিন।’
তিনি আরো বলেন, ‘শরীরে নানা অসুখ বাসা বেঁধেছে। দুই তিন মিনিট জোয়াল টানলেই হাঁফসে যাই। কেউ যদি একটা গরু কিনে দিয়ে সহযোগিতা করতো তাহলে এই শেষ বয়সে আর এতো কষ্ট করতে হতো না। বুড়ো-বুড়ি অনেক সুখে থাকতাম।’
কাজিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদ হাসান সিদ্দিকী বলেন, বিষয়টা খুবই অমানবিক। আপনার মাধ্যমেই জানলাম। সরেজমিন দেখে তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।