জুমবাংলা ডেস্ক: ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারীতে শাহিন ফকির (২৬) নামে এক যুবক শিকলে বাঁধা অবস্থায় জীবনযাপন করছেন। মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে বিনা চিকিৎসায় ধুঁকে ধুঁকে কষ্ট আর যন্ত্রণায় অমানবিকভাবে কাটছে তার জীবন।
বোয়ালমারী উপজেলার রুপাপাত ইউনিয়নের কলিমাঝি গ্রামের আমিন ফকিরের দুই ছেলে ও পাঁচ মেয়ের মধ্যে মানসিক ভারসাম্যহীন শাহিন বড়।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গত ১০ বছর ধরে শিকলে বন্দি হয়ে আছেন শাহিন ফকির। আর বন্দি অবস্থায় থাকতে থাকতে দিন দিন তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ছোটবেলায় এক দুর্ঘটনায় রেললাইনে পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পান শাহিন। পরে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা করা হয়। এরপর পাবনার একটি মাদ্রাসায় আরবি পড়তে গিয়ে সেখান থেকে ১৫ পারা কোরআনে হাফেজ পাসের পর হঠাৎ তার শারীরিক অসুস্থতা দেখা দেয়। এরপর তিনি ১১ বছর আগে বাড়িতে ফিরে আসেন।
শাহিনের মা সাজেদা বেগম বলেন, বড় আশা নিয়ে ছেলেকে মাদ্রাসায় ভর্তি করেছিলাম সে বড় একজন আলেম হবে। কিন্তু বিধাতার নির্মম পরিহাস তাকে আজ আমরা ঘরের বারান্দায় শিকলে বেঁধে রেখেছি। তাকে ছেড়ে দিলে সে বাড়ির সবাইকে মারধর করে। বাড়িঘর ভাঙচুর করে। আগে শরীরে জামা কাপড় রাখলেও এখন রাখতে চায় না। বোয়ালমারী থানার বিভিন্ন জায়গা থেকে ফকিরের তেল পড়া, পানি পড়া, যে যেখান থেকে যা যা বলেছে ছেলের আরোগ্য লাভের জন্য তাই করা হয়েছে। তার চিকিৎসা করতে গিয়ে আমরা সব সহায় সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব। থাকার এই জায়গায়টুকু ছাড়া আমাদের আর কিছুই নেই।
দুঃখে কষ্টে থাকা মানসিক ভারসাম্যহীন শেকলে বাঁধা শাহিনের মা আরও, ‘আল্লাহ এই কোরআনের পাখিকে নিয়ে গেলে কাইন্দে কাইটে মাটি দিয়ে থুইতাম। আল্লাহ তায়ালার কাছে বলতাম হে প্রভু আমি গরীব মানুষ আমার সংসারের বড় ছেলের কী অপরাধ ছিল? কেন তুমি আমাদের এত কষ্ট দিচ্ছ ?’
শাহিনের বাবা আমিন ফকির বলেন, আমি একজন দিনমজুর। এখন বয়স হয়েছে। কাজকর্ম করতে পারি না। আমার সহায়-সম্বল ৩০ শতাংশ জায়গা বিক্রি করে ছেলের চিকিৎসা করেছি। এখন আর কিছু নাই। তাই বিনা চিকিৎসায় শেকল দিয়ে বেঁধে ফেলে রেখেছি। আর কিছুই করার নাই। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে একটি প্রতিবন্ধী ভাতা পাই। এছাড়া কারো কোনো সাহায্য পাই নাই।
এ সময় তিনি সমাজের বিত্তবান, প্রশাসনসহ সকলের সাহায্য কামনা করেন।
স্থানীয় বাসিন্দা ও সমাজকর্মী সৈয়দ তারেক মো. আব্দুল্লাহ জানান, মানসিক ভারসাম্যহীন শাহিন ও তার পরিবারের বর্তমান অবস্থা সত্যিই খুবই খারাপ। অমানবিক জীবন যাপন করছে শাহিন। পরিবারটির পাশে স্থানীয় প্রশাসন ও বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
এ ব্যাপারে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা প্রকাশ কুমার বিশ্বাস বলেন, শাহিন ও তার পরিবারের খোঁজ খবর নিয়ে অবশ্যই সাহায্য সহযোগিতা ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ প্রসঙ্গে বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঝোটন চন্দ্র বলেন, তথ্য পেলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।