সম্প্রতি ১১৯ ও ১২০তম মৌল আবিষ্কারে আরও একধাপ এগিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। কিছুদিন আগে তাঁরা প্লুটোনিয়াম-২৪৪ আইসোটোপে চার্জিত টাইটেনিয়াম পরমাণু দিয়ে আঘাত করেন। এতে তৈরি হয় পর্যায় সারণির অন্যতম ভারী মৌল লিভারমোরিয়াম। এর পারমাণবিক সংখ্যা ১১৬। আর এতেই দুটি নতুন মৌল খুঁজে পাওয়ার আশা দেখছেন বিজ্ঞানীরা। পর্যায় সারণিতে এই মৌল দুটির জায়গা হবে ১১৯ ও ১২০ নম্বর ঘরে।
গত ২১ অক্টোবর এ গবেষণার কথা প্রকাশিত হয়েছে ফিজিক্যাল রিভিউ লেটার জার্নালে। যুক্তরাষ্ট্রের লরেন্স বার্কলি ন্যাশনাল ল্যাবরেটরির একদল বিজ্ঞানী গবেষণাটি করেছেন। বর্তমানে পর্যায় সারণিতে মৌলের সংখ্যা ১১৮। সবার শুরুতে আছে হাইড্রোজেন। এর পারমাণবিক সংখ্যা ১। অর্থাৎ এতে প্রোটন আছে একটি। আর এখন পর্যন্ত পর্যায় সারণির সর্বশেষ মৌল অগানেসনের পারমাণবিক সংখ্যা ১১৮। এই মৌলের নিউক্লিয়াসে ১১৮টি প্রোটন ও ১৭৬টি নিউট্রন মিলে মোট ২৯৪টি কণা আছে। ২০১৬ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে মৌলটির নামকরণ করা হয়েছে অগানেসন (Og)।
এই ১১৮টি মৌলের মাত্র ৯২টি প্রকৃতিতে পাওয়া যায়। বাকিগুলো তৈরি করা হয়েছে গবেষণাগারে। তবে এগুলোকে সরাসরি কৃত্রিম বলার সুযোগ নেই। মহাবিশ্বের কোথাও না কোথাও এ মৌলগুলো থাকতে পারে। মৌলের নিউক্লিয়াসে প্রোটন সংখ্যা বৃদ্ধির মাধ্যমে এসব নতুন মৌল তৈরি করা হয়। এতে বদলে যায় পরমাণুর মৌলিক ধর্ম।
গবেষকদের মতে, তাত্ত্বিকভাবে মহাবিশ্বে আরও ভারী উপাদান বা মৌল থাকা উচিত। এমনকি ভারী মৌলগুলো দেখতে কেমন বা এদের গঠন-প্রকৃতি কেমন হতে পারে, তা নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণীও শোনা যায়। এসব মৌলের দেখা পেতে চাইলে হয় মহাকাশে খুঁজতে হবে অথবা পৃথিবীতে গবেষণাগারে তৈরি করতে হবে।
বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরেই গবেষণাগারে ভারী মৌল তৈরি করে আসছেন। ১১৯ ও ১২০তম মৌল নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করছেন অনেক বিজ্ঞানী। প্রাথমিকভাবে এই মৌল দুটির নাম দেওয়া হয়েছে ইউনুনিয়াম এবং আনবিনিলিয়াম। এ মৌল মৌল দুটি আবিষ্কৃত হলে এদের জন্য পর্যায় সারণিতে অষ্টম সারি যোগ করতে হবে।
বিজ্ঞানীদের মতে, প্লুটোনিয়াম-২৪৪ আইসোটপ থেকে লিভারমোরিয়াম তৈরির কৌশল কাজে লাগিয়ে নতুন পরমাণু তৈরি করা সম্ভব হতে পারে। এ জন্য ক্যালিফোর্নিয়াম আইসোটোপ ব্যবহার করার কথা ভাবছেন তাঁরা। লরেন্স বার্কলি ন্যাশনাল ল্যাবটরির পরমাণুবিজ্ঞানী জ্যাকলিন গেটস বলেন, ‘এ ধরনের কৌশল আগে দেখা যায়নি। ১২০তম মৌল তৈরির জন্য কৌশলটি প্রমাণের দরকার ছিল।’
নতুন এ গবেষণায় বার্কলি ল্যাবের বিজ্ঞানীরা ৮৮ ইঞ্চি সাইক্লোট্রন মেশিনের মধ্যে প্লুটোনিয়াম-২৪৪ আইসোটোপকে টাইটেনিয়াম আয়নের সাহায্যে ক্রমাগত আঘাত করেন। টানা ২২ দিন এ প্রক্রিয়া চলার পর বিজ্ঞানীরা দুটি লিভারমোরিয়ামের পরমাণু তৈরি করতে সক্ষম হন।
তবে ১২০তম মৌল তৈরি করতে এর চেয়ে অনেক বেশি সময় প্রয়োজন। বার্কলি ল্যাবের আরেক পরমাণুবিজ্ঞানী রেইনার ক্রুকেনের বলেন, ‘১১৬তম মৌলের পরমাণু তৈরি করতে যে সময় লেগেছে, ১২০তম মৌল তৈরি করতে তার চেয়ে অন্তত ১০ গুণ বেশি সময় লাগবে। কাজটি সহজ নয়, তবে এখন সম্ভব বলে মনে হচ্ছে।’
সাধারণত অতি ভারী মৌলগুলো খুব দ্রুত ভেঙে বা ক্ষয়ে যায়। তবে ১২০তম মৌলটি গঠনগত কারণে স্থীতিশীল হওয়ার কথা। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এটি বর্তমান অতি ভারী মৌলগুলোর চেয়ে বেশি সময় অক্ষত থাকবে। ফলে অতি ভারী মৌল গবেষণায় নতুন দুয়ার খুলে যেতে পারে। আসলেই এমনটা হবে কি না, তা এখনই জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না। তত্ত্বীয় হিসাবের সঙ্গে বাস্তবে পরমাণুর আচরণ নাও মিলতে পারে। তবে আশা বা আশঙ্কা যা-ই হোক, নিশ্চিত হওয়ার জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে ১২০তম মৌল আবিষ্কার হওয়া পর্যন্ত।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।