১২ তাকবীরের ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম: একটি পরিচিতি
মুসলিম উম্মাহর জন্য ঈদ একটি পবিত্র ও আনন্দঘন উৎসব। ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দিন সকাল বেলা অনুষ্ঠিত ঈদের নামাজ এই উৎসবের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আমাদের সমাজে মূলত দুটি ধরণের ঈদের নামাজ প্রচলিত—একটি ৬ তাকবীরের, অপরটি ১২ তাকবীরের। এই নিবন্ধে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করব ১২ তাকবীরের ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম নিয়ে।
১২ তাকবীরের ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম কীভাবে প্রচলিত হলো?
১২ তাকবীরের ঈদের নামাজ মূলত হানাফি মাযহাব অনুসারীদের মধ্যে বিশেষভাবে প্রচলিত নয়। তবে কিছু সালাফি ও আহলেহাদীস ঘরানার মুসল্লিদের মাঝে এই নিয়মে নামাজ পড়ার চল রয়েছে। এই নিয়মে নামাজ পড়া হয় মোট ১২ বার অতিরিক্ত তাকবীর সহ, যা ঈদের খুশি ও আল্লাহর প্রশংসা প্রকাশের প্রতীক হিসেবে গণ্য করা হয়। ১২ তাকবীরের ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম বোঝার জন্য নামাজের ধাপগুলো বিস্তারিতভাবে জানা জরুরি।
Table of Contents
এই নিয়মে প্রথম রাকাআতে সূরা ফাতিহার আগে ৭ বার এবং দ্বিতীয় রাকাআতে রুকুতে যাওয়ার আগে ৫ বার অতিরিক্ত তাকবীর বলা হয়। প্রতিটি তাকবীরের সময় হাত কান পর্যন্ত তুলে ছেড়ে দেওয়া হয় এবং দুই তাকবীরের মাঝে ছোট বিরতি রাখা হয়।
১২ তাকবীরের ঈদের নামাজ পড়ার বিশদ নিয়মাবলি
নিচে ধাপে ধাপে ১২ তাকবীরের ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম তুলে ধরা হলো:
- নামাজ শুরু করার আগে নিয়ত করতে হবে ঈদের নামাজ পড়ার।
- ইমামের সাথে ‘তাকবীরে তাহরিমা’ দিয়ে নামাজ শুরু করতে হবে।
- এরপর প্রথম রাকাআতে সূরা ফাতিহার আগে আরও ৬টি তাকবীর দিতে হবে (মোট ৭টি)।
- প্রতিটি তাকবীরের সময় হাত কান পর্যন্ত উঠিয়ে ছেড়ে দিতে হবে এবং দুই তাকবীরের মাঝে বিরতি রাখা উত্তম।
- তারপর সূরা ফাতিহা ও অন্য একটি সূরা মিলিয়ে রুকু ও সিজদা আদায় করতে হবে।
- দ্বিতীয় রাকাআতে উঠে সূরা ফাতিহা ও অন্য একটি সূরা পাঠ করতে হবে।
- তারপর রুকুতে যাওয়ার আগে ৫টি অতিরিক্ত তাকবীর দিতে হবে।
- পুনরায় রুকু, সিজদা ও তাশাহহুদ শেষে সালাম ফিরাতে হবে।
এই প্রক্রিয়ায় মোট ১২ বার অতিরিক্ত তাকবীর বলা হয়—৭টি প্রথম রাকাআতে এবং ৫টি দ্বিতীয় রাকাআতে।
১২ তাকবীরের ঈদের নামাজ এবং অন্যান্য মতপার্থক্য
অনেক মুসল্লি প্রশ্ন করে থাকেন, কোন নিয়মে নামাজ পড়া উত্তম? হানাফি, মালিকি, শাফেয়ি ও হাম্বলি মাযহাবে তাকবীরের সংখ্যা ভিন্ন ভিন্ন। হানাফি মাযহাবে ৬ তাকবীর প্রচলিত যেখানে দুই রাকাআতে ৩+৩ তাকবীর দেওয়া হয়। তবে ১২ তাকবীরের ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম মাযহাবভিত্তিক না হলেও কিছু মুসলিম সমাজে এটি গ্রহণযোগ্যতার সাথে পালন করা হয়।
মূলত ঈদের নামাজ একটি সুন্নত মুআক্কাদা নামাজ, এবং বিভিন্ন সাহাবা ও তাবেয়ীনদের আমল অনুযায়ী বিভিন্ন রেওয়ায়েত পাওয়া যায়। তাই মতপার্থক্য থাকলেও সবাই ঈদের আনন্দ ও আল্লাহর প্রশংসায় একমত।
ঈদের খুতবা ও দোয়ার গুরুত্ব
ঈদের নামাজের পর খুতবা প্রদান করা হয়। খুতবা শোনা সুন্নত এবং এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। খুতবায় সাধারণত ঈদের তাৎপর্য, তাকওয়া, ইসলামের মৌলনীতি ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করা হয়। খুতবার পরে মুসল্লিগণ একে অপরকে ঈদের শুভেচ্ছা জানায় এবং দোয়া করে।
১২ তাকবীরের ঈদের নামাজের ফজিলত
যদিও এই নিয়ম সকলের মধ্যে প্রচলিত নয়, তবুও যারা এই নিয়মে নামাজ আদায় করেন, তারা বিশ্বাস করেন এটি ঈদের আনন্দ ও তাকবীরের মাহাত্ম্য আরও বাড়িয়ে দেয়। ১২ তাকবীরের ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম অনুসরণ করে ঈদের নামাজ আদায় করলে একজন মুসল্লি আল্লাহর প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশের একটি বিশেষ রূপ পালন করেন।
সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQs)
- ১২ তাকবীরের ঈদের নামাজ কি সকলের জন্য বাধ্যতামূলক?
না, এটি একটি বিকল্প নিয়ম। হানাফি মাযহাবে প্রচলিত নয়। - কীভাবে বুঝব কোন নিয়মে নামাজ পড়ব?
আপনার মসজিদের ইমাম কোন নিয়মে নামাজ পড়াচ্ছেন তা অনুসরণ করাই উত্তম। - ঈদের নামাজে ভুল হলে কী করব?
ভুল হলে সালাতের শেষে সাহু সিজদা আদায় করলেই চলবে না, বরং ঈদের নামাজে ভুল হলে তা পুনরায় আদায় করতে হয়। - ১২ তাকবীরের সময় হাত তুলতে হয় কি?
হ্যাঁ, প্রতিটি তাকবীরের সময় হাত কান পর্যন্ত তুলে ছেড়ে দিতে হয়।
ঈদ আমাদের ধর্মীয় জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। একে ঘিরে যে নামাজ আদায় করা হয় তা মুসলিম ঐক্য, আনন্দ ও আল্লাহর প্রশংসার প্রতীক। ১২ তাকবীরের ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম একটি ভিন্ন রীতি হলেও এটি আল্লাহর প্রশংসা ও তাকওয়ার অনুশীলনের একটি চমৎকার উপায়। সবার উচিত ঐক্য ও সহানুভূতির সঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় করা এবং ধর্মীয় রীতিকে সম্মান জানানো।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।