জুমবাংলা ডেস্ক : চলতি উৎপাদন মৌসুমে বৈরী আবহাওয়ার সাথে পাল্লা দিয়ে লবণ উৎপাদনে নতুন রেকর্ড গড়ে তুলছেন উপকূলের চাষিরা। মাত্র ১২ দিনের (৯ এপ্রিল থেকে ২০ এপ্রিল বজ্রসহ ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত) ব্যবধানে চার লাখ আট হাজার ৩২৬ মেট্রিক টন অপরিশোধিত (ক্রুড) লবণ উৎপাদনের হয়েছে বলে নিশ্চিত করলেন বিসিকের লবণ প্রকল্পের জিএম জাফর ইকবাল ভূঁইয়া। এ নিয়ে চলতি মৌসুমে (২০২২-২০২৩) সর্বমোট ২০ এপ্রিল পর্যন্ত ১৮ লাখ ১ হাজার ৭৩৭ মেট্রিকটন লবণ উৎপাদন হয়েছে যা দেশে লবণ উৎপাদনের সর্বোচ্চ রেকর্ড। যদিও বজ্রসহ ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে ২১ এপ্রিল থেকে উপকূলে লবণ উৎপাদন সাময়িক ভাবে বন্ধ রয়েছে।
বিসিক কর্মকর্তাদের পরিশ্রম, সরকরের নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণের কারণে মাঠে উৎপাদিত লবণের পাইকারি বাজার মূল্য সন্তোষজন হওয়ায় চলতি মৌসুমে চাষিদের মাঝে লবণ উৎপাদনে উৎসাহ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণেই মূলত এবার লবণ উৎপাদনে আগাম মাঠে নেমেছে চাষিরা। সে কারণেই অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে এবার লবণ উৎপাদন বাড়ছে বলে বলে মনে করা হচ্ছে।
জানা গেছে, চলতি মৌসুমে দেশে লবণের (ভোজ্য ও শিল্পসহ) চাহিদা ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৩ লাখ ৮৫ হাজার টন। বর্তমানে দেশে প্রতিমাসে প্রায় পৌনে দুই লাখ টন লবণের চাহিদা রয়েছে। সে হিসাব অনুযায়ীই চলতি মৌসুমের লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এর আগে গত ১৯ মার্চ থেকে একটানা কয়েক দিনের বৈরী আবহাওয়ার কারণে মাঠে লবণ লবণ উৎপাদন ব্যাহত হয়। তবে লবণ উৎপাদনের এখন ভরা মৌসুম চলছে, আগামী ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত (অফিসিয়ালি) লবণ উৎপাদন মৌসুম রয়েছে। লবণ উৎপাদনের শেষ দিকে বাতাসের আদ্রতা ও রোদের প্রখরতা বাড়ায় এসময়ে লবণ অন্যান্য সময়ের তুলনায় প্রায় তিনগুণ হয়ে থাকে বলে জানা গেছে। এসময় প্রতিদিন (আবহাওয়া ভালো থাকলে) ২০ থেকে ২২ হাজার টনের বেশি লবণ উৎপাদন হয়। এর আর আগে গত ৭ এপ্রিল পর্যন্ত ১৩ লাখ ৬৭ হাজার ৪২৬ টন ছাড়িয়েছে।
এদিকে গত ২০ এপ্রিল পর্যন্ত উপকূলে উৎপাদিত লবণ (ক্রড) প্রতিমণ পাইকারি বিক্রি হয়েছে ৪০০ টাকার ওপরে (ধোলাই খরচসহ)।
বাঁশখালী উপকূলের লবণ চাষি মো. বেলাল জানান, গতকাল ধোলাই খরচসহ পাইকারি প্রতিমণ লবণ বিক্রি করেছেন ৪০০ টাকা। বর্তমানে পাইকারি লবণের দামে তারা খুশি বলে জানান লবণ চাষি মো, বেলাল।
লবণ উৎপাদনের এ ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি মৌসুমে লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রত্যাশা করছেন বিসিকের লবণ প্রকল্পের জেনারেল ম্যানেজার জাফর ইকবাল ভূঁইয়া। তিনি জানান, লবণ উৎপাদনের ধারাবাহিকতার সাথে লবণ উৎপাদন মৌসুম পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে তিনি আশা করছেন।
জানা গেছে,গত মৌসূমের শেষ দিকে উৎপাদিত লবণ পাইকারি প্রতিমণ বিক্রি ছাড়িয়ে যায় ৪৫০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা। মাঠে উৎপাদিত লবণের মূল্য বেশি হওয়ায় এবার উৎপাদন মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই চাষিরা লবণ উৎপাদনে মাঠে নেমে পড়েন চাষিরা। এ অবস্থায় ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহের দিকে হঠাৎ করে লবণের পাইকারি মূল্য কমে ধোলাই খরচ প্রতিমণ (৩০) টাকাসহ পাইকারি বিক্রি মাত্র ২৮০ টাকায় নেমে আসে। সে কারণে চাষিরা অস্থির হয়ে উঠেছিল উৎপাদিত লবণ নিয়ে।
এদিকে প্রতিমণ লবণ উৎপাদনের এবার প্রায় ২৬০ থেকে ২৭০ টাকা উপরে পড়ছে, যা গত মৌসুমে ছিল গড়ে ২৫০ টাকা। সে কারণে মাঠে উৎপাদিত লবণের মূল্য নিয়ে চাষিরা দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন ।
জানা গেছে, গত মৌসুমে ২০২১-২২ অর্থবছরে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের ৭৫ মৌজায় ৬৩ হাজার ২৯১ একর লবণ মাঠে ৩৭ হাজার ২৩১ জন চাষি লবণ উৎপাদনে লবণ উৎপাদন করেছেন। এবার ২০২২-২০২৩ মৌসুমে লবণ চাষের পরিধি ও লবণ চাষির সংখ্যা বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন বিসিকের লবণ প্রকল্প।
এক সময়ে দেশে প্রতি বছর সোডিয়াম সালফেটের আড়ালে লাখ লাখ টন সোডিয়াম ক্লোরাইড আমাদানি করত অসাধু ব্যাবসায়ীরা। এছাড়া মিস ডিলারেশনের মাধ্যমেও লাখ লাখ টন লবণ আমাদানি করত। সে কারণে দেশে লবণ উৎপাদন করে চাষিরা লাভের মুখ দেখত না। এনিয়ে একাধিকবার সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার প্রেক্ষাপটে সরকার লবণ শিল্প ও চাষিদের স্বার্থ সমুন্নত রাখতে বিদেশ থেকে লবণ আমদানির উপরে শুল্কহার ৩২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৮৯ শতাংশ করেছেন। এ কারণে আমদানি করা লবণের বেশি হওয়ার কারণে আমদানিকারকরা অতিরিক্ত লবণ আমদানিতে নিরুৎসাহিত হওয়ায় দেশে লবণ শিল্পে প্রাণ ফিরে আসে। এ ছাড়া বিসিকের উদ্যোগে নামমাত্র সুদে গত মৌসুম থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ সুবিধা দেয়া হচ্ছে। অপরদিকে চাষিরা রেয়াতি সুদে এক লাখ ৫৩ হাজার টাকার কৃষিঋণ সুবিধাও দিয়ে আসছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।