জুমবাংলা ডেস্ক : আজ থেকে এক যুগ আগের কথা। মোমেনা বেগমের বয়স তখন চল্লিশের কোঠায়। ছিলেন খানিকটা মানসিক অসুস্থ। প্রায়ই বাড়ি থেকে নিরুদ্দেশ হয়ে যেতেন। কিন্তু এক যুগ আগে যেটি ঘটেছিল সেটি এখন হয়তো গল্প হয়েই থাকবে মোমেনার কাছে। তার জীবনের গল্পটা হয়তো সেখানেই শুরু অথবা শেষের।
মোমেনার বাড়ি গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের কামারদহ ইউনিয়নের ঘোড়ামারা গ্রামে। বাবা মৃত আজিজার রহমান। বিয়ে হয় পলাশবাড়িতে। মোমেনার কোলজুড়ে ছিল দুই কন্যা ও তিন পুত্র সন্তান। হঠাৎ একদিন সবাইকে ফেলে নিরুদ্দেশ হন তিনি। হাঁটতে হাঁটতে দেশের সীমানা পেরিয়ে চলে যান নেপালের একটি জঙ্গলে। নির্জন সেই জঙ্গল থেকে নেপালের মানব সেবা আশ্রমের কর্মীরা তাকে উদ্ধার করে আশ্রমে নিয়ে আসেন। সেখানে কেটে গেছে ১২টি বছর।
আশ্রমটির সেবা শুশ্রূষায় স্মৃতি ফিরে পান মোমেনা। পরে আশ্রম কর্তৃপক্ষের কাছে জীবনের ঘটনা খুলে বলেন। মোমেনার কথা মতো আশ্রমটির কয়েকজন তরুণ তাকে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন।
গত বৃহস্পতিবার (২৪ ডিসেম্বর) মোমেনাকে নিয়ে নেপালি তরুণরা হাজির হন পলাশবাড়ী স্বামী কদ্দুস আলীর বাড়িতে। মোমেনা ফিরে পান স্বজন এবং সন্তানদের। তখন তাদের চোখ বেয়ে যে অশ্রু ঝরে পড়ছিল তা আনন্দ না বেদনার তা নির্ণয়ে হয়তো উভয়েই দ্বিধায় ছিলেন। শুধু তারাই নন, দ্বিধায় ছিলেন স্থানীয়রাও।
মোমেনা জানালেন, আমার বয়স এখন ৫২। আমি হারিয়ে যাওয়ার দুই বছর পরই স্বামী অন্যত্র বিয়ে করেন। সন্তানদের জায়গা হয় খালার বাসায়। স্বামীর বর্তমান স্ত্রীর সম্মতি না থাকায় বাড়িতেও ঠাঁই হলো না। ফিরতে হলো বাবার বাড়িতে। কথাগুলো বলতে বলতে মোমেনা কখনও চোখের জল সংবরণ করলেন আবার কখনও ব্যর্থ হলেন।
তবে মাকে সন্তানদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ায় ওই সংস্থাটিকে কৃতজ্ঞতা জানাতে ভুল করেনি এলাকাবাসী। ঘোড়ামারা গ্রামের রাশেদ বলেন, মানুষ মানুষের জন্য এটি আবারো প্রমাণ করলো নেপালি মানব সেবা আশ্রমের কর্মীরা।
এ ব্যাপারে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার রামকৃষ্ণ বর্মণ জানান, যেহেতু মোমেনা অসহায় দুস্থ, তাকে পুনর্বাসন করা হবে।
Own the headlines. Follow now- Zoom Bangla Google News, Twitter(X), Facebook, Telegram and Subscribe to Our Youtube Channel