জুমবাংলা ডেস্ক: ইলিশের ডিম প্রায় সবার পছন্দের খাবার। এজন্য চাহিদাও বেশ। ইলিশের ডিমের বড় অংশের জোগান মিলছে চাঁদপুর বড়স্টেশন মাছের আড়ত থেকে। এখান থেকে প্রতিদিন কয়েক মণ ইলিশের ডিম সংগ্রহ করা হয়। এসব ডিম যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন বাজারে। বাংলা ট্রিবিউনের প্রতিবেদক ইব্রাহীম রনি-র প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বিস্তারিত।
পাশাপাশি প্রবাসীদের মাধ্যমে ইলিশের ডিম যাচ্ছে বিদেশে। সাগর এবং নদী অঞ্চলে ইলিশ বেশি ধরা পড়লে বাজারে ডিমের সরবরাহ বাড়ে বলে জানালেন ব্যবসায়ীরা। বড়স্টেশন আড়তে তুলনামূলক ছোট ইলিশের ডিমের কেজি বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৬০০-৭০০ টাকা। বড় মাছের ডিমের কেজি দুই হাজার টাকা।
ইলিশের ডিমের মৌসুম
ইলিশের ডিম ব্যবসায়ীরা জানালেন, মা ইলিশ রক্ষার অভিযান শেষ হওয়ার পর ডিম সংগ্রহের সময় থাকে ১০-১২ দিন। এরপর মৌসুম শেষ হয়ে যায়।
বড়স্টেশন মাছ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, হাতিয়া ও সন্দ্বীপসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চল থেকে চাঁদপুর বড়স্টেশন মাছ ঘাটে আসে বেশিরভাগ ইলিশ। উপকূলীয় এলাকায় মাছ শিকার করে বাজারে আনতে কয়েকদিন সময় লেগে যায়। এতে ফিশিং বোটে থাকা ইলিশের কিছু অংশ বরফ ও মাছের চাপে নরম হয়ে যায়। তখন মাছগুলো বিক্রি না হওয়ায় কিনে নেন ডিম ব্যবসায়ীরা। তারা মাছগুলো কেটে ডিম বিক্রি করেন। পাশাপাশি লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করে মাছগুলো বিক্রি করেন নোনা ইলিশ হিসেবে।
বছরের চার-পাঁচ মাস বড়স্টেশন আড়তে বিপুল পরিমাণ ইলিশ কাটে ১০টি প্রতিষ্ঠান। যা থেকে পাওয়া যায় তিন-চার মণ ডিম। ডিমগুলো প্লাস্টিকের বাক্সে সংরক্ষণের পর তা প্যাকেট করে দেশ-বিদেশে পাঠানো হয়।
ক্রেতা প্রচুর
ডিমের পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, ইলিশের ডিম সববয়সী মানুষের পছন্দের। ক্রেতা প্রচুর। ইলিশের ভরা মৌসুমে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটসহ বিভিন্ন স্থান থেকে এই বাজারে ডিম কিনতে আসেন খুচরা বিক্রেতারা। তারা কিনে তা বিক্রি করছেন বাজারে কিংবা অনলাইনে।
ইলিশের ডিম বিক্রেতা হাসান আরিফ বলেন, ‘ইলিশ বেপারি ফেসবুক পেজের মাধ্যমে ইলিশের ডিম আমরা অনলাইনে বিক্রি করি। প্রতি বছর ভরা মৌসুমে তিন-চার মাস ডিম সংগ্রহ করি। পরে তা দেশের বিভিন্ন জেলার গ্রাহকদের কাছে বিক্রি করি। এমনকি অনলাইন প্রবাসীরা অর্ডার দিলে ভারত, সৌদি আরব ও দুবাইসহ কয়েকটি দেশে ডিম পাঠাই।’
তিনি বলেন, ‘ইলিশের ডিমের প্রচুর চাহিদা। বড়স্টেশন বাজার থেকে প্রতি কেজি ইলিশের ডিম এক হাজার ৭০০-৮০০ টাকায় কিনে তা বিক্রি করি এক হাজার ৯০০ থেকে দুই হাজার টাকা।’
ইলিশের ডিম বিক্রেতা নাহিদ হাসান রুবেল বলেন, ‘দুই বছর ধরে আমরা অনলাইনে ইলিশ এবং ডিম বিক্রি করি। চাঁদপুরের ইলিশের ব্যাপক চাহিদা আছে। পাশপাশি ছোট-বড় সবাই ইলিশের ডিম পছন্দ করেন। পাইকারি বাজার থেকে কিনে কেজিতে এক-দেড়শ টাকা লাভে বিক্রি করি।’
পাইকারি ডিম বিক্রেতা আব্দুর রউফ বলেন, ‘জ্যৈষ্ঠ ও আষাঢ় মাস থেকে ইলিশের ডিম সংগ্রহের প্রস্তুতি নিই। তবে এ সময়ে খুব একটা ডিম পাই না। এ সময়টাতে আমাদের বসে থাকতে হয়। তবে ভরা মৌসুমে ডিম পাওয়া যায়। এ বছর মাছে ডিম কম দেখা যাচ্ছে। হাতিয়া থেকে কিছু ইলিশ আসে সেগুলোর মধ্যে এক মণ কাটলে তিন-চার কেজি ডিম পাওয়া যায়। এগুলো এখানের খুচরা ক্রেতারাই নিয়ে যান। আগে অনেক ডিম হতো, তখন চট্টগ্রামে কারখানায় পাঠাতাম। এখন তেমন ডিম পাওয়া যায় না।’
বড়স্টেশন আড়তের পাইকারি ডিম বিক্রেতা আল আমিন বলেন, ‘চাঁদপুরে সাধারণত ভাদ্র মাস থেকে ইলিশের আমদানি বাড়ে। যখন ইলিশের আমদানি বাড়ে তখন মাছ কাটা শুরু করি। এখানে প্রতিদিন ছয়-সাত মণ ইলিশ কাটা হয়। তবে এটি ইলিশ সরবরাহের ওপর নির্ভরশীল। সরবরাহ বাড়লে বেশি মাছ কাটার সুযোগ হয়।’
তিনি বলেন, ‘বড়স্টেশন আড়তের অন্তত ১০টি দোকানে ইলিশ কাটা হয়। সব দোকান মিলে দিনে প্রায় ২০০-৩০০ কেজি ইলিশের ডিম সংগ্রহ করা হয়। যখন ডিম বেশি হয় তখন চট্টগ্রাম ও সিলেটসহ বিভিন্ন কারখানায় দিই। তবে অনেকে অনলাইনে বিক্রির জন্য ইলিশের ডিম কিনে নেন।’
ডিমগুলো প্লাস্টিকের বাক্সে সংরক্ষণের পর তা প্যাকেট করে দেশ-বিদেশে পাঠানো হয়
ইলিশের ডিম বিক্রি বৈধ?
চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা গোলাম মেহেদী হাসান বলেন, ‘মা ইলিশ রক্ষার ২২ দিন এবং জাটকা রক্ষায় দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এই সময়ে নদীতে সব ধরনের মাছ ধরা, পরিবহন ও বিক্রি নিষিদ্ধ। এছাড়া অন্যান্য সময় ইলিশ ধরা বা ডিম সংগ্রহ এবং বিক্রিতে আইনত বাধা নেই।’
ইলিশ গবেষক ড. আনিছুর রহমান বলেন, ‘মা ইলিশ রক্ষায় নদীতে ২২ দিন ছাড়াও সাগরে ইলিশসহ ডিমওয়ালা সব ধরনের মাছ রক্ষায় ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা আছে। সেখানে মা ইলিশের একটা প্রটেকশন হয়। তবে মা ইলিশ রক্ষার মূল সময়টি হলো নদীতে নিষেধাজ্ঞার ২২ দিন। গবেষণার ফলে দেখা গেছে, একটা ইলিশে ১০-১২ লাখ ডিম থাকে। এই ২২ দিন মা ইলিশ নির্বিঘ্নে ডিম পাড়ার সুযোগ পেলেই যথেষ্ট হয়।’
তিনি বলেন, ‘যেহেতু ইলিশ সারা বছর কমবেশি ডিম দেয় তাই বৈধ সময়ে ইলিশ ধরলে তার পেটে ডিম থাকবে—এটি স্বাভাবিক। ফলে ডিম বিক্রি বৈধ।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।