জুমবাংলা ডেস্ক : প্রায় ১৭ বছর পর নীতিনির্ধারণী সুদের হার ‘বাংক রেট’ বা ‘ব্যাংক হার’ এক শতাংশ কমিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই হারে ঋণ দিয়ে থাকে, যা ব্যাংকিং খাতে মৌলিক নীতিনির্ধারণী সুদের হার হিসেবে পরিচিত। আগে এই হার ছিল ৫ শতাংশ। এক শতাংশ কমানোর ফলে এই হার এখন ৪ শতাংশ। নতুন ব্যাংক রেট বুধবার থেকেই কার্যকর করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক বুধবার বিকালে এ বিষয়ে একটি সার্কুলার জারি করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠিয়েছে। দেশের শীর্ষ অর্থনীতিবিদরা জানান, ব্যাংক হার কমানোর মাধ্যমে বাজারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি বার্তা দিল যে, তারা সুদের হার কমাতে চায়। ব্যাংকগুলোও যাতে এই হার কমানোর জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়।
এদিকে ব্যাংক হার কমানোর মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিনির্ধারণী প্রায় সব ধরনের সুদের হার কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে। ব্যাংক হার কমানোর সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রানীতির অন্যতম উপকরণ ট্রেজারি বিল পুনঃক্রয় চুক্তি বা রেপোর সুদের হার এবং রিভার্স রেপো সুদের হার কমিয়েছে। এ বিষয়েও কেন্দ্রীয় ব্যাংক আলাদা একটি সার্কুলার জারি করে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠিয়েছে। এ দুটি উপকরণের নতুন সুদের হার আজ বৃহস্পতিবার থেকে কার্যকর হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, করোনার প্রভাব মোকাবেলা করতে বাজারে কম সুদে টাকার জোগান বাড়ানোর জন্যই এসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের কাছে টাকার জোগান সহজ করা হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, করোনার আঘাতে অর্থনীতির যে ক্ষতি হয়েছে, তা মোকাবেলা করতে হলে উদ্যোক্তাদের কাছে টাকার জোগান বাড়াতে হবে। এজন্য একদিকে যেমন সুদের হার কমাতে হবে, অন্যদিকে দ্রুত ও সহজে টাকা তাদের কাছে পৌঁছাতে হবে। অর্থাৎ দ্রুত ও কম খরচে টাকা পৌঁছাতে হবে তাদের কাছে। এতে তারা নতুন উদ্যোগে ব্যবসা শুরু করতে পারবে।
সূত্র জানায়, ২০০৩ সালের ৮ নভেম্বর সর্বশেষ ব্যাংক রেট কমানো হয়েছিল। ওই সময়ে এ রেট ৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। এরপর প্রায় ১৭ বছর চলে গেছে। এই হার কমানো হয়নি। যদিও বিভিন্ন সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই হার কমানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের সমীক্ষা করেছে। বিশেষ করে উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে ঋণের সুদের হার কমানোর জন্য যখন জোরালো দাবি ওঠে, তখনই কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই হার কমানোর উদ্যোগ নেয়।
কিন্তু সবকিছু বিবেচনায় আর কমানো হয়নি। ১ এপ্রিল থেকে ক্রেডিট কার্ড ছাড়া সব ধরনের ব্যাংক ঋণের সুদের হার ৯ শতাংশ নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। এর পর থেকে ব্যাংকাররা দাবি করে আসছিলেন ব্যাংক রেট কমানোর। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকও এ বিষয়ে একটি সমীক্ষা চালায়। এর ভিত্তিতেই বুধবার মুদ্রানীতি ঘোষণার সঙ্গে এই হারও কমানো হয়।
এর আগে ১৯৯৭ সালের ২৪ নভেম্বর ব্যাংক হার ৯ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৮ শতাংশ করা হয়। এর প্রায় দুই বছর পর ১৯৯৯ সালের ২৯ আগস্ট এ হার এক শতাংশ কমিয়ে ৭ শতাংশ করা হয়। এর দুই বছর পর এই হার আরও ১ শতাংশ কমিয়ে ২০০১ সালের ২৪ অক্টোবর ৬ শতাংশ করা হয়। এর তিন বছর পর তা আরও এক শতাংশ কমিয়ে ২০০৩ সালের ৮ নভেম্বর ৫ শতাংশ করা হয়।
১৭ বছর ধরে ব্যাংক রেট ৫ শতাংশ ছিল। বুধবার তা এক শতাংশ কমিয়ে ৪ শতাংশ করা হয়েছে। এদিকে রেপো সুদের হার ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ করা হয়েছে। এবার নিয়ে এই হার তিন দফা কমানো হয়েছে। করোনার প্রভাব মোকাবেলা করতে ব্যাংকগুলোয় কম সুদে তারল্যের জোগান বাড়াতে এর আগে আরও দুই দফায় এই সুদের হার কমানো হয়েছে। রিভার্স রেপোর সুদের হার এই প্রথম কমানো হয়েছে। এই হার আগে ছিল ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এখন তা কমিয়ে ৪ শতাংশ করা হয়েছে।
বাজারে টাকার প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করতে এবং সরকারকে ঋণের জোগান দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে ট্রেজারি বিল, বন্ড ও বাংলাদেশ ব্যাংক বিল বিক্রি করে টাকা তুলে নেয়, যা ট্রেজারি বিলের নিলাম হিসেবে পরিচিত।
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নগদ টাকার প্রয়োজন হলে তারা এসব ট্রেজারি বিল বা বন্ড কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পুনরায় ফেরত দিয়ে নগদ টাকা তুলে নিতে পারে, যা রেপো নামে অভিহিত। আবার এসব ট্রেজারি বিল বা বন্ড কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো পুনরায় কিনে নিলে, তা রিভার্স রেপো নামে পরিচিত।
অর্থাৎ বাজার থেকে টাকা তোলা এবং বাজারে টাকার জোগান বাড়ানোর দুই ক্ষেত্রের উপকরণের সুদের হারই কমানো হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।