পরবর্তী প্রায় ৫০ বছর ধরে এ রকম কাঠের সিলিন্ডার আকৃতির স্টেথোস্কোপ চালু ছিল। ডাক্তার লাইনেক তাঁর স্টেথোস্কোপের সাহায্যে হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুসের বিভিন্ন ধরনের রোগের শব্দ অনুসন্ধান করেন এবং তা বই আকারে প্রকাশ করেন ১৮১৯ সালে। ফুসফুস ও হৃৎপিণ্ডের রোগনির্ণয় ও চিকিৎসায় তাঁর এই বই ছিল চিকিৎসাবিজ্ঞানের মাইলফলক।
এরপর মাত্র সাত বছর বেঁচে ছিলেন ডাক্তার লাইনেক। দিনের পর দিন, বছরের পর বছর যক্ষ্মা রোগীর চিকিৎসা করতে করতে এবং যক্ষ্মা রোগ নিয়ে গবেষণা করতে করতে নিজেই যক্ষ্মা রোগের শিকার হলেন তিনি। ১৮২৬ সালে মাত্র ৪৫ বছর বয়সে তিনি মারা যান।
লাইনেকের মৃত্যুর পর তাঁর স্টেথোস্কোপের বিভিন্ন ধরনের বিবর্তন ঘটেছে। ১৮২৮ সালে সিলিন্ডারের একদিকে চোঙাকৃতি করা হলো যেন রোগীর শরীর থেকে বেশি মাত্রার শব্দ সিলিন্ডারে প্রবেশ করানো যায়। আর অন্যদিকে কান পাতার জন্য সিলিন্ডারকে সরু করা হলো যেন শব্দ কানের বাইরে না যায়, বা বাইরের শব্দের সঙ্গে মিশে না যায়। তখনো কিন্তু এক কানেই শব্দ শোনা যেত। ১৮৪৩ সালে সিলিন্ডারের এক প্রান্তে সীসার নল লাগিয়ে একই সঙ্গে দুই কানে শব্দ শোনার ব্যবস্থা করা হলো। ১৮৫৫ সালে রাবারের প্রচলন ঘটার পর স্টেথোস্কোপের গঠনে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে।
১৮৯৪ সালে স্টেথোস্কোপে যুক্ত হয় শক্ত ধাতব ডায়াফ্রাম, যার নাম দেওয়া হয় ফোনেন্ডোস্কোপ। ১৯২৬ সালে বোস্টনের বক্ষব্যাধিবিশেষজ্ঞ হাওয়ার্ড স্প্র্যাগ স্টেথোস্কোপে যুক্ত করেন বেল ও ডায়াফ্রাম, যার মাধ্যমে ডাক্তার ইচ্ছে করলে কম কম্পাঙ্ক ও বেশি কম্পাঙ্কের শব্দ শুনতে পারেন। তারপর প্রায় ৩০ বছর ধরে বিভিন্ন ধরনের প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে আজকের স্টেথোস্কোপের পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে।
শব্দের সাধারণ পদার্থবিজ্ঞানের নিয়ম মেনেই চলে স্টেথোস্কোপের কাজকর্ম। স্টেথোস্কোপের চেস্ট পিস বা বুকের অংশটিতে থাকে একটি বড় চাকতির আকৃতির ডায়াফ্রাম এবং তার সঙ্গে লাগানো অপেক্ষাকৃত ছোট আকারের ফাঁপা বেল। ডায়াফ্রামটি বেশি কম্পাঙ্কের শব্দ প্রেরণ করে, আর ফাঁপা বেলটি কম কম্পাঙ্কের শব্দ প্রেরণ করে।
হৃৎপিণ্ড বা ফুসফুসের শব্দ ডায়াফ্রাম ও বেলের মাধ্যমে প্রবাহিত হয়ে তাদের সঙ্গে লাগানো নলের মধ্য দিয়ে ডাক্তারের কানে পৌঁছায়। ডাক্তারের শ্রবণশক্তির ওপর নির্ভর করে রোগনির্ণয়। এটাই হলো প্রচলিত স্টেথোস্কোপের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা। অনেক সময় খুব কম কম্পাঙ্কের শব্দ ডাক্তারের কানে না–ও পৌঁছাতে পারে। সে ক্ষেত্রে রোগনির্ণয়ে সমস্যা হতে পারে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।