জুমবাংলা ডেস্ক : বঙ্গবন্ধু ১৯৪৮ সালেই দেশ স্বাধীনের সিদ্ধান্ত নেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় এ কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, দেশের স্বাধীনতার কথা আপনি কখন থেকে চিন্তা করেন। তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, ১৯৪৮ সালে যখন মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার পাকিস্তানিরা কেড়ে নিয়েছিল, সেদিন থেকে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম ওদের সঙ্গে আর থাকব না।
তিনি বলেন, ভাষা আন্দোলনের পথ বেয়েই কিন্তু স্বাধীনতা। একজন নেতা নিজের জীবনের সব বিসর্জন দিয়ে একটি জাতির জন্য তিনি দিনের পর দিন অধিকার বঞ্চিত-শোষিত মানুষের কথা বলতে গিয়ে বারবার কারাবরণ করেছেন। জেল-জুলুম অত্যাচার সহ্য করেছেন। যে লক্ষ্য তিনি স্থির করেছিলেন, সেই লক্ষ্য সামনে রেখে একটার পর একটা পদক্ষেপ নিয়েছেন। তিনি চুয়ান্ন সালে নির্বাচনও করেছেন, ছাপ্পান্ন সালে তিনি জাতীয় পরিষদের সদস্য ছিলেন। নিয়ম মেনেই কিন্তু এগিয়ে গেছেন। একটি লক্ষ্য স্থির রেখে। যেটা কখনো তিনি মুখে উচ্চারণ করেননি। কিন্তু একটি জাতিকে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ করা বা তাদের সংগঠিত করা, ঐক্যবদ্ধ করা এটা একটি কঠিন কাজ ছিল। সেই কঠিন কাজ তিনি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে করে যান।
শেখ হাসিনা বলেন, যারা জয়বাংলা স্লোগানে বিশ্বাস করে না, ৭ মার্চের ভাষণকে যারা প্রেরণা বলে মনে করে না, তার অর্থ তারা স্বাধীন বাংলাদেশই চায় না। তারা দেশের উন্নয়ন চায় না। দেশের মানুষের অর্থসামাজিক উন্নতি চায় না। তাদের কেন মানুষ ভোট দেবে। সেই জন্যই তারা বারবার ইলেকশন বানচাল করে কীভাবে মানুষের দুর্ভোগ বাড়বে বারবার অগ্নিসন্ত্রাস সৃষ্টি করে দেশটাকে ধ্বংস করতে চায়।
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, জাতির পিতা মাসের পর মাস কারাগারে কাটিয়েছেন। দেশের মানুষের কথা তিনি যখনই বলেছেন গ্রেপ্তার করা হয়েছে, মামলা দেওয়া হয়েছে। বাঙালিরা সরকার গঠন করবে এটা পাকিস্তানিরা কখনো মেনে নেয় না। ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু কিন্তু বলেছেন কী কী অবস্থা ছিল। যেহেতু নির্বাচনে আমরা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছি, তার দাবি ছিল আমাদের এখানে সংসদ বসতে হবে। জাতীয় পরিষদের অধিবেশন এখানে বসবে, ঢাকায় বসবে। কিন্তু সেটি বাধা দিয়েছিল ইয়াহিয়া খান, ভুট্টো। এসবের প্রতিবাদে সারা দেশের মানুষ আন্দোলনে ফেটে পড়ে। বঙ্গবন্ধু অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। ওই সময়ে ৭ মার্চ তিনি জনসভা করার ঘোষণা দিলেন।
ইতিহাস তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেই জনসভায় লাখ লাখ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে চলে এসেছিল। হাতে বাঁশের লাঠি, কারও হাতে নৌকার বৈঠা, সবকিছু নিয়ে মানুষ ছুটে এসেছিল। এই ভাষণ দেওয়ার আগে আমাদের অনেক জ্ঞানী গুণী বুদ্ধিজীবী লিখিত বক্তব্য নিয়ে আসেন, কেউ পরামর্শ দেন। তখনকার ছাত্রনেতা আব্দুর রাজ্জাক ও সিরাজুল হক খান, তারা এসে বলল কালকে স্বাধীনতার ঘোষণা দিতেই হবে। না দিলে চলবে না। মানুষ সেটাই চায়। বঙ্গবন্ধু দুই নেতার হাতে দুই হাত রেখে বললেন, ‘সিরাজ, লিডার শুড লিড দ্য ল্যাড, ল্যাড শুড নট লিড দ্য লিডার’।
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার ঘটনা মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাত্র ৩ বছর ৭ মাসের মধ্যে একটি যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ গড়ে তুলে যখন স্বল্পোন্নত দেশে উন্নীত করে অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, তখন স্বাধীনতাবিরোধীদের সহ্য হয়নি। দুর্ভাগ্যের বিষয়, পাকিস্তানিরা হত্যা করার সাহস পায়নি। কিন্তু যারা দিনভর আমাদের বাড়িতে আসা যাওয়া করত, তাদের দেখলাম ঘাতকরূপে। শুধু ক্ষমতার জন্য রাষ্ট্রপতিকে করেনি, আমার মাকে হত্যা করেছে। ছোট তিন ভাই, চাচাসহ সবাইকে হত্যা করেছে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বাংলাদেশ এক কদমও এগোতে পারেনি। বাংলাদেশ ছিল স্থবির। আর্থসামাজিক উন্নতি হয়নি, দেশের মানুষ ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি। ক্ষমতা দখলকারী মুষ্টিমেয় কিছু লোক অর্থশালী হয়েছিল। কিন্তু দেশের মানুষ বঞ্চিতই থেকে গিয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ৭ মার্চের দিবসটি আমরা পালন করছি এই কারণে, দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর যে স্বপ্ন জাতির পিতা দেখেছিলেন, সেটাই আমাদের বাস্তবায়ন করতে হবে। এ কাজটি তিনি করতে গেলে তাকে করতে দেওয়া হয়নি। ১৫ আগস্টে তাকে হত্যা করে মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হয়েছে। এদেশে মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর কেউ যেন ছিনিমিনি খেলতে না পারে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।