জুমবাংলা ডেস্ক: দেশে সোমবার থেকে ‘শাটডাউন’ দেবার যে কথা সরকার আগে ঘোষণা করেছিল সেটি পিছিয়ে দেয়া হয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সভাপতিত্বে শনিবার অনুষ্ঠিত বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়। খবর বিবিসি বাংলার।
সিদ্ধান্ত হয়েছে যে সোমবার থেকে আশিংক ‘শাটডাউন’ কার্যকর করা হবে এবং ১লা জুলাই থেকে পুরোপুরি কার্যকর করা হবে।
সোমবার থেকে গণপরিবহন চলাচল সীমিত হয়ে যাবে। সীমিত পরিসরে কিছু প্রতিষ্ঠান খোলা থাকবে। এর মধ্যে বাণিজ্যিক অন্যতম।
পয়লা জুলাই থেকে পুরোপুরি কার্যকর হলেও শিল্পকারখানা শাটডাউনের আওতার বাইরে থাকবে।
এর আগে করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিস্তার ঠেকাতে সরকার সোমবার ২৮শে জুন থেকে আবার সাতদিনের জন্য সব কিছু বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছিল।
তবে এনিয়ে সরকার যত কঠোর অবস্থানের কথাই বলুক না কেন-তার বাস্তবায়ন নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সন্দেহ রয়েছে।
ঝুঁকিতে ৪০টি জেলা
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণের বিস্তারের মুখে উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে সীমান্তবর্তী জেলাগুলো সহ ৪০টি জেলা।
বিভিন্ন জেলায় এলাকাভিত্তিক লক ডাউন রয়েছে। রাজধানী ঢাকাকে বিচ্ছিন্ন করতে চারপাশের জেলাগুলোতেও লক ডাউন দেয়া হয়েছে।
এখন জাতীয় পরামর্শক কমিটির সম্পূর্ণ শাট ডাউন দেয়ার সুপারিশের ভিত্তিতে সারাদেশে আবার সবকিছু বন্ধ করে দেয়ার কথা বলা হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকে।
নতুন বিধিনিষেধের কথা কেন ভাবা হচ্ছে?
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন অবশ্য বলেছেন, শাট ডাউন বা লকডাউন শব্দের ব্যবহার না করে এবার বিধিনিষেধ পুরোপুরি কার্যকর করার চেষ্টা তাদের থাকবে।
“আসলে শাট ডাউন বা লক ডাউন-এগুলো বিষয় না। আমরা বিধিনিষেধ বলছি এটাকে আমরা কঠোর বিধিনিষেধই বলবো।”
মি: হোসেন আরও বলেন, “সরকার ইতিমধ্যেই চিন্তাভাবনা করছে যে, এরকম কিছু একটা করতে হবে, যাতে করে আমরা সংক্রমণের এই চেইনটা ভাঙতে পারি, করোনা সংক্রমণ নিম্নগামী করতে পারি।
”সেজন্য বিধিনিষেধ আমাদের দিতে হবে। সরকার বিষয়টা নিয়ে চিন্তাভাবনা করছে এবং আমাদের একটা প্রস্তুতিও আছে।”
“অল্প সময়ের মধ্যেই কঠোর বিধিনিষেধের একটি ঘোষণা সরকার থেকতে দেয়া হবে” বলেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী।
কেন ‘শাট ডাউন’ এর সুপারিশ?
সরকারের সর্বোচ্চ জাতীয় কারিগরি কমিটির পরামর্শক কমিটির সুপারিশে গোটা দেশে সবকিছু বন্ধ করে ‘সম্পূর্ণ শাট ডাউন’ দিতে বলা হয়েছে।
চলমান বিধিনিষেধ এবং বিভিন্ন জেলায় এলাকাভিত্তিক লক ডাউন থাকার পরও কেন এমন সুপারিশ করা হয়েছে- এই প্রশ্নে ঐ কমিটির প্রধান অধ্যাপক মো: শহীদুল্লাহ বলেছেন, বিপর্যয় এড়ানোর জন্য তারা কার্যকর একটা পদক্ষেপ চাইছেন।
“এখন যে লক ডাউনটা চলছে, তাতে অফিস আদালত খোলা, গণ পরিবহণ খোলা, দোকানপাট খোলা -তার ফলে এই লক ডাউন দিলেও আমরা দেখছি যে, লক্ষ লক্ষ মানুষ রাস্তাঘাটে যাচ্ছে, অফিসে যাচ্ছে। তাতে যে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল সেটা কিন্তু আমরা পাচ্ছি না।”
“লক ডাউন আমরা এক সপ্তাহ করে করে বাড়িয়েই যাচ্ছে। যেখানে করোনা কমার কথা। কিন্তু সংক্রমণ কমে নাই, স্থিতি অবস্থাতেও নাই। এটা আরও বাড়ছে” বলেন অধ্যাপক শহীদুল্লাহ।
“যদি এভাবে বাড়তে থাকে, তাহলে আমরা কোথায় গিয়ে ঠেকবো বা আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা দিয়ে তা মোকাবেলা করতে পারবো কিনা-এটা অনেকের মধ্যে আশংকা রয়ে গেছে,” তিনি বলেন।
”সেজন্যে জাতীয় কারিগরি কমিটি শাট ডাউনের কথা বলেছে।”
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শাট ডাউন বা বিধিনিষেধ যাই বলা হোক, তা বাস্তবায়নে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে দরিদ্র বা নিম্ন আয়ের মানুষসহ একটা বড় জনগোষ্ঠীর খাবারের যোগান নিশ্চিত করা।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড: মাহফুজা রিফাত বলেছেন, বিধিনিষেধ যথাযথভাবে কার্যকর করা সম্ভব না হলে এর মেয়াদ যখন বাড়তে থাকবে, সেটা নতুন সংকট তৈরি করবে।
“নির্ধারিত সময়ে বিধিনিষেধ কার্যকর করা না হলে অনেক সময় ধরে চলতে থাকবে। তাতে অর্থনৈতিক বা জীবিকার প্রশ্নে মানুষ বিধিনিষেধ মানতে চায় না।”
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন দাবি করেছেন, এবার বিধিনিষেধ কার্যকর করার সমস্যা বা বাধাগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে এবং সে অনুযায়ী পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
“যে যে কারণে মানুষকে বাইরে আসতে হয়, সে বিষয়গুলোও আমাদের বিবেচনার মধ্যে আছে। অফিস, আদালত এবং গণ পরিবহণ সহ সেই জায়গুলো বন্ধ রাখা হবে” বলেন মি: হোসেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।