সৌরজগতের বাইরেও গ্রহ আছে। সূর্যের মতো হাজারো নক্ষত্রকে ঘিরে ঘুরছে অদ্ভুত সব গ্রহ। আমরা এ কথা জানি খুব ভালোভাবেই। অথচ আজ থেকে প্রায় ৪০ বছর আগেও মানুষ জানত না, সৌরজগতের বাইরে নক্ষত্রগুলোকে ঘিরে গ্রহেরা ঘুরে চলেছে, ঠিক সৌরজগতের মতোই। ১৯৯৫ সালের ৬ অক্টোবর সুইস জ্যোতিঃপদার্থবিদ মাইকেল মায়োর ইতালির ফ্লোরেন্সে অনুষ্ঠিত এক ওয়ার্কশপে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেন সৌরজগতের বাইরের প্রথম গ্রহ আবিষ্কারের কাহিনি।
এর প্রায় ১০ বছর পর, ২০০৪ সালের ১০ সেপ্টেম্বর; অর্থাৎ আজকের এই দিনে মানুষ প্রথম দেখে বহিঃসৌরগ্রহের ছবি। গ্রহটির নাম ২এম১২০৭বি (2M1207b)। এর আগ পর্যন্ত বহিঃসৌরগ্রহের অস্তিত্বের বিষয়টি ছিল শুধুই তাত্ত্বিক। বিজ্ঞানের কথা হলো, সিয়িং ইজ বিলিভিং। অর্থাৎ যেকোনো কিছুরই প্রমাণ লাগবে। বহিঃসৌরগ্রহের অস্তিত্বের প্রমাণ মিলল আজ থেকে ২০ বছর আগের আজকের এ দিনে। আর এর মাধ্যমে মানুষ জানল, আসলেই এ ধরনের গ্রহ রয়েছে। মাইকেল মায়োর ও দিদিয়ের কুইলোজ যে দাবি করেছিলেন, তা সত্যি। মায়োর ও কুইলোজের প্রথম বহিঃসৌরগ্রহ আবিষ্কারের কাহিনি পড়ুন: সৌরজগতের বাইরের গ্রহ আবিষ্কারের কাহিনি।
এই গ্রহটি কীরকম? ২এম১২০৭বি নামের এই গ্রহটি আমাদের বৃহস্পতির মতো একটি দানব গ্রহ। পৃথিবী থেকে প্রায় ১৭০ আলোকবর্ষ দূরে একটি বাদামি বামন নক্ষত্রকে ঘিরে ঘুরছে গ্রহটি। এই নক্ষত্রটিকে চিহ্নিত করা হয়েছে ২এম১২০৭ নামে। আর এই নক্ষত্রব্যবস্থাটি রয়েছে সেন্টরাস নক্ষত্রপুঞ্জে।
তবে এই নক্ষত্রব্যবস্থাটি আমাদের সূর্যের মতো নয় মোটেও। আলোচ্য বাদামি বামন নক্ষত্রটি রয়েছে একটি নক্ষত্র ও একটি গ্রহের মাঝখানে, সীমারেখায়। এই বামন নক্ষত্রটির ভয় সূর্যের প্রায় ৪৫ ভাগ কম, তবে বৃহস্পতি থেকে প্রায় ২৫ গুণ বেশি। আর ২এম১২০৭বি গ্রহটি বৃহস্পতির তুলনায় পাঁচ গুণ ভারী।
ইউরোপিয়ান সাউদার্ন অবজারভেটরির (ইএসও) জ্যোতির্বিদ গ্যল সাউভিন। জ্যোতির্বিদদের যে দলটি এ গবেষণা করেছে, তিনি তাঁদের দলনেতাও বটে। তাঁর মতে, ‘এই নক্ষত্র ব্যবস্থাটি আমাদের সৌরজগতের তুলনায় এত ভিন্ন ধরনের যে এই দানব গ্রহটি সম্ভবত আমাদের সৌরজগতের গ্রহগুলোর মতো করে সৃষ্টি হয়নি। বরং এটি সম্ভবত আমাদের সূর্যের মতো করেই সৃষ্টি হয়েছে। মহাজাগতিক ধূলো ও গ্যাসমেঘ এক হয়ে, নিজের মহাকর্ষের টানে সংকুচিত হয়ে একীভূত হয়ে তৈরি করেছে এই গ্রহ।’
ছবিটি অবশ্য একটি কম্পোজিট। অর্থাৎ একাধিক ছবির মিশেলে তৈরি। গ্রহটি তার নক্ষত্রকে সূর্য থেকে নেপচুনের দূরত্বের দ্বিগুণেরও বেশি দূর থেকে প্রদক্ষিণ করছে। কিন্তু ছবিতে একে দেখা যাচ্ছে নক্ষত্রের অনেক কাছে। কারণটা আর কিছু নয়, এক ছবিতে সহজে বিষয়টা ফুটে তোলা। ছবিটা তোলা হয়েছে উত্তর চিলিতে অবস্থিত ভেরি লার্জ অ্যারে টেলিস্কোপের মাধ্যমে।
আসলে, এ টেলিস্কোপের অংশ, প্রায় ২৭ ফুট দৈর্ঘ্যের ইয়েপুন টেলিস্কোপ ব্যবহার করে তোলা হয়েছে এটি। ইএসওর প্যারানাল মানমন্দিরের এই টেলিস্কোপ রয়েছে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৮ হাজার ৬৪৫ ফুট ওপরে, চিলির মরুতে। অবলোহিত আলোয় তোলা এ ছবির মাধ্যমে শুরু হয় বহিঃসৌরগ্রহের ছবি শিকার। তারপর প্রায় ২০০ বহিঃসৌরগ্রহের ছবি তোলা হয়েছে, খোঁজ মিলেছে ৫ হাজারেরও বেশি এ ধরনের গ্রহের। জ্যোতির্বিজ্ঞানের ইতিহাসে এই দিনটি তাই লেখা থাকবে স্বর্ণাক্ষরে, এক অতি দানব বৃহস্পতিসম বহিঃসৌরগ্রহের ছবি তোলার দিন হিসেবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।