জুমবাংলা ডেস্ক : ১ এপ্রিল থেকে সব ধরনের ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ কার্যকর হওয়ায় ব্যাংকের ভালো ঋণগ্রহীতারা আর ১০ শতাশ সুদ মওকুফ সুবিধা পাবেন না। তবে নিয়মিত ঋণ পরিশোধে আগের মতোই ভালো ঋণগ্রহীতার খেতাব পাবেন তারা। এজন্য ভালো গ্রহীতা চিহ্নিতকরণ কার্যক্রম ব্যাংকগুলোকে অব্যাহত রাখতে হবে। বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় বাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত সার্কুলার জারি করা হয়েছে।
জানা যায়, গত বছর ভালো ঋণগ্রহীতাদের বিশেষ প্রণোদনা হিসেবে সুদের ওপর ১০ শতাংশ মওকুফ সুবিধা দিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। মূলত ঋণের উচ্চ সুদহার থেকে ভালো ঋণগ্রহীতাদের কিছুটা স্বস্তি দিতে এই প্রণোদনা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ১ এপ্রিল থেকে সব ধরনের ঋণের সুদের হার ৯ শতাংশ কার্যকর হওয়ায় ভালো ঋণগ্রহীতাদের জন্য এই সুবিধা বহাল রাখার প্রয়োজনীয়তা নেই বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় বাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আবু ফরাহ মো. নাছের বলেন, আগে ঋণের সুদ হার বেশি ছিল, প্রায় ১৫ শতাংশ। তাই রিবেট সুবিধা দিয়ে ঋণগ্রহীতাদের সুদ একটু কমানোর চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু ১ এপ্রিল থেকে সব ঋণের সুদ কমিয়ে ৯ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। এজন্য রিবেট সুবিধা আর না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে রিবেট সুবিধা না দেয়া হলেও আগের ভালো ঋণগ্রহীতার খেতাব ও সম্মাননা তারা পাবেন। এছাড়া ভবিষ্যতে যে কোনো সুবিধাও ভালো ঋণগ্রহীদের দেওয়া হবে। এজন্য ভালো ঋণগ্রহীতার সংজ্ঞা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।
সার্কুলারে বলা হয়, ১ এপ্রিল হতে ঋণের সুদের সবোর্চ্চ হার ৯ শতাংশ নির্ধারিত হওয়ায় বিআরপিডি ২০১৯ সালের ১৬ মের সার্কুলার অনুযায়ী কোনো গ্রাহক ভালো ঋণগ্রহীতা হিসেবে বিবেচিত হলে তিনি ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ পর্যন্ত রিবেট প্রাপ্য হবেন। এরপর আর এ সুবধা পাওয়া যাবে না। তবে ব্যাংক কতৃক ভালো ঋণগ্রহীতা চিহ্নিতকরণ কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে।
ভালো ঋণ গ্রহীতাদের ঋণ তথ্য সিআইবিতে গুড ব্রোয়ারস হিসেবে রিপোর্ট করতে হবে। তিন বছর বা তদূর্ধ্ব সময়কাল ধরে ভালো ঋণগ্রহীতা হিসেবে চিহ্নিত গ্রাহকদের ছবি, প্রোফাইল ইত্যাদির সমন্বয়ে ব্যাংক বিশেষ বুকলেট বা ম্যাগাজিন প্রকাশ করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে প্রথম প্রকাশের ক্ষেত্রে ভালো ঋণগ্রহীতাদের সংখ্যা অধিক হলে অপেক্ষাকৃত দীর্ঘসময় ধরে যে সকল ঋণগ্রহীতা ভালো ঋণগ্রহীতা হিসেবে চিহ্নিত হবেন তাদের নাম বিশেষ বুকলেট বা ম্যাগাজিনে অন্তভুর্ক্তকরণে অগ্রাধিকার পাবে। ব্যাংকগুলো বার্ষিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ভালো ঋণগ্রহীতাদের স্বীকৃতি বা পুরস্কার প্রদান করে তাদেরকে সম্মাননা জ্ঞাপনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।
সার্কুলারে ভালো ঋণগ্রহীতা চিহ্নিতকরণের সংজ্ঞাও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, চলমান ঋণের ক্ষেত্রে গ্রহীতার ঋণ হিসাব সংশ্লিষ্ট বছরের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত এবং অব্যবহিত পূর্ববর্তী চারটি ত্রৈমাসিকে অশ্রেণিকৃত-স্ট্যান্ডার্ড অবস্থায় থাকলে এবং মঞ্জুরিপত্রের শর্তানুসারে উক্ত ঋণ হিসাবে লেনদেন সন্তোষজনক হলে সংশ্লিষ্ট গ্রাহক ভালো ঋণগ্রহীতা হিসেবে বিবেচিত হবেন। তলবি ঋণের ক্ষেত্রে গ্রহীতার সংশ্লিষ্ট বছরের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত এবং অব্যবহিত পূর্ববর্তী ৪টি ত্রৈমাসিকে সকল তলবি ঋণ অশ্রেণিকৃত-স্ট্যান্ডার্ড অবস্থায় সমন্বিত হলে সংশ্লিষ্ট গ্রাহক ভালো ঋণগ্রহীতা হিসেবে বিবেচিত হবেন। মেয়াদী ঋণের ক্ষেত্রে গ্রহীতার ঋণ হিসাবে বিগত ১২ মাসের সকল কিস্তি নির্ধারিত তারিখের মধ্যে নিয়মিতভাবে পরিশোধিত হলে এবং অব্যবহিত পূর্ববর্তী ৪টি ত্রৈমাসিকে অশ্রেণিকৃত-স্ট্যান্ডার্ড অবস্থায় থাকলে সংশ্লিষ্ট গ্রাহক ভালো ঋণগ্রহীতা হিসেবে বিবেচিত হবেন।
কোনো ঋণগ্রহীতার একাধিক ঋণ থাকলে প্রতিটি ঋণের জন্য উল্লিখিত শর্তসমূহ পরিপালন করলেই কেবল সংশ্লিষ্ট ঋণ গ্রহীতা ভালো ঋণগ্রহীতা হিসেবে বিবেচিত হবেন। তবে সকল ক্ষেত্রেই কোন ব্যাংকে বিগত ১২ মাসে কোন গ্রাহক বা তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে বিরূপমানে শ্রেণিকৃত ঋণ থাকলে উক্ত গ্রাহক ভালো ঋণগ্রহীতা হিসেবে বিবেচিত হবেন না। এছাড়া যৌক্তিক কারণে ঋণ হিসাব প্রথমবার পুনঃতফসিল বা পুনর্গঠনের মাধ্যমে নিয়মিত করা হলে এসব শর্তাবলী পরিপালন সাপেক্ষে ঋণগ্রহীতাকে ভালো ঋণ গ্রহীতা হিসেবে বিবেচনা করা যাবে।
এর আগে ভালো ঋণগ্রহীতার রিবেং সুবিধা নিয়ে ২০১৯ সালে ১৬ মের সার্কুলারে বলা হয়েছিল, ভালো ঋণগ্রহীতাদের কাছ থেকে তাদের ঋণের বিপরীতে যে সুদ আদায় করা হবে তার ১০ শতাংশ রিবেট সুবিধা দিতে হবে। অর্থাৎ কোনো গ্রাহকের কাছ থেকে ১০০ টাকা সুদ পাওনা হলে ৯০ টাকা আদায় করে ১০ টাকা ছাড় দিতে হবে। গ্রাহক ভালো ঋণগ্রহীতা হলে প্রতি বছর এই সুবিধা অব্যাহত থাকবে। প্রয়োজনে বর্ধিত ঋণ সুবিধাও পাবেন তিনি। ব্যাংকগুলোকে নিজ উদ্যোগে ভালো গ্রহীতা চিহ্নিত করে প্রণোদনা দেওয়ার কথা বলেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



