জুমবাংলা ডেস্ক : প্রশ্নফাঁসে জড়িত থাকার অপরাধে ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসেও একবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন নোমান সিদ্দিকী। সে সময় প্রতিরক্ষা মহাহিসাব নিরীক্ষকের কার্যালয়ের অধীন ডিফেন্স ফাইন্যান্স ডিপার্টমেন্টের অডিটর পদে নিয়োগের প্রশ্নফাঁস মূল হোতা হিসেবে গ্রেপ্তার হন তিনি।
প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত থাকার অপরাধে সম্প্রতি গ্রেপ্তার হওয়া ১৭ জনের একজন লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী গ্রামের মো. আবু তাহেরের ছেলে নোমান সিদ্দিকী।
সে সময় পুলিশ গণমাধ্যমকে জানিয়েছিল, নোমান সিদ্দীকি ৮ বছর ধরে তিনি বিভিন্ন সরকারি পদে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসে জড়িত। সেই ফাঁসের প্রশ্ন দিয়ে তার নিকটাত্মীয়স্বজনের চাকরিরও ব্যবস্থা করেন তিনি। আবার বিক্রি করে উপার্জন করেছেন কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা। গড়ে তুলেছেন বাড়িগাড়ি। তার চক্রে রয়েছেন জনপ্রতিনিধিসহ একাধিক রাঘববোয়াল।
প্রতিরক্ষা মহাহিসাব নিরীক্ষকের কার্যালয়ের অধীন ডিফেন্স ফাইন্যান্স ডিপার্টমেন্টের অডিটর পদে নিয়োগের প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় দায়ের করা দুই মামলার তদন্তে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে।
সে সময় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) গুলশান জোনের দায়িত্বে থাকা উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় মাস্টারমাইন্ড নোমান সিদ্দীকি। তিনি একসময় সরকারি চাকরি করতেন। ২০১৪ সালে তিনি স্বেচ্ছায় অবসর নেওয়ার পর প্রশ্নফাঁসে জড়িয়ে পড়েন। সেখান থেকে তিনি মোটা অঙ্কের টাকা উপার্জন করেছেন। একই সঙ্গে তার আত্মীয়স্বজনকেও চাকরির ব্যবস্থা করেছেন ফাঁস হওয়া প্রশ্ন দিয়ে।
তিনি বলেন, ডিফেন্স ফাইন্যান্স ডিপার্টমেন্টের অডিটর পদে প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি প্রাথমিকভাবে আমাদের কাছে প্রমাণিত। বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানানোও হয়েছে।
একই মামলায় সেসময় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন বগুড়ার ধুপচাঁচিয়া উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান মাহবুবা নাসরীন রূপা।
২০২২ সালের ২১ জানুয়ারি কাফরুল থানার শেনপাড়া পর্বতার ৪৯৮/৪ ভবনের এ/২ ফ্ল্যাটে অভিযান চালানো হয়। এ সময় সেখান থেকে নোমান সিদ্দীকিকে গ্রেফতার করা হয়। তার বাসা ও দেহ তল্লাশি করে ৪টি মোবাইল ফোন সেট ও একটি ডিজিটাল ডিভাইস উদ্ধার করা হয়। পরে সেখান থেকে ৬ পাতা অডিটর নিয়োগ পরীক্ষার পার্ট-১-এর এমসিকিউ প্রশ্নপত্রের ফটোকপি পাওয়া যায়।
প্রশ্নফাঁসের টাকায় ঢাকায় ও তার গ্রামের বাড়িতে অঢেল সম্পত্তির মালিক বনে যান নোমান।
ডিবি সূত্র জানায়, নোমান সিদ্দীকির বাসায় অভিযান শেষে পুলিশ অডিটর পদের পরীক্ষাকেন্দ্র বিজি প্রেস স্কুলে অভিযান চালায়। সেখান থেকে ভাইস চেয়ারম্যান রূপাকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের মেসেঞ্জার থেকে হিরণ খান নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে কথোপকথনের প্রমাণ পাওয়া যায়। সেখানে প্রশ্নফাঁস নিয়ে তাদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা হয়। এমনকি ফাঁস হওয়া প্রশ্নের কিছু উত্তরও পাওয়া যায়।
রূপার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, রমনা থানাধীন ৫৫/১ নিউ শাহীন হোটেলের ২৪ নম্বর রুমে অভিযান চালায় ডিবি। সেখান থেকে মো. আল আমীন আজাদ রনি, মো. রাকিবুল হাসান, মো. হাসিবুল হাসান ও নাহিদ হাসানকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে অত্যাধুনিক ডিভাইস উদ্ধার করা হয়। ওই ডিভাইসের মাধ্যমে পরীক্ষাকেন্দ্রে পরীক্ষার্থীদের কাছে ফাঁস হওয়া প্রশ্নের সমাধান পাঠানো হচ্ছিল।
নোমান ১৯৯৮ সালে সেনাবাহিনীতে সাধারণ সৈনিক হিসেবে যোগদান করেন। ২০১৪ সালে তিনি স্বেচ্ছায় অবসর নেওয়ার পর প্রশ্নফাঁসে জড়িয়ে পড়েন।
২০০৭ সালে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলা শহরের ওয়াবদা (বিদ্যুৎ) কর্মকর্তা শাহাব উদ্দিনের মেয়ে সাফিয়া সুলতানা স্বর্নাকে বিয়ে করেন। স্ত্রী সাফিয়া সুলতানা স্বর্না ঢাকার মিরপুরে শিক্ষা অধিদপ্তরে চাকরি করতেন। তিনিও চাকরি ছেড়ে দেন। বিয়ের পর থেকে পরিবারের কারো সাথে তার সম্পর্ক ছিল না। স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে ঢাকায় বসবাস করতেন।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রশ্নফাঁস চক্রের মূল মাস্টারমাইন্ড নোমান। অন্যতম হোতা ড্রাইভার আবেদ আলী ও পিএসসি’র অফিস সহায়ক সাজেদুল। আবেদ আলী প্রশ্নফাঁসের মাধ্যমে যে টাকা উপার্জন করতেন- সেটি বিভিন্ন ব্যবসায় লগ্নি করে ফেলেন। টাকার পাহাড় গড়েছেন নোমান ও সাজেদুলও। কিন্তু তারা জিজ্ঞাসাবাদে নিজেদের সম্পদের পূর্ণাঙ্গ হিসাব দেননি।
বাংলাদেশকে ১ বিলিয়ন ডলার আর্থিক সহায়তার ঘোষণা চীনা প্রধানমন্ত্রীর
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।