২০২৫ আফ্রিকা কাপ অব নেশন্সে জায়গা না পেয়ে যে ব্যর্থতায় ঘানা স্তব্ধ হয়ে পড়েছিল, সেই আঘাত ভুলে তারা অবশেষে ফুটবল বিশ্বের মঞ্চে ফিরেছে দুর্দান্তভাবে। রবিবার রাতে কমোরোসের বিপক্ষে ১-০ গোলের জয়ে বিশ্বকাপের টিকিট কাটে ঘানা। ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে টটেনহ্যামের ফরোয়ার্ড মোহাম্মদ কুদুসের একমাত্র গোলে জয় নিশ্চিত করে ‘ব্ল্যাক র্স্টার্সরা’। এর আগে আলজেরিয়া, মিসর, মরক্কো তিউনিসিয়ার পর পঞ্চম আফ্রিকান দেশ হিসেবে ২০২৬ বিশ্বকাপ নিশ্চিত হলো ঘানার।
ঘানার রাজধানী আক্রায় এই জয়ে গ্রুপ ‘আই’ থেকে ১০ ম্যাচে ২৫ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে থেকে কোয়ালিফায়ার শেষ করল ঘানা। দ্বিতীয় স্থানে থাকা মাদাগাস্কার থেকে ছয় পয়েন্ট বেশি তাদের। আর ১০ ম্যাচে ১৫ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট টেবিলের চারে কমোরোস।
এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো-কানাডা বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করা দেশের সংখ্যা হলো ২১টি। ৪৮ দলের বিশ্বকাপে এখনো বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের টুর্নামেন্টে জায়গা পাওয়ার অপেক্ষায় আছে ২৭টি দেশ।
প্রথমার্ধে অনেকটা নিষ্প্রাণ ফুটবল খেলে ঘানা। আগের নয়টি ম্যাচে ২২টি গোল করলেও এদিন কমোরোসের গোলরক্ষককে তেমন একটা পরীক্ষার মুখে ফেলতে পারেনি ওটো অ্যাডোর দল। তবে বিরতির পরই বদলে যায় দৃশ্যপট। থমাস পার্টের পাস থেকে কাছ থেকে সহজ ফিনিশে কুদুস গোল করে দলকে এগিয়ে দেন। এটি ছিল তাঁর বাছাই পর্বের দ্বিতীয় গোল।
আগের দুইবারের দেখাতেই ঘানাকে হারিয়েছিল কমোরোস। ২০২২ আফ্রিকান নেশন্স কাপে কুদুসের দলকে হারায় তারা। এরপর বিশ্বকাপ বাছাইয়ের প্রথম রাউন্ডেও ঘানার মাটিতে ১-০ গোলে জিতেছিলো কমোরোস। তবে এবার সবশেষ দুই হারের শোধ তুলল ঘানা।
২০২৪ সালের নভেম্বরে আফ্রিকা কাপের ফাইনাল পর্বে জায়গা না পাওয়ায় দেশজুড়ে হতাশা ছড়িয়ে পড়ে—২০০৪ সালের পর এমন ব্যর্থতা আর দেখেনি ঘানা। তখন কোচ অটো অ্যাডোর পদত্যাগ দাবি ওঠে নানা মহল থেকে। কিন্তু দৃঢ়চেতা অ্যাডো জানিয়ে দেন, “আমি এমন মানুষ নই যে ব্যর্থতায় হাল ছেড়ে দিই। যদি এমন করতাম, তাহলে কখনো ফুটবলার বা কোচ হতে পারতাম না,”—বলেন তিনি। “যে পথ পেরিয়ে আমি এখানে পৌঁছেছি, তা জানলে কেউ পদত্যাগের কথা বলত না।”
প্রথম মেয়াদে কাতার বিশ্বকাপ ২০২২–এ দলকে তোলার পর দ্বিতীয় মেয়াদেও নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছেন অ্যাডো। নতুন কোচিং স্টাফের সহায়তায় তিনি দলকে ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করেছেন। ১০ ম্যাচে ২৫ পয়েন্ট নিয়ে ‘গ্রুপ আই’-এ শীর্ষে থেকে ঘানা এবারও জায়গা করে নিয়েছে ফুটবলের মহাযজ্ঞে।
শেষ দিন পর্যন্ত মাদাগাস্কার লড়াই চালিয়ে গেলেও কোমোরোসের বিপক্ষে মোহাম্মদ কুদুসের গোলই ঘানার বিশ্বকাপ নিশ্চিত করে দেয়। এই অভিযানে সবচেয়ে আলোচিত নাম ছিলেন জর্ডান আয়ু—পুরো বাছাই পর্বে সাত গোল করে তিনি হয়ে উঠেছেন দলের ভরসা।
ফিফা বিশ্বকাপ ২০২৬ হবে ঘানার পঞ্চম উপস্থিতি বিশ্ব মঞ্চে। ২০০৬ সালে জার্মানিতে অভিষেকের পর দলটি সর্বোচ্চ সাফল্য পায় দক্ষিণ আফ্রিকা ২০১০–এ, যখন মিলোভান রাজেভাচের কোচিংয়ে তারা পৌঁছে যায় কোয়ার্টার ফাইনালে।
সেই টুর্নামেন্টে আসামোয়া গিয়ান ছিলেন অনুপ্রেরণার প্রতীক। শেষ ষোলোয় যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে অতিরিক্ত সময়ে তার দুর্দান্ত গোল ঘানাকে পাঠায় কোয়ার্টারে, যেখানে উরুগুয়ের বিপক্ষে নাটকীয় সেই ম্যাচ এখনো ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম স্মরণীয় অধ্যায়।
সূত্র: ফিফা
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।