আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ-এর ডেপুটি ডিরেক্টর ডেভিড কোহেন বলেছেন, ২০২৭ সালের মধ্যেই তাইওয়ান দখল করতে চায় চীন। তিনি বলেন, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং তার সেনাবাহিনীকে এমনভাবে প্রস্তুত করছেন যাতে ২০২৭ সালের আগেই তাইওয়ান দখলে নেওয়া যায়।
যদিও কোহেন বিশ্বাস করেন যে, চীন এখনো দুই দেশের শান্তিপূর্ণ একত্রীকরণের আশা করে। তবে একান্তই সেটি সম্ভব না হলে শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে তাইওয়ানকে চীনের সঙ্গে যুক্ত করা হবে। লিলিস কোহেনের এই বক্তব্য প্রথম প্রকাশ করেন সিএনএন-এর সাংবাদিক ক্যাটি বো। তাকে কোহেন বলেন, শি জিনপিং এখনো তাইওয়ান আক্রমণের বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেননি। তবে তিনি তার সামরিক বাহিনীকে সেভাবেই প্রস্তুত করছেন। ভবিষ্যতে গোয়েন্দা তথ্যের ওপরে ভিত্তি করে এ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বেইজিং প্রকাশ্যে জানিয়ে আসছে যে, তারা শান্তিপূর্ণভাবেই তাইওয়ানকে মেইনল্যান্ডের সঙ্গে যুক্ত করতে চায়। চীন এ জন্য প্রয়োজনে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বললেও আলাদা করে সামরিক শক্তি প্রয়োগের বিষয়টি বলেনি। তবে তাইওয়ান চীনের ‘এক দেশ, দুই নীতি’ নিয়ম প্রত্যাখ্যান করেছে। ১৯৪৯ সাল থেকেই চীন থেকে আলাদাভাবে পরিচালিত হচ্ছে তাইওয়ান। চীনা গৃহযুদ্ধে কমিউনিস্টদের কাছে হেরে গণতন্ত্রপন্থিরা এই দ্বীপে আশ্রয় নিয়েছিল। এরপর থেকে এখানে স্বাধীনভাবেই দেশ পরিচালনা করে আসছে তারা। তবে চীন এখনো তাইওয়ানকে নিজের অংশ মনে করে। তাইওয়ানকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে চীনের দ্বন্দ্ব লেগেই থাকে।
চীনের হুমকি ধামকি উপেক্ষা করে তাইওয়ানে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির সফরের পর স্বশাসিত দ্বীপটিকে ঘিরে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক নানান ইস্যুতে ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের মধ্যে এমনিতেই টানাপোড়েন চলছিল। পেলোসির সফর তা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। বেইজিং-তাইপে বিরোধের কেন্দ্রে অবস্থান করছে তাইওয়ান নিয়ে চীন সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি।
তাইওয়ান-চীনের সম্পর্ক : ১৯৮০-র দিকে তাইওয়ান চীনে ভ্রমণ ও বিনিয়োগের নিয়মকানুন শিথিল করলে দুই পক্ষের সম্পর্ক ভালো হতে শুরু করে। ১৯৯১ সালে স্বশাসিত দ্বীপটি জানায়, বেইজিংয়ের গণপ্রজাতন্ত্রী চীন সরকারের সঙ্গে তাদের যুদ্ধ শেষ হয়েছে। চীন তখন তাইওয়ানকে ‘এক দেশ, দুই ব্যবস্থার’ আওতায় একত্রিত হওয়ার প্রস্তাব দেয়, যে প্রস্তাব অনুযায়ী ১৯৯৭ সালে হংকংও মূল ভূখন্ডের সঙ্গে একত্রিত হয়। তবে তাইওয়ান ওই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। বেইজিংও তাইওয়ানের চীন প্রজাতন্ত্র সরকারকে অবৈধ বলতে থাকে। তার মধ্যেই দুইপক্ষ অনানুষ্ঠানিকভাবে সীমিত পর্যায়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছিল। স্বাধীনতার পক্ষে প্রকাশ্যে অবস্থান নেওয়া ডেমোক্রেটিক প্রোগ্রেসিভ পার্টির (ডিপিপি) চেন শুই-বিয়ান ২০০০ সালে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে বেইজিংয়ের চোখ কপালে উঠে যায়।
২০০৪ সালে চেন দ্বিতীয় মেয়াদে দ্বীপটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে পরের বছর চীন বিচ্ছিন্নতা-বিরোধী আইন পাস করে, যাতে তাইওয়ান চীন থেকে ‘বিচ্ছিন্ন’ হওয়ার চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে ‘শান্তিপূর্ণ নয় এমন পন্থা’ অবলম্বনেও বেইজিংকে অধিকার দেওয়া হয়। ২০০৮ সালে কুওমিনতাংয়ের মা ইং-জেওউ প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর তিনি নানান অর্থনৈতিক চুক্তি করে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো করার চেষ্টা করেন। আট বছর পর স্বাধীনতাপন্থি ডিপিপির সাই ইং-ওয়েন প্রেসিডেন্ট হলে পরিস্থিতি ফের বদলে যায়। ২০১৮ সালে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন কোম্পানির ওপর বেইজিং চাপের মাত্রা বাড়িয়ে দিলে দুই পক্ষের বিবাদ আরও বেড়ে যায়। সেসময় বেইজিং কোম্পানিগুলোকে তাদের ওয়েবসাইটে তাইওয়ানকে চীনের অংশ হিসেবে না দেখালে কালো তালিকাভুক্ত করার হুমকি দেয়। ২০২০ সালে সাই রেকর্ড পরিমাণ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় দফায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। এরপর যত দিন যাচ্ছে, দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনাও বাড়ছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।