২৫০-৩৫০ ওষুধের দাম নির্ধারণ করে দেয়ার চিন্তা

জুমবাংলা ডেস্ক : আড়াইশো থেকে সাড়ে তিনশো ওষুধের দাম নির্ধারণ করে দেয়ার চিন্তা করছে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর। এই পরিমাণ ওষুধ বাংলাদেশ ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের ‘এসেনশিয়াল’ ড্রাগের (ওষুধ) তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। বর্তমানে এসেনশিয়াল ড্রাগসের তালিকায় ১১৭টি ওষুধ আছে। এই ১১৭টির মধ্যে ৩০টি ওষুধ বাজারে পাওয়া যায় না। কিন্তু যে ক’টি এসেনশিয়াল ড্রাগ তালিকার ওষুধ বাজারে রয়েছে এগুলোর দাম খুবই কম। সব শ্রেণির মানুষ সহজেই কিনতে পারে। ১১৭টি থেকে এ ধরনের ওষুধের তালিকা বাড়ানো হলে দরিদ্র জনগণকে ওষুধ কিনতে সম্পদ বিক্রি করার প্রয়োজন হবে না। ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর এসেনশিয়াল ড্রাগসের তালিকার ওষুধ বৃদ্ধি করলে বাংলাদেশের জন্য এসডিজি অর্জন সহজ হবে বলে মনে করেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।নয়াদিগন্ত

ওষুধবাংলাদেশ ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো: মাহবুবুর রহমান বলেন, দেশের মানুষের স্বার্থেই এসেনশিয়াল ড্রাগসের তালিকা বৃদ্ধি করার চিন্তা করছি। বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প বিকাশে সরকার সম্ভব সব ধরনের চেষ্টা করে যাচ্ছে। ওষুধ শিল্প মালিকেরাও অতি প্রয়োজনীয় ওষুধের তালিকা বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনা করবেন বলে আশা করছি। মেজর জেনারেল মাহবুব জানান, ইতোমধ্যে এসেনশিয়াল ড্রাগসের দামও কিছুটা কমানো হয়েছে। তবে তা ওষুধ শিল্প মালিকেরা কমাচ্ছেন ধীরে ধীরে।

মহাপরিচালক বলেন, বাংলাদেশে দাম বাড়ার অনুমোদন দিলে অথবা কোনো কিছুর দাম বাড়ানোর প্রয়োজন হলে খুব দ্রুততার সাথে বাড়ানো হয় কিন্তু কমাতে বলা হলে তা বাড়ানোর গতিতে কমানো হয় না, এটা দু:খজনক।

এসেনশিয়াল ড্রাগ তালিকা বৃদ্ধি প্রসঙ্গে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক মোজাহেরুল হক বলেন, ওষুধ প্রশাসন প্রয়োজনীয় এসব ওষুধের তালিকা বৃদ্ধি করতে পারলে তা বাংলাদেশের জন্য ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। ২০৩০ সালের মধ্যে সরকারকে সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা অর্জন করতে হবে। এ সময়ের মধ্যে সকলের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় চিকিৎসায় জনগণের সুবিধা বৃদ্ধি করতে হবে এবং মানুষের নিজের পকেট থেকে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ব্যয় এখনকার ৬৭ ডলার থেকে কমিয়ে ৩২ ডলারে নামিয়ে আনতে হবে। মানুষের জন্য অতি প্রয়োজনীয় ওষুধ কম দামে সরবরাহ করে ওষুধ কোম্পানিগুলোও সরকারকে সহায়তা করতে পারে।

অধ্যাপক মোজাহেরুল হক বলেন, জনগণের প্রতি তাদের দায় শোধ করারও এটা একটা উপায় হতে পারে এটা। এ কাজটা করতে পারলে ওষুধ প্রশাসন জনগণের প্রশংসা অর্জন করতে পারবে বলে মনে করি।

একটি সমীক্ষায় বলা হয়েছে, চিকিৎসায় ব্যয় করে প্রতি বছর বাংলাদেশের প্রায় ৫০ লাখ মানুষ দরিদ্র হয়ে যায়। এই ব্যয়ের মধ্যে অনেক দামী দামী ওষুধও রয়েছে। ওষুধ কেনায় ব্যয় ছাড়াও স্বাস্থ্য পরীক্ষায় ও অস্ত্রোপচারে প্রচুর ব্যয় থাকে মানুষের।

ঘষামাজা করে ওষুধের দাম বাড়ানো প্রসঙ্গে ওষুধ প্রশাসনের মহাপরিচালক বলেন, এটা কিছুতেই করা যাবে না। ঘষামাজা করে দাম বাড়ানোকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয় ওষুধ প্রশাসন থেকে। তবে তিনি বলেন, আমরা পরীক্ষা করে দেখেছি এটা বেশির ভাগই খুচরা ওষুধ ব্যবসায়ীরা করে থাকে।

ওষুধ দাম বাড়ানো প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, ইতোমধ্যে ছয়টি ওষুধের দাম বেড়েছে এবং ৪৯টি ওষুধের দাম সমন্বয় (অ্যাডজাস্ট) করা হয়েছে। এসেনশিয়াল তালিকা ছাড়া অন্য ওষুধের দাম বাড়ানো হলে তা ওষুধ প্রশাসন থেকে অনুমোদন নিয়েই করে। কিন্তু এখানে ওষুধ প্রশাসনের খুব বেশি করার থাকে না। তবে ওষুধ প্রশাসন না বাড়ানোর জন্য সব ধরনের পরারর্শ দিয়ে থাকে। অনেক সময় দেরি করেও অনুমোদন দিয়ে থাকে।

ওষুধ প্রশাসের মহাপরিচালক সাম্প্রতিক সময়ে রেনিটিডিন নিষিদ্ধের ব্যাপারে বরেন, পেটে এসিড হ্রাস করার ওষুধ রেনিটিডিন (মূল ওষুধের নাম এটা। বিভিন্ন কোম্পানির বিভিন্ন নাম রয়েছে) নিষিদ্ধ করা হয়েছে কেবল ভারতের মি রেড্ডি ও সারাকা নামের দুইটা কোম্পানি থেকে যারা রেনিটিডিনের কাঁচামাল এনে ওষুধটি তৈরি করে কেবল তাদের ওষুধই নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অন্য কোম্পানি থেকে আনা কাঁচামালের রেনিটিডিনি নিষিদ্ধ করা হয়নি।

মেজর জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান শনিবার ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরে হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সদস্যদের সাথে ওষুধ বিষয়ে কথা বলছিলেন।

Write a Comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *