নিজেস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর : মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো দেশের জনগণকে ঘরে থাকার নির্দেশনার মধ্যে চরম বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ। রাস্তাঘাটে মানুষের চলাফেরা কমে যাওয়া এবং প্রায় সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটছে তাদের। তবে দৈনিক রোজগার না করলে যাদের পেটে ভাত জোটে না, তাদের আপদকালীন এ কষ্ট লাগবে এগিয়ে আসছেন সামর্থ্যবানরা।
তাদেরই একজন ডাঃ অসীম । রাজধানীর উত্তরার বিভিন্ন সড়কের ২৫ জন রিকশা চালককে আপদকালীন সময়ে সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিলেন জাতীয় অর্থোপেটিক (পঙ্গু) হাসপতালের চিকিৎসক অসীম কুমার।২৫ জনের প্রত্যেককে ৫ কেজি চাল, ৩ কেজি আলু, ১ লিটার তৈল, ১ কেজি ডাল, ১ কেজি লবন, ১ কেজি পিঁয়াজ ও ২টা সাবান দেওয়া হয়।
ডাঃ অসীম ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়ে জানান, আমি নিজেকে দিনমুজুর বা ডে লেবার পরিচয় অনেককে বলে থাকি, আসলেই তাই, প্রাইভেট প্রাকটিসে বা চেম্বারে গেলে কিছু টাকা ইনকাম হয়, না গেলে কোনো ইনকাম হয়না। বৃষ্টি, ঝড় বাদল, দুর্যোগে অনেক সময় ইনকাম হয়না বললেই চলে। যদিও সরকারি চাকুরী করি বিধায় মাস শেষে একটা বেতন পাই। এটাই তফাৎ আরকি ডে লেবারদের সাথে আর বাকি সব মিল আছে। কাজ করলে ইনকাম না করলে নাই।
আজকে কয়দিন ধরে করোনা ভাইরাসের কারনে রাস্তায় মানুষজন কমে গেছে। যারা দিনের কাজ করে ইনকাম করে তাদের ইনকাম অনেক কমে গেছে। আজকে রিকশায় যেতে যেতে রিকশাওয়ালা বলল সারাদিনে ইনকাম একশত টাকার কম। সামনে করোনার কারনে আরো ফাঁকা হয়ে যাবে সব কিছু। মানুষজন বের হবেনা, এইসব রিকসাওয়ালা, দিনমজুরাও বন্দি হয়ে যাবে ঘরে। ভাবতেই মনটা কেমন করে উঠল। আমি না হয় হসপিটালে চিকিৎসা দিলাম অসুস্থ মানুষদের কিন্তু খাদ্য যোগান কষ্ট হয়ে যাবে ওদের। ওদের মধ্যে কিছু মানুষের পাশে যদি থাকা যায় তাহলে কিছুদিন তো ওরা খেতে পারবে। এমন সময় ফেসবুকে দেখতে পাই আমার এক স্যার ডাঃ নুরুল হাসান ৫/৭ জন রিকশাওয়ালাকে চাল, ডাল, আলু দিয়ে সাহায্য করছেন। এটা দেখে আমার মধ্যেও এরকম একটা করার ইচ্ছা হলো। তাই একটা ব্যাগে দশ কেজি চাল, দুই কেজি ডাল, আলু, লবন, সাবান দিয়ে দশটা প্যাকেট করে দশজন দিনমুজুর বা ডে লেবারদের কে দেয়া হলো। ভালো থাকুক তারা কিছুদিন।
তিনি আরো লিখেছেন, বিঃ দ্রঃ আমি লোক দেখানোর জন্য এটা করেনি বা বলেনি, আমি আরেকজনের কাছ থেকে উৎসাহ পেয়ে এই কাজটা করলাম। অনেকে আরো অনেক বড় বড় কাজ করে যাচ্ছেন গরিব দুঃখীদের জন্য। একজন যদি একজনের পাশে দাঁড়ায় তাহলেই সবার পাশে সবার দাঁড়ানো হয়ে যাবে। আবারো বলছি এই সময় পার হয়ে যাবে। প্রকৃতি কাউকেই নিরাশ করেনা। প্রকতির নিজস্ব একটা বিচার আছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডাঃ অসীমের এক বন্ধু জুমবাংলাকে বলেন, ছোট বেলা থেকেই অসীম একজন মানবিক মানুষ। স্কুলে পড়া অবস্থায় নিজের পকেটের টাকায় গরীব বন্ধুদের টিফিন করাতেন। আর এখনো সে পরিপূর্ণ মানুষ। এখন আরো বেশি মানবিক। নিজ বাড়ী গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার একটি প্রাইভেট হাসপাতালে সে প্রতি শুক্রবার বসে। আমি দেখেছি অসহায়, গরীব ও দুঃস্থ রোগীদের বিনা ভিজিটে দেখে দেয় সে। এমনকি নিজের মানিব্যাগ থেকে টাকা দিয়ে ওই রোগীর বাড়ি যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। ও আমার বন্ধু এ জন্য সব সময়ই গর্ববোধ করি।
ডাঃ অসীম জুমবাংলাকে বলেন, ‘শতাব্দীর এই দুর্যোগে সবাইকে এগিয়ে আসা উচিত। এজন্য আমি রিকশাচালকদের জন্য সামান্য ব্যবস্থা করেছি। তবে আশা করছি এটার পরিধি আরও বাড়াব।’
তিনি আরও বলেন, আমি সমাজের বিত্তবানদের আহ্বান জানাব, সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে এই কাজে এগিয়ে আসতে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।