জুমবাংলা ডেস্ক : কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে ধর্ষণের শিকার সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা কিশোরীকে চিকিৎসার কথা বলে গর্ভপাত করানো হয়েছে। এরপর উল্টো মিমাংসার কথা বলে কিশোরীর বাবার কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকা নিয়ে এলাকার ছাড়ার নির্দেশ দেন স্থানীয় মাতবররা। পরে গভীর রাতে জোর করে গরু বিক্রি করে টাকাও আদায় করা হয়েছে। এখানেই শেষ নয় পরিবারটিকে এলাকা ছাড়ার হুমকি দিলে অসুস্থ কিশোরী ও তার বাবা পালিয়ে আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নেন। পরে থানায় মামলার পর অভিযুক্ত যুবকের বাবা ও মাকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ। উপজেলার রায়গঞ্জ ইউনিয়নের পশ্চিম সাপখাওয়া সরকারটারী এলাকায় ঘটনাটি ঘটে।
জানা গেছে, সরকারটারী এলাকার ওই কিশোরীকে দীর্ঘদিন ধরে প্রেম নিবেদন করে আসছিলেন পার্শবর্তী ব্যাপারীটারী এলাকার মজিবর রহমানের ছেলে এক সন্তানের জনক পেশায় রাজমিস্ত্রি বাবু মিয়া। এতে রাজী না হলে এক পর্যায়ে জোর করে কিশোরীকে ধর্ষণ করেন। এরপর বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করেন। এতে ওই কিশোরী সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে বাবু মিয়াকে বিয়ের জন্য চাপ দিলে তিনি নানাভাবে তালবাহানা করতে থাকেন। একপর্যায়ে গত ১৪ আগস্ট চিকিৎসক দেখানোর কথা বলে নাগেশ্বরী উপজেলা শহরে নিয়ে গিয়ে ওষুধ খাওয়ানোর পর রাতে বাড়িতে এসে অসুস্থ হয়ে পড়ে ওই কিশোরী। পরদিন সে মৃত ছেলে সন্তান প্রসব করে। এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। পরে কিশোরীকে পরিবারসহ উচ্ছেদ করার হুমকি এবং অভিযুক্ত ছেলেকে ধরে এনে মিমাংসা করে দেয়ার কথা বলে কিশোরীর বাবার কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা দাবি করেন কয়েকজন মাতবর। পরে রাতে এলাকার খয়বর আলী, আব্দুর রহীম, আব্দুল খালেক ও শাহানুর আলমসহ পাঁচজন গিয়ে চাপ দিয়ে নিজেরাই ক্রেতা ডেকে এনে গরু বিক্রি করে ২৫ হাজার টাকা নেন। এর ঘণ্টাখানেক পর এসে তাদের সবাইকে পুলিশের ভয় দেখিয়ে বাড়ি ছাড়তে বললে অসুস্থ অবস্থায় কিশোরী ও তার বাবা আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেন।
পুলিশ জানায়, রোববার সন্ধ্যায় নাগেশ্বরী থানায় নির্যাযিতা কিশোরী বাদী হয়ে বাবু মিয়া, তার মা-বাবাসহ সাতজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করে। পরে রাতেই অভিযান চালিয়ে বাবু মিয়ার বাবা মজিবর রহমান ও মা জাহানারা বেগমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সোমবার তাদের জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। ঘটনার পর থেকে বাবুসহ অন্য আসামিরা পলাতক রয়েছে।
এদিকে রোববার সন্ধ্যায় অসুস্থ কিশোরীকে নাগেশ্বরী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। এরপর সোমবার সকালে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে পাঠিয়েছেন চিকিৎসক। ঘটনার ২ দিন পর মৃত নবজাতকের ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানায় পুলিশ।
নাগেশ্বরী থানার ওসি রওশন কবীর বলেন, কিশোরী বাদী হয়ে মামলা করার পর অভিযুক্ত বাবুর বাবা ও মাকে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ সুপার নির্দেশ দিয়েছেন সকল আসামিকে দ্রুত গ্রেপ্তার করতে হবে। আমরা সেই চেষ্টা করছি।
অন্যদিকে নির্যাতিত ওই কিশোরীর বাবার কাছ থেকে টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করে মাতবর খয়বর আলী ও আব্দুর রহিম বলেন, ওই কিশোরীর পরিবার বাড়ি ভেঙে অন্যত্র যাওয়ার কথা হয়েছে। এজন্য গরু বিক্রি করে পাওনাদারদের টাকা দেওয়া হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।