জুমবাংলা ডেস্ক: আগামী ২৭ জুলাই ঢাকায় শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। শনিবার (২২ জুলাই) বিকালে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তারুণ্যের সমাবেশে এ ঘোষণা দেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সরকারের পদত্যাগ, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, খালেদা জিয়াসহ সকল রাজবন্দিদের মুক্তিসহ যুগপৎভাবে এক দফা দাবিতে পরবর্তী এই কর্মসূচি পালন করা হবে বলে জানান তিনি।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, আমরা একটা পরিবর্তনের জন্য তরুণদের জাগ্রত করছি। আজকের আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার পর রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকাকালে একদলীয় বাকশাল কায়েম করেছিল। আজও তারা আমাদের ঘাড়ে চেপে বসেছে।
তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে ধন্যবাদ জানাই, যিনি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে আজীবন লড়াই-সংগ্রাম করে চলেছেন। অথচ আজ তিনি কারাগারে বন্দি। তার আপসহীন নেতৃত্বে স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের পতন ঘটানো হয়েছিল। দেশ যখনই সংকটে পড়ে তখনই শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান এগিয়ে আসেন। আজকে তারেক রহমান গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
বিএনপির এই নেতা বলেন, তারুণ্যের সমাবেশের মাধ্যমে আমাদের আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। একাত্তরে যেভাবে তরুণ যুবক সবাই ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম। আজ তারা ঐক্যবদ্ধভাবে জেগে উঠেছে।
ফখরুল বলেন, বর্তমান সরকার বৈধ নয়। তারা সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতায় বসে আছে। আর বড় বড় কথা বলে, তারা ক্ষমতায় আসলেই নাকি উন্নয়ন হয়। ২০১৪ সালে বিনাভোটে এমপি ঘোষণা করেছে। তাহলে তারা কী বৈধ? এই আওয়ামী লীগ বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন ব্যবস্থা বাতিল করে দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচনের ব্যবস্থা বহাল রেখেছে। কারণ তারা জানেন নিরপেক্ষ নির্বাচনে জয়ী হতে পারবে না।
মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকার অলিখিত একদলীয় শাসন বাকশাল চালু করেছে। তারা দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রবিরোধী। তারা মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে। মাথায় হিজাব বেঁধে আর হাতে তসবিহ নিয়ে বলেছিল ১০ টাকা কেজি চাল খাওয়াবেন, ঘরে ঘরে চাকরি দিবেন এবং কৃষকদের বিনামূল্যে সার দিবেন। আজকে ঘরে ঘরে চাকরি নেই। টাকা ছাড়া চাকরি হয় না। বিসিএস পাস করলেও ভিন্নমতের কারণে চাকরি হয় না।
তিনি বলেন, সর্বশেষ ঢাকা-১৭ আসনে নতুন মডেলের নির্বাচন দেখলাম। হিরো আলম বড় আশা নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগ কাউকে সহ্য করতে পারে না। ওরা দেশকে নিজেদের তালুকদারি মনে করে। অথচ দেশের সমস্ত মানুষ মিলে দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছিলেন।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, আর সময় নেই। এখন আমাদের অধিকার আদায় করার সময়। আমরা নির্বাচন চাই, তবে সেটা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। তোমাদের অধীনে নয়। কিন্তু বিএনপি যাতে নির্বাচনে যেতে না পারে তারা মিথ্যা মামলা দিচ্ছে। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ২৪টি, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ৮৬টি মামলা। অনেকের বিরুদ্ধে সাড়ে ৩০০ পর্যন্ত মামলা আছে। এখন আবারও গায়েবি মামলা দিচ্ছে। সাত মাসে ৫০টি গায়েবি মামলা দিয়েছে। এগুলো কিসের আলামত? ওদিকে বিদেশিদের বলছে তারা সুষ্ঠু নির্বাচন করবেন।
তিনি বলেন, তারা এখনো নেতাকর্মীদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে। র্যাবের স্যাংশনের পরও তারা এসব কাজ করছে। তারা নির্বাচনে ভোট কাটতে নিজেদের মতো প্রশাসন সাজাচ্ছে। আসলে ভয় পেয়ে এসব করছে। তবে কোনোভাবেই দেশে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচন হবে না। এবার সব রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধ হয়েছে।
তারুণ্যের সমাবেশে এ সময় বেগম খালেদা জিয়া, বিএনপি নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিব, রফিকুল আলম মজনু, সাইফুল ইসলাম নিরব, শেখ রবিউল আলম রবি, আব্দুল মোনায়েম মুন্না, ইউসুফ বিন জলিল কালু, এস এম জাহাঙ্গীর, মিয়া নূরুদ্দিন অপু, গোলাম মাওলা শাহীন, জয়নাল হোসেনসহ কারাবন্দি সব নেতাকর্মীর মুক্তি দাবি করেন মির্জা ফখরুল।
তারুণ্যের সমাবেশ পরিচালনা করেন যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল।
ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠাসহ ১১ দফা দাবিতে রাজধানীর ঢাকার এই সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হচ্ছে তারুণ্যের সমাবেশ’। রাজধানী ঢাকার এই তারুণ্যের সমাবেশের আগে এরইমধ্যে দেশের পাঁচটি বড় শহরে সমাবেশ করে।
নতুন ভোটার আর তরুণদের কাছে টানতে জুন মাসের প্রথম দিকে বিএনপি ‘তারুণ্য সমাবেশে’র ঘোষণা দেয়। দলটির অঙ্গসংগঠন যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের সমন্বয়ে এই সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে দলটির নীতি-নির্ধারণী ফোরাম। সংগঠন তিনটির পক্ষ থেকে পরে দিনক্ষণ ও তারিখ ঘোষণা করা হয়। ওই ঘোষণা অনুযায়ী ১৪ জুন চট্টগ্রাম, ১৯ জুন বগুড়া, ২৪ জুন বরিশাল, ৯ জুলাই সিলেট ও ১৭ জুলাই খুলনায় তারুণ্যের সমাবেশ করেছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।