জুমবাংলা ডেস্ক: গত তিনদিন কক্সবাজারে পর্যটক সমাগম বেড়েছে। বৃহস্পতিবার (২২ ডিসেম্বর) রাত থেকে শনিবার (২৫ ডিসেম্বর) রাত পর্যন্ত পর্যটন সেবা সংশ্লিষ্ট সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে প্রায় আড়াশ’ কোটি টাকার বাণিজ্য হয়েছে বলে দাবি করেছে কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির কর্তৃপক্ষ।
ব্যবসায়ীদের মতে, করোনা দুর্যোগের পর চালু হওয়া পর্যটন ব্যবসা গত মৌসুম হতেই মন্দা যাচ্ছে। এর মাঝে চলতি বছর স্মরণকালের সবচেয়ে বাজে সময় কাটছে পর্যটনে। এবারে পর্যটন মৌসুম শুরুর পর পরই প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও মিয়ানমারের আভ্যন্তরীণ সংঘাত এবং নাব্যতা সংকটের দোহাই দিয়ে টেকনাফ ও সেন্টমার্টিন নৌরুটে জাহাজ চলাচল বন্ধ রয়েছে। কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিন নৌরুটে দুটি জাহাজ চলাচল করলেও তার ব্যয়ভার সাধারণের নাগালের বাইরে। ফলে, কক্সবাজার বেড়াতে এসে যারা সেন্টমার্টিনকে ভ্রমণ তালিকায় রাখেন তাদের অনেকে কক্সবাজার বেড়ানো স্থগিত রাখেন।
কক্সবাজার বেড়াতে এসে কিছুটা ডিসকাউন্ট পেয়ে অনেক পর্যটক কক্সবাজার থেকেই সেন্টমার্টিন দ্বীপ দেখতে গেছেন। তবে এদের অনেকের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে।
তাদের মতে, জাহাজেই সময় চলে গেছে সিংহভাগ। মাত্র ঘণ্টা খানেকের মতো সময় দ্বীপে অবস্থানের সুযোগ পেয়েছেন তারা। এটাকে সেন্টমার্টিন ভ্রমণ না বলে নৌ-বিহার বললেও ভুল হবে না।
ট্যুরস অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজার (টুয়াক) আনোয়ার মোস্তফা বলেন, আশা আলো দেখিয়েছে বড় দিনের ছুটি। সপ্তাহিক ছুটির এক হওয়া বড়দিনের ছুটির সুযোগকে কাজে লাগাতে ভ্রমণ প্রেমীরা কক্সবাজার এসেছেন। অনেকে আগাম বুকিং দিয়ে হোটেল-মোটেল ও কটেজ উঠেন। ব্যয়বহুল জেনেও অনেকে আগাম টিকেট কেটেছে কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিন নৌরুটে চলা কর্ণফুলী ও বার আউলিয়া জাহাজে। ফলে সেন্টমার্টিনেও এবারে আগাম কিছু বুকিং পেয়েছে সেখানকার হোটেল ব্যবসায়ীরা।
কক্সবাজার হোটেল-গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, টানা বন্ধে আমাদের আশা ছিল কক্সবাজারে পাঁচ লাখ পর্যটক আসবেন। কিন্তু তা হয়নি। এসেছে আড়ই লাখের মতো পর্যটক।
তারকা হোটেল হোয়াইট অর্কিডের জিএম রিয়াদ ইফতেখার বলেন, অতীতে পুরো ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে প্রতিদিনই কমবেশি পর্যটক কক্সবাজারে অবস্থান করতো। এবছর তার ব্যতিক্রম। এরপরও বড়দিন ও সপ্তাহিক ছুটি মিলে টানা তিন দিনে ছুটিতে শুক্র ও শনিবার কক্সবাজারে গড়ে একলাখ পর্যটক উপস্থিতি ছিল। কিন্তু রোববার তা কমে উপস্থিতি অর্ধলাখে এসে থামবে।
কক্সবাজার জেলা রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম ডালিম বলেন, সমিতির তালিকাভুক্ত শতাধিকসহ কক্সবাজার পর্যটন জোনে চার শতাধিক রেস্তোরাঁ বিদ্যমান। পর্যটক শূন্যতায় সবাই দুর্বিষহ দিন কাটিয়েছি। গত তিনদিন সকলে কমবেশি ব্যবসা করেছে।
কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী খোকা বলেন, পর্যটনে আয় হিসাব হয় জনপ্রতি খরচের ওপর। কক্সবাজারে বেড়াতে আসা পর্যটকরা সবধরনের সেবা নেওয়া গড়ে ১০ হাজার টাকা খরচ করেন। সেই হিসাবে তিন দিনে আড়াই লাখ পর্যন্ত পর্যটক উপস্থিতি থাকলে আড়াই কোটি টাকার ব্যবসা হয়েছে কক্সবাজারের পর্যটন সেক্টরে। এটি আশা জাগানিয়া। তবে, কক্সবাজারের চলমান পর্যটনে ধোঁয়াশা চলছে। এটা কাটাতে সরকারের উদ্যোগী হওয়া দরকার।
তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইস লিমিটেডের পরিচালক আবদুল কাদের মিশু বলেন, ব্যবসা ভালো থাকলে আমরা ব্যাংক ঋণের কিস্তিগুলো নির্দধায় পরিশোধ করতে পারি। তাই ঋণগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা জমজমাট বাণিজ্যিক সময় প্রত্যাশা সমসময়।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের পুলিশ সুপার মো. জিল্লুর রহমান বলেন, বাড়তি পর্যটক সমাগমেও অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ছাড়াই তিনদিনের টানা ছুটি শেষ করতে পেরেছি আমরা।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, পর্যটন নগরী হিসেবে কক্সবাজারে আগত সকলকে নিরাপদ রাখা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। আমরা সেভাবেই পর্যটক নিরাপত্তায় সবসময় সর্তকাবস্থায় রয়েছি।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. আবু সুফিয়ান বলেন, কক্সবাজারে আগত ভ্রমণপিপাসুদের সুবিধার্থে কলাতলী ডলফিন মোড়ে তথ্যসেবা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। পর্যটক হয়রানি বন্ধে মাঠে ছিল জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একাধিক টিম। পর্যটক হয়রানি রোধে আমরা সবসময় সজাগ, কারণ পর্যটকরা কক্সবাজারের লক্ষ্মী।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।