শওগাত আলী সাগর : ক্রিস্টিন জেসপ যখন হারিয়ে যায় তখন তার বয়স মাত্র ৯ বছর। সেটা ৩৬ বছর আগের কথা। প্রায় তিন মাস পর নববর্ষের আগ মুহূর্তে তাকে খুঁজে পাওয়া যায়, মৃতদেহে অসংখ্য ছুরিকাঘাতের ক্ষত। পরীক্ষায় নিশ্চিত হ্ওয়া যায় ৯ বছরের ক্রিস্টিন ধর্ষণের শিকার হয়েছিলো মৃত্যুর আগে।
পল মরিন নামে এক প্রতিবেশিকে গ্রেফতার করে পুলিশ, দুই দফায় তার বিচার হয় এবং তাকে জেলে পাঠানো হয়। ডিএনএ প্রযুক্তির অগ্রগতি ঘটলে ক্রিস্টিনের আন্ডারওয়্যার থেকে সেই সময়ে নমুনা হিসেবে সংগ্রহ করা সিমেনের পরীক্ষা করা হয়। কিন্তু সেটি মরিনের সঙ্গে মিলেনি। দুই বছর সাজা খাটার পর মরিনকে মুক্তি দেয় পুলিশ। শুধু তাই নয় ভুল বিচারে সাজা দেয়ার জন্য মরিনকে এক মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ দেয় সরকার। কিন্তু ৯ বছরের ক্রিস্টিনকে কে ধর্ষণ এবং খুন করেছে সেটি অজানাই রয়ে যায়।
গত পরশু টরন্টো পুলিশ ঘোষণা দিয়েছে – তারা ক্রিস্টিনের ধর্ষক এবং হত্যাকারীকে চিহ্নিত করতে পেরেছে। সে হচ্ছে আরেক প্রতিবেশী কালভিন হোভার। ৩৬ বছর আগের একটি ধর্ষণ এবং হত্যার ঘটনার সুরাহা এতো বছর পর কীভাবে করলো পুলিশ? উত্তর একটাই- ডিএনএ পরীক্ষা। সেই ঘটনাও চমৎকার।
ডিএন্এ এনালাইসিসের একটি নতুন ধরনের পরীক্ষা শুরু হয়েছে প্রতিবেশি যুক্তরাষ্ট্রে। কানাডা এখনো এই পরীক্ষাটা শুরু করেনি। ৩৬ বছর আগেকার সিমেন পরীক্ষা করে যুক্তরাষ্ট্রের ল্যাব থেকে যখন ‘নো ম্যাচ’ রিপোর্ট পাঠানো হয় তখন টরন্টো পুলিশ ‘জেনেটিক জিনিওলোজি’ এনালাইসিসের অনুরোধ জানায় যুক্তরাষ্ট্রকে। এই এনালাইসিসে যে ব্যক্তির সিমেনকে পরীক্ষার নমুনা হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে তার ‘ফ্যামিলি ট্রি’ অদোপান্ত ওঠে আসে। এই পরীক্ষায় দুটি পরিবারের সদস্যদের নাম আসে পুলিশের সামনে। তার মধ্যে একটি নাম পাওয়া যায় যে কিনা ৩৬ বছর আগে প্রথম তদন্তে পুলিশের ‘পার্সন অব ইন্টারেস্ট’ ছিলো, কিন্তু কোনোভাবে তদন্ত প্রক্রিয়া থেকে ফসকে গেছে। পরবর্তী এনালাইসিসে ল্যাব নিশ্চিত করে এই সিমেনের ম্যাচ হচ্ছে ক্যালভিন হোভার।
পুলিশের নতুন এই ঘোষণার পর কুইন্সভিলের সমাধিক্ষেত্রে ছুটে যান- পল মরিন। হলুদ ফুলের একটি তোড়া তার সমাধিতে রাখেন তিনি। ফুলের সেই তোড়াটার সাথে গাঁথা আছে কয়েকটি লাইনের ছোট্ট একটি নোট, ‘তোমার সাথে আমার কখনোই দেখা হয়নি। কিন্তু তোমাকে যারা জানতো এবং ভালোবাসতো তাদের আমি জানি। তোমার সুন্দর আত্মা এখন অন্তত শান্তিতে ঘুমাক’।
পুনশ্চ: ‘জেনেটিক জিনিওলোজি’- টার্মটা মাথার মধ্যে বেশ ঘুরপাক খাচ্ছে। ৩৬ বছর পর ধর্ষককে চিহ্নিত করে দিতে পেরেছে ডিএনএর এই পরীক্ষা। ভবিষ্যতে আরো কতো রহস্যের সমাধান করে দেবে এই পরীক্ষাটা! নিশ্চয় একদিন বিশ্বের সবদেশেই এই পরীক্ষার প্রযুক্তিটা ছড়িয়ে পড়বে! (ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।