জুমবাংলা ডেস্ক: অল্প পরিশ্রমে স্বল্প পুঁজিতে কম সময়েই অধিক লাভ হওয়ায় রাজবাড়ীতে দিন দিন বাড়ছে ড্রাগন ফলের চাষ। বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল হচ্ছেন জেলার ড্রাগন চাষীরা। বাংলানিউজের প্রতিবেদক কাজী আব্দুল কুদ্দুস-এর প্রতিবেদনে বিস্তারিত উঠে এসেছে।
কৃষিবিদরা বলছেন, নানা পুষ্টিগুনে সমৃদ্ধ ড্রাগন সব বয়সের মানুষের জন্য একটি আদর্শ ফল।
জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, রাজবাড়ীর ৫টি উপজেলায় বর্তমানে প্রায় ৫০ জন চাষী ৩ হেক্টর জমিতে করছেন ড্রাগন ফলের চাষ। চলতি মৌসুমে উৎপাদন হবে প্রায় ১০ টন ড্রাগন ফল, যা প্রায় ৩০ লাখ টাকায় বিক্রি হবে।
রাসায়নিক সার ও কিটনাশক ছাড়াই ড্রাগন ফল চাষ করা যায়। একটু পরিচর্যা করলেই ড্রাগন গাছে ফল আসে, তাই অনেক গৃহবধূ ও চাষীরা ড্রাগন ফলের চাষে দিন দিন আগ্রহী হয়ে উঠছে।
রাজবাড়ী জেলা সদরের রূপপুর গ্রামের ৬৫ বছর বয়সী কৃষক গফুর কাজী। ৭ বছর আগে ২০১৫ সালে কৃষি বিভাগে একটি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ড্রাগন ফল সম্পর্কে জানতে পারেন। তারপর ১০ শতাংশ জমিতে ড্রাগন চাষে একটি প্রদর্শনী বাগান শুরু করেন। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি গফুর কাজীকে। প্রথম বছরেই ৪০টি গাছে আসে ফল। পরের বছর দেড় লাখ টাকার ড্রাগন ফল বিক্রি করেন তিনি। এভাবেই অর্থনৈতিক ভাবে স্বচ্ছল হয়েছেন। এখন প্রতি বছর প্রায় দেড় থেকে ২ লাখ টাকার ড্রাগন ফল বিক্রি হয় তার।
কৃষক গফুর কাজী বলেন, আমি দীর্ঘদিন কৃষিকাজ করি। ধান, পাট, গম, পেঁয়াজ, রসুন, শাক-সবজিসহ সব ধরনের ফসলের আবাদ করেছি। ৭ বছর আগে কৃষি অফিস থেকে ১০ শতাংশ জমিতে ৪০টি চারা দিয়ে একটি প্রদর্শনী প্লট পাই। সেখান থেকেই ড্রাগন চাষ শুরু। প্রতিবছর প্রায় দেড় লাখ টাকার মতো ড্রাগন বিক্রি করছি। কৃষি কাজ করেই আমি বাড়ি তৈরি করেছি। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া শিখেয়েছি।
ড্রাগন ফল চাষ লাভজনক উল্লেখ করে কৃষাণী সাহেরা বেগম বলেন, আমরা স্বামী স্ত্রী দুইজনে মিলে এখন ড্রাগন বাগানে কাজ করি। বাজারের ফল ব্যবসায়ীরা বাড়ি এসে ড্রাগন কিনে নিয়ে যায়। প্রতি কেজি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা দরে দাম দেয়।
জেলা শহরের ১নং বেড়াডাঙ্গা সড়কের বাসিন্দা মো. আল আমিন বলেন, চাকুরির পাশাপাশি শখের বসে বাড়ির ছাদে ড্রামে ড্রাগন ফলের চারা রোপণ করেছি। ফলটি খেতে অনেক সুস্বাদু ও মজাদার। ইন্টারনেটে দেখেছি এর নানাবিধ পুষ্টিগুন রয়েছে।
রাজবাড়ী সদর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. বাহাউদ্দিস সেক জানান, ড্রাগন ফল এটি এক প্রজাতির ফল, একধরনের ফণীমনসা প্রজাতির ফল। এই ফল মূলত ড্রাগন ফল হিসেবে পরিচিত। চীনের লোকেরা এটিকে আগুনে ড্রাগন ফল এবং ড্রাগন মুক্তার ফল বলে। ভিয়েতনামে মিষ্টি ড্রাগন, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়াতে ড্রাগন ফল, থাইল্যান্ডে ড্রাগন স্ফটিক নামে পরিচিত। ড্রাগন ফলের গাছ দেখতে একদম ক্যাকটাসের মতো। পাতাবিহীন এই গাছটি দেখে অনেকেই একে ক্যাকটাস বলেই মনে করেন। ডিম্বাকৃতির উজ্জ্বল গোলাপি রঙের এই ফলের বর্তমানে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
তিনি জানান, ২০১১ সালে রাজবাড়ী হর্টিকালচার সেন্টারে পরীক্ষামূলকভাবে ড্রাগন ফলের চাষ শুরু হয়। প্রতি হেক্টর জমিতে ড্রাগন চাষের জন্য প্রয়োজন দেড় থেকে দুই লাখ টাকা। বছরে একটি ড্রাগন গাছ থেকে প্রায় ১৪০টি ফল পাওয়া যায়। এসব ফল স্থানীয় বাজারে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়ে থাকে।
তিনি আরও বলেন, অল্প পরিশ্রমে স্বল্প পুঁজিতে অধিক লাভ হওয়ায় রাজবাড়ীতে দিন দিন বাড়ছে ড্রাগন ফলের চাষ। বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল হচ্ছেন জেলার ড্রাগন চাষীরা। নানা পুষ্টিগুনে সমৃদ্ধ ড্রাগন ফলটি সব বয়সের মানুষের জন্য একটি আদর্শ ফল।
রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক এস, এম, সহীদ নূর আকবর জানান, রাজবাড়ীতে ড্রাগনের চাষাবাদ শুরু হয়েছে বছর ৭ আগে। অর্থকারী ও পুষ্টিকর এই ফলের চাষ দিন দিন আরও বাড়াতে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে চাষীদের নানাবিধ প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। বারী ড্রাগন ১, কিং রোজ, রেড ভেলভেট জাতের ড্রাগনের চাষ হচ্ছে। এই চাষ বেশ লাভবান চাষাবাদ।
রাজবাড়ী জেলার মাটি ড্রাগন চাষের উপযোগী উল্লেখ করে তিনি বলেন, ড্রাগন গাছে একটানা ৫ থেকে ৬ মাস ফল পাওয়া যায়। অধিক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন এই ফল চোখকে সুস্থ্ রাখে, রক্তের কোলেস্টেরল কমায়, উচ্চ রক্তচাপ ও হার্টের রোগসহ নানা ধরনের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
সৌদি আরবের খেজুরের চারা উৎপাদনে ভাগ্য ফিরেছে সোলায়মানের, বাৎসরিক আয় ৪ লাখ টাকা!
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।