জুমবাংলা ডেস্ক : সাতক্ষীরার কলারোয়ায় দুই সন্তানসহ স্বামী-স্ত্রীকে হাত-পা বেঁধে জবাই করে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার সকালে তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এক নিহতের ছোট ভাইকে আটক করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার ভোররাতে কোন একসময় কলারোয়া উপজেলার হেলাতলা ইউনিয়নের খলিসা গ্রামে নৃশংস এ ঘটনা ঘটে। জায়গা-জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হতে পারে বলে ধারণা করছে পুলিশ ও নিহতের পরিবার।
নিহতরা হলেন- খলসি গ্রামের শাহাজান আলীর ছেলে হ্যাচারি মালিক শাহিনুর রহমান (৪০), তার স্ত্রী সাবিনা খাতুন (৩০), ছেলে সিয়াম হোসেন মাহি (৯) ও মেয়ে তাসনিম (৬)। হত্যাকারীরা এ সময় ওই পরিবারের ৪ মাসের শিশু কন্যা মারিয়াকে হত্যা না করে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়।
এ ঘটনায় প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহত হ্যাচারি মালিক শাহিনুর রহমানের ছোট ভাই রায়হানুল ইসলামকে আটক করেছে পুলিশ।
এদিকে ঘটনার পরপরই সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমানসহ সিআইডি, গোয়েন্দা পুলিশ, ডিএসবি, র্যাব এবং অন্যান্য গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ঘটনার পর থেকে এলাকার শতশত লোক নিহত পরিবারকে দেখার জন্য ভিড় জমায়। নির্মম ও লোমহর্ষক এ হত্যার ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
স্থানীয়রা জানান, ভোরে তারা ওই বাড়ির চিৎকার চেচামেচি শুনে ছুটে যান। পরে দরজা খুলে দেখতে পান সাবিনা খাতুন ও তার দুই শিশু তাসনিম ও মাহী একঘরে এবং আরেকটি ঘরে শাহীনুরের জবাই করা লাশ।
একই পরিবারে থাকা নিহত মাছ ব্যবসায়ী শাহীনুরের ছোটভাই রায়হানুল ইসলাম জানান, তিনি গোঙানির শব্দ শুনে দরজা খুলতে গেলে দেখেন বাইরে থেকে শিকল দিয়ে দরজা আটকানো। পরে তার চিৎকারে এলাকাবাসী এসে দরজা খুলে। পরে সবাইকে খবর দেন।
তিনি আরও জানান, হত্যাকারীরা সিঁড়ির ঘর দিয়ে ঢুকে তাদের খুন করে দরজায় শিকল দিয়ে চলে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে পুলিশ ঘর থেকে একে একে পরিবারের ৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য গাড়িতে তোলে। সেখানে পুলিশের ক্রাইম সেকশন কাজ করছে বলে সংবাদকর্মী ও অন্য কাউকে নিহতদের ঘরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক নিহতের ছোট ভাই রায়হানুল ইসলাম আরও জানান, বড় ভাই শাহীনুর ইসলাম নিজস্ব ৭-৮ বিঘা জমিতে পাঙাস মাছের চাষ করতেন। দীর্ঘ ২২ বছর ধরে তাদের পারিবারিক সাড়ে ১৬ শতক জমি নিয়ে নিকট প্রতিবেশী ওয়াজেদ কারিগরের ছেলে আকবরের সাথে মামলা চলছিল। এই মামলা ও পারিবারিক বিরোধের জের ধরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে থাকতে পারে বলে তার ধারণা।
পরিবারের অন্যান্য স্বজনরা জানান, শাহিনুরের পিতা ডা. শাজাহান আলী কলারোয়া থানার দামোদরকাটি গ্রামের নূর আলীর ছেলে জনৈক আকবর হোসেনের কাছ থেকে ৩৪ শতক জমি ক্রয় করেন। এই জমির ক্রেতা ছিলেন ডা. শাজাহান ও তার প্রতিবেশী ওয়াজেদ আলীর ছেলে আকবর।
এদিকে জীবিত থাকা ৪ মাসের একমাত্র শিশুকন্যা মারিয়া সুলতানাকে স্থানীয় ইউপি সদস্য নাসিমা খাতুন নিয়ে যান। পরে তিনি তাকে আত্মীয়দের কাছে হস্তান্তর করেন।
কলারোয়া থানার অফিসার ইনর্চাজ (ভারপ্রাপ্ত) হারান চন্দ্র পাল জানান, পুলিশ সুপার মোঃ মোস্তাফিজুর রহমানসহ ঘটনাস্থলে সিআইডি, গোয়েন্দা পুলিশ, ডিএসবি, র্যাব এবং অন্যান্য গোয়েন্দা পুলিশের উপস্থিতিতে বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে ঘর থেকে ৪ জনের লাশ বের করা হয়েছে। হত্যার প্রাথমিক কোন কারনও তিনি জানাতে পারেনি। তবে ধারণা করছে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরেও এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হতে পারে।
সাতক্ষীরা-যশোর সড়কের ধারেই অবস্থিত খলিসা গ্রামের নিহতের বাড়িতে এখন শতশত লোক ভিড় করছে। নিহত পরিবারের কান্নায় কলারোয়া উপজেলার খলিসা গ্রামের আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। নিহত শাহীনুরের বৃদ্বা মা শাহিদা খাতুন আত্মীয়ের বাড়িতে ছিলেন। শাহীনুরদের তিন ভাইয়ের একভাই আশরাফুল মালয়েশিয়া থাকেন। তাদের বোন আছিয়া খাতুন বুক চাপড়ে বার বার আহাজারি করছেন আর চিৎকার করে বলছেন আমার মা ও আরেটা ভাই এখানে থাকলে তাদেরকেও খুন করতো সন্ত্রাসীরা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।