জুমবাংলা ডেস্ক : ‘৫০০ টাকায় ১০ এমবিপিএস,’ শুনলেই মনে হয় যেন আধুনিক জীবনের জন্য এক চমৎকার উপহার। সম্প্রতি ইন্টারনেট সার্ভিস প্রভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি) এমন ঘোষণাই দিয়েছে, মূল্য না বাড়িয়ে বাড়ানো হবে গতি। তবে বাস্তবতা যেন ঠিক উলটো ছবি আঁকে।
সরেজমিন অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, ঘোষণার আড়ালে রয়েছে ব্যান্ডউইথ সীমাবদ্ধতা, লুকানো চার্জ, আর মানহীন পরিষেবা। যেটি হতে পারত ‘বেশি গতি, কম খরচ’-এর সুখবর, তা পরিণত হয়েছে বিভ্রান্তিকর এক বিপণন কৌশলে। গ্রাহকদের একাংশ বলছেন, প্রকৃত অর্থে থাকে না নির্ধারিত গতি কিংবা প্রতিশ্রুত মান। ফলত, প্রশ্ন উঠেছে-এটি কি সত্যিই সাশ্রয়ী ইন্টারনেট নাকি এক চাতুর্যময় প্রলোভন?
রাজধানীর খিলক্ষেত, মিরপুর, মোহাম্মদপুর ও বাড্ডাসহ কয়েকটি এলাকার গ্রাহকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে অনেক আইএসপি প্রতিষ্ঠান ৫০০ টাকায় নেওয়া সংযোগে ৫ এমবিপিএস গতি দেওয়ার দাবি করলেও তা শুধু কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ।
বাড্ডার বাসিন্দা রিয়াজ মোর্শেদ জানান, ‘১০ এমবিপিএস ইন্টারনেট সংযোগ নিয়েছিলাম, কিন্তু ব্যবহার করতে গিয়ে দেখি ইউটিউবেও ঠিকমতো ভিডিও চলে না। বাফারিং হয়। স্পিড টেস্টে সর্বোচ্চ ৩-৪ এমবিপিএস ওঠে।’
একই অভিজ্ঞতা জানান মিরপুরের গৃহিণী শবনম সুলতানা। তার ভাষায়, ‘৫০০ টাকায় লোভনীয় অফার দিয়েছে ঠিকই কিন্তু আমরা যারা আগে থেকেই ১০ এমবিপিএস চালাই সেখানেই তো ঠিকমতো চলে না। মাসে দুই-তিনবার লাইন কেটে যায়। কল দিলেও সাড়া মেলে না।’
৫০০ টাকায় ১০ এমবিপিএস ইন্টারনেট সংযোগ, শুনতে যতটা আকর্ষণীয়, বাস্তবে তার অভিজ্ঞতা অনেকটাই ভিন্ন। প্রশ্ন উঠেছে, এ প্রতিশ্রুত গতি কি সত্যিই গ্রাহকের হাতে পৌঁছায়? বাঁ ভবিষ্যতে পৌঁছাবে? দেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছেন, বিজ্ঞাপনে যেই গতি দেখিয়ে সংযোগ বিক্রি করা হয়, বাস্তবে তা পাওয়া যায় না। এ অভিযোগের সত্যতা মিলেছে সরেজমিন অনুসন্ধানে।
মিরপুর এলাকার একটি আইএসপি প্রতিষ্ঠানের একজন উদ্যোক্তা বলেন, ‘আসলে এ গতি কমে যাওয়ার মূল কারণ শেয়ারিং মডেল। বিটিআরসি নীতিমালায় বলা আছে, একটি সংযোগ সর্বোচ্চ ৮ জনের মধ্যে ভাগ করা যায়। এর মানে, ১০ এমবিপিএস সংযোগের নামে একজন গ্রাহক গড়ে ৩ এমবিপিএসের মতো গতি পান।’ এ মডেলকে বলা হয় শেয়ার্ড ব্যান্ডউইথ। বেশির ভাগ গ্রাহক জানেনই না, তাদের সংযোগ একসঙ্গে কতজনের সঙ্গে ভাগ করা হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে যারা পূর্ণ গতি পেতে চান, তাদের নিতে হয় ডেডিকেটেড ব্যান্ডউইথ, যার মাসিক খরচ সাধারণ গ্রাহকের সাধ্যের অনেক বাইরে। ফলে ৫০০ টাকার প্যাকেজে ১০ এমবিপিএস পাওয়ার আশায় যারা সংযোগ নেন, তাদের অনেকেই প্রতারিত হওয়ার মতো অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হচ্ছেন।
মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, ‘আইএসপিএবি যখন ১০ এমবিপিএস গতি দেওয়ার কথা বলে, সাধারণ গ্রাহক ধরে নেয় তিনি সত্যিই সেই গতি পাবেন। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, সেই সংযোগে গড় গতি নামে মাত্র-মাত্র ১ থেকে ২ এমবিপিএস। এটা কোনোভাবেই ব্রডব্যান্ড সংযোগ হতে পারে না। ১০ এমবিপিএস বলেই গ্রাহকদের আকৃষ্ট করা হয়, কিন্তু মিলছে না প্রতিশ্রুত গতি। এটা সরাসরি গ্রাহক প্রতারণার শামিল।’
আইএসপিএবি সভাপতি ইমদাদুল হক বলেন, ১০ এমবিপিএস শেয়ার্ড ইন্টারনেট সংযোগে ‘বিটিআরসির নীতিমালা অনুযায়ী ১:৮ অনুপাতে স্পিড ভাগ করার সুযোগ থাকলেও, আমরা সর্বোচ্চ ১:৩ অনুপাতে সীমাবদ্ধ রাখি। এমনকি গ্রাহকসেবার মান বিবেচনায় অনেক ক্ষেত্রেই ১:২ অনুপাতে স্পিড নিশ্চিত করা হচ্ছে।’ ৫০০ টাকায় ১০ এমবিপিএস সংযোগ চালুর অগ্রগতি প্রসঙ্গে বলেন, ‘ইতোমধ্যে কার্যক্রম শুরু হয়েছে, আশা করছি এক সপ্তাহের মধ্যেই বাস্তবায়ন হবে।’
বাংলাদেশে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১ কোটি ৪০ লাখ ছাড়িয়েছে। অথচ যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ওকলার সাম্প্রতিক জরিপ অনুযায়ী, বিশ্বের ১৫৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ রয়েছে ১০০তম অবস্থানে। ইন্টারনেটের গতি এবং মান, এ দুই ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ পিছিয়ে। এ বাস্তবতায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এক গোলটেবিল আলোচনায় তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে যে ইন্টারনেট কোয়ালিটি সেটি পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট। এ নিকৃষ্ট পণ্য আপনি (ব্রডব্যান্ড ব্যবসায়ী) একটি মধ্যমানের মূল্যে বিক্রি করেন। অর্থাৎ আপনি যদি এটির কোয়ালিটি না বাড়ান তাহলে বর্তমান বাজারের মূল্য অনুযায়ী এটির দাম অনেক বেশি পড়ে। সেদিক থেকে কোয়ালিটি বিবেচনায় বাংলাদেশে ইন্টারনেটের দাম সবচেয়ে বেশি। সেজন্য আমি ইন্টারনেটের দাম কমানোর কথা বলছি।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।