জুমবাংলা ডেস্ক : রাজধানী ঢাকার আসাদগেটে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া একটি হৃদয়বিদারক ঘটনার প্রেক্ষিতে ডিএনসিসি প্রশাসনের সহানুভূতির নজির সৃষ্টি হয়েছে। গত ১৪ মে, অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের অভিযানে ক্ষতিগ্রস্ত তিনজন রিকশাচালক—মো. খলিল, রাসেল মিয়া ও সুমন মৃধা—প্রত্যেকে ৫০ হাজার টাকা করে আর্থিক অনুদান পেয়েছেন। রিকশা হারিয়ে পথে বসা এই চালকদের চোখে অশ্রু ও মুখে কৃতজ্ঞতা ছিল, যখন তারা ডিএনসিসির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজের হাত থেকে চেক গ্রহণ করেন। এটি প্রমাণ করে যে মানবিক সহানুভূতি এখনও আমাদের প্রশাসনিক কাঠামোর অংশ।
Table of Contents
রিকশা চালকদের সংকট ও প্রশাসনের মানবিক পদক্ষেপ
রিকশা, বিশেষ করে ব্যাটারিচালিত রিকশা, বর্তমানে ঢাকার অন্যতম জনপ্রিয় গণপরিবহন। তবে অবৈধ ও অনুমোদনহীন রিকশার কারণে শহরের ট্র্যাফিক ব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি ডিএনসিসি একটি অভিযান পরিচালনা করে যাতে বেশ কিছু অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশা জব্দ ও ধ্বংস করা হয়। এ সময় ক্ষতিগ্রস্ত হন খলিল, রাসেল ও সুমন। তারা দৈনিক জীবিকার জন্য নির্ভর করতেন এই রিকশার ওপর।
ঘটনার পর তাদের দুরবস্থার কথা ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে। বিষয়টি নজরে আসে ডিএনসিসির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজের, যিনি দ্রুতই একটি মানবিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তিনি শুধু ক্ষতিপূরণ প্রদান করেননি, বরং তাদের বিকল্প কর্মসংস্থানেরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
রিকশার আইনগত অবস্থা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
বর্তমানে ব্যাটারিচালিত রিকশা চালানোর কোনো নির্ধারিত ও সার্বজনীন অনুমোদন নেই। তবে সরকার কিছু কোম্পানিকে বুয়েট অনুমোদিত ব্যাটারিচালিত রিকশা প্রস্তুতের অনুমতি দিয়েছে। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সরকার একদিকে সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাইছে, অন্যদিকে পরিবেশবান্ধব যানবাহনের ব্যবহারে উৎসাহ দিচ্ছে।
ডিএনসিসির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই তিন রিকশাচালকসহ ক্ষতিগ্রস্ত অন্যান্যদের প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করা হবে। এনজিও সংস্থা ব্র্যাক ইতোমধ্যে প্রায় এক লাখ রিকশাচালককে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে, যার কার্যক্রম চলতি মাসেই শুরু হবে।
ডিএনসিসির নির্দেশনা ও ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা
ডিএনসিসি প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন যে, রাজধানীর মূল সড়কে অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশা চলতে পারবে না। তিনি রিকশাচালকদের বিকল্প আয়ের উৎস খুঁজে নেওয়ার পরামর্শ দেন এবং তাদের জন্য চাকরির ব্যবস্থাও গ্রহণ করেন। এর ফলে দেখা যাচ্ছে, অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেও প্রশাসন মানবিক দিক বিবেচনায় রেখেছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উপস্থিতি ও সমর্থন
- ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সাঈদ মো. কামরুজ্জামান
- অঞ্চল-৫ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা আ ন ম বদরুদ্দোজা
সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া ও সচেতনতা
সাধারণ মানুষ ডিএনসিসির এই মানবিক পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। তাদের মতে, প্রশাসনের এমন উদ্যোগ রিকশাচালকদের জন্য আশার আলো হয়ে উঠেছে। একইসঙ্গে তারা আশা করেন, রিকশাচালকরা ভবিষ্যতে প্রশিক্ষণ নিয়ে বৈধ পথে জীবিকা নির্বাহ করবেন।
এই ঘটনার মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে যে, সঠিক সিদ্ধান্ত ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি মিললে প্রশাসন জনগণের প্রকৃত বন্ধু হতে পারে।
এই প্রেক্ষাপটে, রিকশা এবং এর সাথে জড়িত মানুষের জীবনে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে।
FAQ: রিকশা নিয়ে সাধারণ প্রশ্নোত্তর
১. ব্যাটারিচালিত রিকশা কি বৈধ?
বর্তমানে সব ব্যাটারিচালিত রিকশা বৈধ নয়। নির্দিষ্ট কিছু কোম্পানিকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বুয়েট অনুমোদিত মডেল তৈরির জন্য।
২. রিকশা চালকরা প্রশিক্ষণ কোথায় পাবেন?
ব্র্যাক এনজিও রিকশাচালকদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছে, যা চলতি মাস থেকেই শুরু হবে।
৩. ক্ষতিগ্রস্ত রিকশাচালকরা কীভাবে ক্ষতিপূরণ পেলেন?
ডিএনসিসি প্রশাসক তাদের আহাজারি শুনে প্রত্যেকে ৫০ হাজার টাকা করে চেক প্রদান করেন।
৪. অবৈধ রিকশা চালানো কি দণ্ডনীয়?
হ্যাঁ, অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশা চালানো এখন আইনত অপরাধ এবং এসব যানবাহন জব্দ করা হচ্ছে।
৫. সরকারের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
সরকার বৈধ ও নিরাপদ ব্যাটারিচালিত রিকশা চালুর পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে এবং সংশ্লিষ্ট চালকদের প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে।
৬. এই উদ্যোগে আর কে সহযোগিতা করেছে?
ডিএনসিসি ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন যেমন ব্র্যাক এই উদ্যোগে সক্রিয়ভাবে জড়িত।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।