জুমবাংলা ডেস্ক : বাবার সঙ্গে ময়মনসিংহের গফরগাঁও রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে হারিয়ে যান ৮ বছরের শিশু পাকুন্দিয়া উপজেলার জাঙ্গালিংয়া দগদগা গ্রামের মোস্তফা কামাল। স্বজনরা ধরেই নিয়েছিলেন সে হয়তো বেঁচে নেই। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে দীর্ঘ ৫৫ বছর পর পরিবারের কাছে ফিরে এলেন তিনি।
দীর্ঘদিন পর বাবার ভিটায় এসে স্বজনদের কাছে পেয়ে আবেগে আপ্লুত ৬৩ বছরের বৃদ্ধ গোলাম মোস্তফা। স্ত্রী-সন্তানসহ ফিরে আসায় উপজেলার দগদগা গ্রামে পৈত্রিক ভিটায় বইছে আনন্দের বন্যা। এলাকার মানুষ ছুটে আসছেন তাকে দেখতে।
দীর্ঘ ৫৫ বছর পর জন্মভিটার খোঁজ পেলেন, শিশু বয়সে হারিয়ে যাওয়া গোলাম মোস্তফা। এখন বয়স ৬৫। দুই বার স্ট্রোক করেছেন। ভালো করে কথা বলতে পারে না। তবে জীবনের শেষ সময়ে শেকড়ে ফেরার আনন্দে ভাঁজপড়া মুখের দুই পাশ গড়িয়ে পড়ছে আনন্দের অশ্রু। এই কান্না আনন্দের। হারিয়ে খোঁজে পাওয়ার। শেকড়ের সন্ধান মেলার। গোলাম মোস্তফা শুধু বলতে পারলেন.. ‘খুব ভালো লাগছে।’
জানা গেছে, গফরগাঁও স্টেশন থেকে ট্রেনে উঠে চলে যান পাবনার ঈশ্বরদীতে। একটি সাইকেল গ্যারেজে কাজ করে পরিণত বয়সে বিয়ে করে সেখানেই বসতি গড়েন। তার ছেলে-মেয়েরা বড় হয়েছে। কিন্তু বাবার শেকড়ের খোঁজ জানতে না পারায় অপূর্ণতা ছিল পরিবারে। এরই মধ্যে শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। ভুলে যান নিজের ঠিকানা। কয়েক মাস আগে স্ত্রী-সন্তানদের কাছে শুধু নিজের গ্রামের নামটি বলতে পারেন।
এর সূত্র ধরে তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে বাবার পৈত্রিক পরিচয় খুঁজে বের করেন তার বড় ছেলে।
গোলাম মোস্তফার দুই ছেলে সজীব ও সাইফুল ইসলাম চাকরি করেন। একমাত্র মেয়ে মুসলিমা খাতুন সুমনা স্নাতক পড়ছেন। গত শুক্রবার তিনি বাবার বাড়িতে আসেন। ওঠেন ছোট ভাইয়ের বাসায়।
গোলাম মোস্তফার বড় ছেলে সজীব জানান, চারমাস আগে বাবার কাছে জানতে পারি তার বাবার গ্রামের নাম দগদগা। উপজেলা ও জেলার নাম তিনি বলতে পারেন না। সেই সূত্র ধরে গুগলে সার্চ দিয়ে দগদড়া গ্রাম খুঁজে বের করি। আস্তে আস্তে বিভিন্ন লোকজনের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলে বাবার প্রকৃত ঠিকানা খুঁজে বের করি। আজ আমাদের মতো আনন্দিত আর কেউ নেই।
আরেক ছেলে সাইফুল ইসলাম বলেন, আমরা বাবার পিতৃ পরিচয় বিষয়ে কিছুই জানতাম না। এখন আমরা বলতে পারবো। আমাদের দাদার বাড়ি আছে। চাচা আছে। চাচাতো ভাই আছে। এ অনুভূতি বলে বোঝানো যাবে না।
গোলাম মোস্তফার মেয়ে সুমনা জানায়, এতদিন বাবার কোনো পিতৃ পরিচয় ছিল না। লোকজন এ নিয়ে নানা প্রশ্ন করতো। কোনো জবাব দিতে পারতাম না। আজ দাদার বাড়িতে এসে সবার সাথে কথা বলে খুব ভালো লাগছে।
গোলাম মোস্তফার স্ত্রী সোহাগী বেগম জানান, বাবা-মায়ের পরিচয় ছাড়া, ঠিকানা না জেনেই এতিম ছেলে হিসেবে বাবা তার হাতে আমাকে তুলে দিয়েছিলেন। এমন দিন কখনও আসবে স্বপ্নেও ভাবিনি। চার মাস আগে তিনি হঠাৎ করে আমাকে বলেন যে, তার গ্রামের নাম দগদগা। কাগজে নামটি লিখে রাখতে বলেন। শুধুমাত্র গ্রামের নাম দিয়ে এ চার মাস চেষ্টা করে আমার ছেলে তার ঠিকানা বের করে। আজ ছেলে-মেয়েদের নিয়ে স্বামীর বাড়িতে আসলাম। বিয়ের পর এই প্রথম নিজেকে এত সুখী মনে হচ্ছে।
গোলাম মোস্তফার ফিরে আসার খবরে তাকে দেখতে ছুটে গেলেন, পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রেনু।
তিনি বলেন, এটি সত্যিই বিস্ময়কর ঘটনা। ৫৫ বছর পর তিনি নিজের বাবার বাড়ির ঠিকানা খোঁজে পেলেন। যে কোনো সহযোগিতায় তার পাশে থাকবো।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।