আগামী জাতীয় নির্বাচনে দীর্ঘদিন ধরে পরাজিত আসনগুলো ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ হিসেবে দেখছে বিএনপি। আওয়ামী লীগের অনিশ্চিত অংশগ্রহণের প্রেক্ষাপটে এসব আসনে ভিন্ন ভোটচিত্র তৈরি হতে পারে— এমন বিশ্লেষণ থেকেই প্রার্থী নির্ধারণ ও সাংগঠনিক প্রস্তুতিতে নতুন কৌশল নিয়েছে বিএনপি।
বিএনপি আগামী জাতীয় নির্বাচনে টানা চার দফায় জয়লাভ করতে না পারা ৫৭টি আসনে বিশেষভাবে নজর দিচ্ছে। পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এবং আওয়ামী লীগের অনিশ্চিত অংশগ্রহণের সুযোগে এসব আসনের ভোটের চিত্র কেমন হতে পারে, তা বিশ্লেষণ করছে দলটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। এ আসনগুলোয় প্রার্থী নির্ধারণে তৃণমূল নেতাদের মতামতকে অগ্রাধিকার দেওয়ারও নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি।
দলীয় সূত্র জানিয়েছে, পাঁচ দফা মাঠ জরিপ, নেতাকর্মীদের মতামত ও শীর্ষ নেতৃত্বের বিশ্লেষণের ভিত্তিতে প্রায় ২০০ আসনের প্রার্থী তালিকা চূড়ান্তের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। তবে যেসব আসনে একাধিক শক্তিশালী প্রার্থী রয়েছেন, সেগুলোয় নেতাদের মতামত নেওয়ার মাধ্যমে সমাধান খোঁজা হচ্ছে। একই সঙ্গে ফ্যাসিবাদবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের সহযোগী দলগুলোর জন্য প্রায় ৫০টি আসন ছেড়ে দেওয়ারও প্রস্তুতি রয়েছে।
১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনের ফল বিশ্লেষণ করে ৫৭ আসন চিহ্নিত করেছে বিএনপি। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ১৩টি, রংপুর বিভাগে সর্বোচ্চ ২০টি, সিলেটে ৯টি, খুলনায় ৫টি, বরিশালে ৪টি, ময়মনসিংহে ৩টি, চট্টগ্রামে ২টি এবং রাজশাহীতে একটি আসন রয়েছে। এসব আসনের বেশির ভাগই দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের দখলে। এর বাইরে কিছু আসন জাতীয় পার্টিরও ছিল।
ঢাকা বিভাগের আসনগুলোর মধ্যে টাঙ্গাইল-১, গাজীপুর-১, ফরিদপুর-১ ও ৪, গোপালগঞ্জের তিনটি আসন, মাদারীপুরের তিনটি আসন এবং শরীয়তপুরের তিনটি আসনে সব নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। তবে এবার আওয়ামী লীগ অংশ না নিলে বিএনপি এসব আসনে সাংগঠনিক শক্তি বাড়ানোর চেষ্টা করছে। টাঙ্গাইল-১ আসনে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ আলী ও ফকির মাহবুব আনাম স্বপন মনোনয়ন চাইছেন। গাজীপুর-১ আসনে মাঠে কাজ করছেন বিএনপি নেতা চৌধুরী ইশরাক আহমেদ সিদ্দিকী। ফরিদপুর-১ আসনে খন্দকার নাসিরুল ইসলাম, শামসুদ্দীন মিয়া ও মনিরুজ্জামানসহ কয়েকজন নেতা মনোনয়নপ্রত্যাশী। ফরিদপুর-৪ আসনে কৃষক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুলকে সক্রিয় হতে বলা হয়েছে। গোপালগঞ্জের তিনটি আসনেও কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন।
চট্টগ্রাম বিভাগের ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ ও বান্দরবান আসন বিএনপির তালিকায় রয়েছে। এখানে স্থানীয় নেতারা রাজনৈতিক কর্মসূচির পাশাপাশি সামাজিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় হয়েছেন।
রাজশাহী বিভাগের সিরাজগঞ্জ-১ আসনে সেলিম রেজা, নাজমুল হাসান তালুকদার রানা এবং কণ্ঠশিল্পী কনক চাঁপা মনোনয়ন চাইছেন। ময়মনসিংহ বিভাগের ময়মনসিংহ-১০, জামালপুর-৩ ও শেরপুর-১ আসনেও নতুন করে সক্রিয় হয়েছে বিএনপি।
রংপুর বিভাগে ঠাকুরগাঁও-২, ঠাকুরগাঁও-৩, নীলফামারী-১ ও ২, লালমনিরহাট-১ ও ২, রংপুরের ছয় আসন, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধার বেশ কয়েকটি আসন বিএনপির ৫৭ আসনের তালিকায় রয়েছে। এ আসনগুলোতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জাতীয় পার্টি অতীতে কিছুটা প্রভাব দেখালেও সাম্প্রতিক সময়ে তাদের অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়েছে। এ সুযোগ কাজে লাগাতে চায় বিএনপি।
সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের একাধিক আসনে কখনও জয় পায়নি বিএনপি। তবে এবার সেখানে নতুন করে প্রার্থীরা মাঠে কাজ করছেন। সিলেট-৬ আসনসহ বেশ কয়েকটিতে একাধিক নেতা মনোনয়ন চাইছেন। বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক জি কে গউছ জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন সাংগঠনিক দুর্বলতা থাকলেও এবার তা কাটাতে তারা সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন।
বরিশাল বিভাগের বরগুনা-১, পটুয়াখালী-৩ ও ৪ এবং পিরোজপুর-২ আসনে বিএনপি নেতারা প্রার্থী হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। খুলনা বিভাগেও নড়াইল, বাগেরহাট ও খুলনার আসনগুলোয় দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের আধিপত্য থাকলেও বিএনপি এখন নতুন করে সংগঠন গোছাচ্ছে।
বিএনপির শীর্ষ নেতাদের মতে, যেসব আসন এতদিন আওয়ামী লীগের দুর্গ হিসেবে পরিচিত ছিল, দলটি যদি নির্বাচনে অংশ না নেয় তবে সেখানে ভিন্ন চিত্র দেখা যেতে পারে। তাই আগে থেকেই সংগঠন গোছানো ও প্রার্থী চূড়ান্ত করার কাজকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে বিএনপি।
সূত্রঃ সমকাল
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।