যে বিশ্বকাপের খোঁজে লিওনেল মেসি হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়ালেন একটা জীবন, যে বিশ্বকাপ দিয়েগো ম্যারাডোনাকে বানিয়ে তুলল ঈশ্বর, ওই শিরোপা ব্রাজিলের তারকা পেলে জয় করেছেন তিনবার। নিন্দুকেরা অবশ্য বলেন, ‘৬২ বিশ্বকাপ-জয়ের কৃতিত্ব তো না খেলেই পাচ্ছেন তিনি। পাল্টা জবাব আসতে সময় লাগার কথা না। খেলেননি বলার চেয়ে তো এটাই বলা ভালো, ‘তাকে খেলতেই দেওয়া হলো না।’
বলের দখল নিয়ে ছোট ছোট পাসে খেলার বদলে সোজা প্রতিপক্ষের গোলপোস্টে উড়িয়ে মারাটাই তখনকার কৌশল। আর বলের চেয়ে ফুটবলারদের গোড়ালিতে লাথি মারতেই বেশি আগ্রহী ছিল প্রতিপক্ষ। আর ব্রাজিলকে থামানোর অস্ত্র তো তখন সর্বজনবিদিত। উরুগুয়ের বিপক্ষে কোপা আমেরিকার এক ম্যাচেই ৪২ বার ফাউলের শিকার হয়েছিলেন তিনি।
মেসি-রোনালদো-নেইমার-ভিনিসিয়াসরা যে মুহূর্তগুলোতে আজ মুগ্ধ করছেন, পেলে সেসব দেখিয়ে গেছেন অর্ধশতাব্দী আগেই। আর গোলগুলোও কী দর্শনীয়! ডান পায়ের জোর স্বভাবসুলভ, বাঁ পায়েই বা খারাপ নাকি? ৫’৮” ফুট উচ্চতা নিয়েই ছাড়িয়ে যাচ্ছেন দীর্ঘদেহী ফুটবলারদের।
পেলের হৃদযন্ত্র প্রতি মিনিটে কাঁপত ৫৬/৫৮ বার। মানে, অন্যদের তুলনায় ক্লান্তি কম ছুঁত তাকে। পা জোড়া ছিল সমান্তরাল, গোড়ালির হাড়গুলো প্রচণ্ড শক্তিশালী। যে কারণে মাত্র ৫’৮” ইঞ্চি হওয়ার পরও দ্রুত দৌড়াতে কোনো বাধা হয়নি উচ্চতা। সঙ্গে উঁচু লাফ বা হাই কিকের পর ‘শক অ্যাবজর্ভার’ হিসেবেও কাজ করেছে পা।
খেলা ছাড়ার পর পেলে বলেছিলেন, ‘আমার অনেক সতীর্থই বল নিয়ে ভালো দৌড়াতে পারে, ভালো ট্যাকল করতে পারে। কিন্তু, ওদের সবাই বোধ হয় বল কিভাবে রিসিভ করতে হয়, এটা জানে না। সম্ভবত ওদের সেই দেখার চোখটা নেই, যা আমার আছে। এটা খুব সম্ভবত শেখানোর জিনিসও নয়।’
দুনিয়া দেখতে হয় পশ্চিমাদের চোখ দিয়ে। যে চোখে তারাই শ্রেষ্ঠ। সেই সময়টায় ব্রাজিলের মতো তৃতীয় বিশ্বের এক দেশে জন্মেও অবিসংবাদিত সেরা হওয়ার এমন দাবি উত্থাপন, পেলে ছাড়া আর কেউ কি পেরেছেন? এখনও?
সর্বকাল সেরা, ১২৮৩ গোল, তিনটা বিশ্বকাপ, খ্যাতি, সম্মান, মর্যাদা – পেলের সমার্থক হয়ে অনেক শব্দই বসেছে কালক্রমে। বিপরীতার্থক শব্দ হিসেবে তৈরি হয়েছে মেসি-ম্যারাডোনাও। তবে এত পালাবদলেও ধ্রুব হয়ে টিকে রইলো বোধ হয় ওই মানেটাই। দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে তিনি যে বলে যেতে পেরেছিলেন, ‘পেলের মৃত্যু নেই’, তার রহস্যও লুকিয়ে ওখানেই।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।