মুজাহিদ বিল্লাহ : হাজার টাকায় শার্ট কিংবা নতুন কোনো কাপড়ের কথা আপনি ভাবতে পারেন। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে সব রকম পণ্যের মূল্য বেড়েছে। ফলে কাপড়ের দামও কম নয়। নতুন পোশাক কেনার আগে মধ্যবিত্তের ভাবনায় বিষয়গুলো থাকে। নিম্নবিত্তের ভাবনা আরেকটু কঠিন বটে। মাসের সব হিসাব শেষে একেবারে প্রয়োজন না হলে তারা সাধারণত পরিধানের কাপড় কিনতে চান না। তবে ঢাকায় এখনো ৫ টাকা থেকে শুরু করে ১০ টাকায় মেলে পোশাক। হ্যাঁ, পুরান ঢাকার বেগমগঞ্জের বেচারাম দেউরীতে মিলবে এ সুযোগ।
বেচারাম দেউরীতে রয়েছে বেশ কয়েকটি মার্কেট। সেখানে ব্যবহৃত পুরনো পোশাক কিনতে পাওয়া যায়। ছেলেদের শার্ট, প্যান্ট, পাঞ্জাবি, মেয়েদের জামা-শাড়ি, শিশুদের জন্যও জামাকাপড় পাওয়া যায়। কাপড়ের এই বাজার ‘পুরাতন কাপড়ের রাজধানী’ নামে পরিচিত।
এসব মার্কেটে মূলত কাপড় আসে ঢাকার বিভিন্ন জায়গা থেকে। ফেরিওয়ালারা হাঁড়ি-পাতিলের বিনিময়ে এসব কাপড় সংগ্রহ করেন। টাকার বিনিময়েও বাসাবাড়ি থেকে কাপড় কেনেন ফেরিওয়ালারা। তারপর সেগুলো ধুয়ে, ইস্ত্রী করে বিক্রি করেন দোকানীরা। মান খারাপ হলে অনেক ক্ষেত্রে সেভাবেই বিক্রি করা হয়। কাপড় সংগ্রহ করার পর ছেঁড়া, ফুটো, মান দেখে নির্ধারণ করা হয় দাম।
বেচারাম দেউরীর জাহাঙ্গীর মার্কেট, সেন্টু-পিন্টু মার্কেট, হাফিজ মার্কেটসহ আশেপাশের দোকানে গিয়ে দেখা গেল স্তূপ করা সব জামাকাপড়। অনেকে ভ্যানে সেগুলো দেকানে এনে রাখছেন। দোকানের কর্মচারীরা ব্যস্ত কাপড় বাছাই করতে। কেউ আবার দরদাম করছেন ক্রেতার সঙ্গে। এই ব্যস্ততা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত লক্ষ্য করা যায়। দোকানগুলোতে সাধারণত শার্ট ৫-১০ টাকা, প্যান্ট ১০-৪০ টাকা, পাঞ্জাবি ২০-৭০ টাকা, শাড়ি ৩০-৩০০ টাকা, জামা ২০-২০০ টাকা, ব্লাউজ ২০-১০০ টাকা, শীতের কাপড় ৫০-৩০০ টাকা, শিশুদের জামাকাপড় ৩০-৩০০ টাকা, কম্বল ৫০-৩০০ টাকায় বিক্রি হয়।
’পাঠকমনে প্রশ্ন আসতে পারে এসব কাপড়ের ক্রেতা কারা? ক্রেতা মূলত হতদরিদ্র মানুষ। এ ছাড়াও এ ধরনের পুরাতন কাপড়ের চাহিদা রয়েছে রড-সিমেন্টের কাজ যারা করেন অথবা রং মিস্ত্রীদের। এসব পুরাতন কাপড় অনেকে গাড়ির গ্যারেজেও ব্যবহার করেন। এখান থেকে আবার অনেক হকার কাপড় কিনে রাস্তায় ঘুরে বিক্রি করেন।তেমনই একজন শফিক মিয়া। তিনি যাত্রাবাড়ী মোড়ে ফেরি করে পুরাতন কাপড় বিক্রি করেন। তিনি বলেন, আমি এখান থেকে শার্ট, প্যান্ট কিনে রিকশাওয়ালা, ভ্যানওয়ালাসহ রাস্তার হতদরিদ্র মানুষের কাছে বিক্রি করি। তারাই আমার ক্রেতা। বিক্রি যা হয় তাতে দিন চলে যায়। তবে আগের চেয়ে বিক্রি একটু কমছে।
প্রায় ৫ বছর ধরে নানা জায়গায় ঘুরে কাপড় সংগ্রহ করেন রহিম হাসান। তিনি বলেন, এক সময় কাপড়ের অনেক চাহিদা ছিল। অনেকেই পুরাতন কাপড় বিক্রি করতো। এখন সেরকম বিক্রি করতে চায় না। পাতিল কিংবা টাকার বিনিময়ে আমরা কাপড় কিনি। কিন্তু দাম কম বলায় অনেকে আমাদের কাছে বিক্রি করতে চায় না। কিন্তু আমাদের লাভের কথা তো আমাদেরই ভাবতে হয়।
ফেরিওয়ালা মানিক মিয়া বলেন, আগের মতো এখন কাপড় পাওয়াও যায় না। বিক্রিও হয় না মার্কেটে। তাই অনেকে এই কাজ বাদ দিয়ে অন্য কাজ শুরু করছে।
মার্কেটের দোকানের কর্মচারী রুবেলের কণ্ঠেও পাওয়া গেল হতাশার সুর। তিনি বলেন, আগে আরও কয়েকটি দোকান ছিল, বেশি ব্যবসা হতো। এখন বিক্রি কম। ক্রেতা কম আসে আগের তুলনায়। তবে ঈদসহ অন্য সময়ে ভালো বিক্রি হয়।
লাভ কেমন হয় জানতে চাইলে ব্যবসায়ী হাফিজ বলেন, হকাররা মূলত কাপড় সংগ্রহ করে আনেন। আমরা ওদের কাছ থেকে কিনি। এখানকার সব ক্রেতা নিম্নবিত্ত। ফলে দামও বুঝেশুনে বলতে হয়। মাসে ১৫-২০ হাজার টাকা লাভ থাকে।
করোনার আগে আরও বেশি লাভ থাকতো বলে জানান হাফিজ। সূত্র : রাইজিংবিডি
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।