আন্তর্জাতিক ডেস্ক : দেশের সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য উত্তরপ্রদেশের পাশাপাশি উত্তরাখণ্ড ও মণিপুরের বিধানসভা নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। এ ছাড়া গোয়ায় অল্পের জন্য নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেনি তারা। এদিকে, পাঞ্জাবে প্রথমবারের মতো ক্ষমতায় এসেছে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের নেতৃত্বাধীন আম আদমি পার্টি (আপ)। রাজধানী নয়াদিল্লির বাইরে পাঞ্জাবই প্রথম কোনো রাজ্য, যেখানে দলটি ক্ষমতার স্বাদ নিতে যাচ্ছে।
সম্প্রতি কয়েক ধাপে ভোটগ্রহণের পর বৃহস্পতিবার একসঙ্গে ভারতের মোট পাঁচটি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণা হয়। ফলে বিজেপির জয়জয়কারের পাশাপাশি দেখা যায়, ঐতিহ্যবাহী দল জাতীয় কংগ্রেস বেশ খারাপ করেছে। কোনো রাজ্যেই শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারেনি তারা।
এবার সবচেয়ে বেশি নজর ছিল উত্তরপ্রদেশে। কারণ এই রাজ্যে রয়েছে সর্বাধিক ৮০টি লোকসভা আসন। উত্তরপ্রদেশে জয়ী দল অনেক সময়ই কেন্দ্রে সরকার গঠন করে। সে কারণে এই রাজ্যের বিধানসভা ভোটের হিসাব দেখে আগামীতে লোকসভা ভোটের চিত্র অনেকটাই অনুমান করা যায়।
নরেন্দ্র মোদি সরকারের বিতর্কিত কৃষি আইনের জেরে দীর্ঘদিনের কৃষক আন্দোলনের জেরে উত্তরপ্রদেশে যোগী আদিত্যনাথের নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকারের জনপ্রিয়তা কমে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছিল। ভোটের আগে রাজ্যের লখিমপুর খেরিতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর ছেলের গাড়িবহরের চাপায় কৃষকের মৃত্যুর ঘটনাও ভোটের বাক্সে ধস নামাতে ভূমিকা রাখবে বলে অনুমান ছিল অনেকের।
এ অবস্থায় ভোটের লড়াইকে ‘৮০ ভাগ বনাম ২০ ভাগ’ আখ্যা দিয়ে নির্বাচনকে হিন্দু বনাম মুসলিমের লড়াই বলে মরিয়া প্রচার চালান কট্টরপন্থী হিসেবে পরিচিত নেতা যোগী আদিত্যনাথ। অন্যদিকে অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টি (এসপি) ও তার নেতৃত্বাধীন জোট নির্বাচনে মুসলিম ও নিম্নবর্ণের হিন্দুদের ভোট টানার চেষ্টা করেন। হাথরসে আলোচিত দলিত নারী ধর্ষণ ও হত্যা এবং লখিমপুর খেরির ঘটনা নিয়ে সোচ্চার ছিল কংগ্রেস। গান্ধী পরিবারের সদস্য প্রিয়াঙ্কা গান্ধী নির্বাচনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন রাজ্যে। কিন্তু সব কিছুকে পাশ কাটিয়ে শেষ হাসিটা হাসলেন যোগী আদিত্যনাথই। ধারণা করা হচ্ছে, নির্বাচনে যোগীর এই সাফল্য আগামী দিনে কেন্দ্রীয় বিজেপিতে গুরুত্বপূর্ণ স্তরে উন্নীত করবে তাঁকে। ১৯৬০ সালের পর কোনো নেতা উত্তরপ্রদেশে টানা দুবার মুখ্যমন্ত্রী হননি। কিন্তু যোগী আদিত্যনাথ তা-ই হতে চলেছেন।
পাঞ্জাবে আপের চমক
রাজধানীতে বছরব্যাপী কৃষক আন্দোলনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছিল পাঞ্জাব রাজ্যের কৃষকরা। নির্বাচনের আগে রাজ্যটিতে ক্ষমতাসীন কংগ্রেসের গৃহবিবাদ শুরু হয়। কংগ্রেসদলীয় মুখ্যমন্ত্রী অমর সিংহ পদত্যাগ করে নতুন দল গড়েন। তার পদত্যাগের পরও মেটেনি দ্বন্দ্ব। কংগ্রেস নেতা নভোজিৎ সিং সিধু ও মুখ্যমন্ত্রী চরণজিৎ সিংহ চান্নির মধ্যে নতুন করে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব বাধে। ক্ষমতাসীন দলের অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে আম আদমি পার্টি (আপ) রাজ্যে জায়গা করে নিল। আপ-এর উত্থান রাজধানী নয়াদিল্লিতে একসময়ের দুর্নীতিবিরোধী নাগরিক আন্দোলনের নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়ালের হাত ধরে। নয়াদিল্লিতে টানা তিনবারের মুখ্যমন্ত্রী তিনি। বলা হচ্ছে, দিল্লিতে কেজরিওয়ালের সরকারের ভূমিকা পাঞ্জাব জয়ে ভূমিকা রেখেছে।
ভারতে রাজ্য স্তর থেকে উঠে আসা কোনো দলের অন্য কোনো রাজ্যে গিয়ে ক্ষমতা দখলের নজির নেই। ভগবন্ত মনের নেতৃত্বে পাঞ্জাবে সেই বিরল কাজটি করেছে আপ।
উত্তরপ্রদেশ
এবার বিজেপির নেতৃত্বাধীন জোটের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল সাবেক মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টির (এসপি) নেতৃত্বাধীন জোট। গান্ধী পরিবারের সদস্য প্রিয়াঙ্কা গান্ধীও কংগ্রেসের হয়ে নির্বাচনী লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ৪০৩ আসনের বিধানসভায় সরকার গড়তে ২০২ আসন প্রয়োজন হয়। বৃহস্পতিবার রাত ৯টা পর্যন্ত বিজেপির জোট ২৭৩ আসন পেয়েছে, যাতে বিজেপির একাই আড়াই শর বেশি। জোট শরিকসহ এসপি পেয়েছে ১২৫ আসন। কংগ্রেস পেয়েছে মাত্র দুটি আসন। তবে ২০১৭ সালের নির্বাচনের তুলনায় এবার অর্ধশতাধিক আসন কম পেয়েছে বিজেপির জোট। এসপির আসন বেড়েছে ৭৫টি।
উত্তরাখণ্ড
৭০ আসনের উত্তরাখণ্ড বিধানসভায় বিজেপি এবার ৪৮ আসন পেয়েছে। সরকার গঠন করতে প্রয়োজনীয় ৩৬টি আসনের তুলনায় যা বেশিই। তবে গতবারের তুলনায় ৯ আসন কম। এ নিয়ে টানা দ্বিতীয়বার রাজ্যের ক্ষমতায় আসছে বিজেপি। এ রাজ্যে কংগ্রেস পেয়েছে ১৮ আসন, যা গতবারের তুলনায় সাতটি বেশি।
পাঞ্জাব
১১৭ আসনের পাঞ্জাব বিধানসভায় ৯২টির মতো আসনে জয়লাভ করে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে আপ। মূল প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেস পেয়েছে মাত্র ১৮টি। তবে এ রাজ্যে বিজেপির ফল হয়েছে বেশ নেতিবাচক। অমর সিংহের নবগঠিত দল ও বিজেপির জোট পেয়েছে মাত্র দুটি আসন।
গোয়া
অপেক্ষাকৃত ছোট রাজ্য গোয়ায় ৪০টি বিধানসভা আসনের মধ্যে বিজেপি একাই পেয়েছে ২০টি আসন। এটি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার চেয়ে মাত্র একটি কম। প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেস পেয়েছে ১২ আসন। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেস এই রাজ্যের একটি আঞ্চলিক দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। এই জোট আসন পেয়েছে মাত্র দুটি। এ ছাড়া কেজরিওয়ালের আপ জোটবদ্ধ লড়াই করে তিনটি আসন পেয়েছে।
মণিপুর
মণিপুর রাজ্যে বিজেপি ৩২টি আসনে জয় পেয়েছে, যা বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজনীয় আসনের তুলনায় একটি বেশি। রাজ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৯টি আসন পেয়েছে ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) নামের একটি দল। কংগ্রেস পেয়েছে পাঁচটি আসন। এর বাইরে আরো ১৬টি আসনে অন্যরা জয়লাভ করেছে। সূত্র : এনডিটিভি, টাইমস অব ইন্ডিয়া।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।