বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : ২০৩০ সালের মধ্যে ইউরোপের বাজারে স্থানীয় সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদন চার গুণ বাড়ানোর পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। এশিয়া-নির্ভরতা কমিয়ে সেমিকন্ডাক্টরে স্বনির্ভর হতে ৫ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করতে পরিকল্পনা আঞ্চলিক ব্লকটির। খবর রয়টার্স।
বৈদ্যুতিক গাড়ি, স্মার্টফোন, পিসি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ইলেকট্রনিকসের গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ চিপ। বছর দুয়েক ধরে চলা করোনা মহামারীতে উপকরণ সংকট ও চিপ-স্বল্পতা দেখা দিয়েছে। এতে চাহিদামাফিক গাড়ি, স্মার্টফোন ও পিসি সরবরাহ করা কঠিন ঠেকছে। বর্তমানে সেমিকন্ডাক্টর খাতটি এশিয়ানির্ভর, বিশেষত তাইওয়ান, চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ানির্ভর। ভূরাজনৈতিকভাবে অস্থিতিশীল হওয়ার কারণে ওই দেশগুলোর ওপর নির্ভরতার ঝুঁকি নিয়ে প্রমাদ গুনছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদে সেমিকন্ডাক্টর খাতে স্থানীয় কোম্পানিকে ভর্তুকিসংক্রান্ত একটি বিল অনুমোদন করা হয়েছে। সিনেটে অনুমোদন পেলে তা আইনে পরিণত করার জন্য প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের টেবিলে পাঠানো হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের নীতি অনুসরণ করে সেমিকন্ডাক্টর খাতে স্বনির্ভরতার জন্য বড় অংকের বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে ইইউ কর্তৃপক্ষ। ব্লকটিতে কারখানা স্থাপনের জন্য তাইওয়ানভিত্তিক টিএসএমসি ও যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইন্টেলের মতো কোম্পানিকে আকর্ষণের চেষ্টা করছে তারা।
ইউরোপীয় কমিশন জানায়, বহুল প্রতীক্ষিত ইইউ চিপস অ্যাক্টের মাধ্যমে ৪ হাজার ৩০০ কোটি ইউরো বা ৪ হাজার ৯১০ কোটি ডলার বরাদ্দ করা হবে। সেমিকন্ডাক্টর খাতে ইউরোপের হিস্যা দ্বিগুণ করতে এ বিনিয়োগ হবে।
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে সেমিকন্ডাক্টর খাতের ২০ শতাংশ বাজার হিস্যা নিজেদের করে নিতে চায় ইইউ। এ লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছতে আমাদের উৎপাদন চার গুণ বাড়াতে হবে। বৈশ্বিক চাহিদার কথা মাথায় রেখে আমাদের সেদিকে এগোতে হবে।
সেমিকন্ডাক্টর খাতে স্বনির্ভরতায় যুক্তরাষ্ট্রের মতো উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা গ্রহণের জন্য ইইউ নেতাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করে আসছিলেন ইইউ ইন্ডাস্ট্রি কমিশনার থিয়েরি ব্রেটন। বাইডেন প্রশাসন যেখানে ৫ হাজার ২০০ কোটি ডলারের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে, আমাদেরও কাছাকাছি পরিকল্পনা হাতে নিতে হবে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে তিনি জানান, চিপ ছাড়া কোনো ডিজিটাল রূপান্তর, নিরাপদ জ্বালানিতে রূপান্তর কিংবা প্রযুক্তিতে নেতৃত্বের আসনে যাওয়া সম্ভব নয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় অর্থনৈতিক ও ভূরাজনৈতিক অগ্রাধিকার হিসেবে দেখা দিয়েছে সর্বাধুনিক চিপের সরবরাহ নিশ্চিত করা।
প্রস্তাবটি ইইউ সদস্য রাষ্ট্র ও ইউরোপীয় পার্লামেন্ট কর্তৃক অনুমোদন হতে হবে। এ ব্যাপারে জার্মানি, ফ্রান্স ও ইতালির মতো শিল্প জায়ান্টের ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান দেখা যেতে পারে। যেসব ছোট দেশ এত দিন এশিয়ার সরবরাহ চেইনের ওপর নির্ভর করে আসছিল, তারা কিছুটা শঙ্কায় আছে। ইইউতে চিপ তৈরিতে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধির কারণে বেশি দামে তাদের কিনতে হতে পারে। এতে চূড়ান্ত পণ্যের দামও বেড়ে যেতে পারে।
নেদারল্যান্ডস ও অন্য নরডিক দেশগুলোয় এরই মধ্যে বিপরীত সুর দেখা যাচ্ছে। এক ইইউ কূটনীতিক বলেন, আমরা যেন এমন অবস্থায় না পড়ি, যেখানে কোনো বড় সদস্য রাষ্ট্রে কোনো মার্কিন কোম্পানি কারখানা স্থাপনের কাজ পাচ্ছে এবং তহবিলের বড় একটি অংশ ভাগিয়ে নিচ্ছে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউর বিনিয়োগ পরিকল্পনা আমলে নিয়ে এশীয় চিপ জায়ান্টগুলোও নিজস্ব বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে। ইউরোপ যেখানে এক দশকে ৫ হাজার কোটি ডলারের বিনিয়োগ পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনায় ব্যস্ত, তখন টিএসএমসি পরবর্তী ১২ মাসেই ৪ হাজার থেকে ৪ হাজার ৪০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। সবচেয়ে অগ্রসর চিপ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে বেশ শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে তাইওয়ানভিত্তিক টিএসএমসি। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে চিপ কারখানা সম্প্রসারণে ১ হাজার ২০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে তারা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।