জুমবাংলা ডেস্ক : দেশের সর্ববৃহৎ বেনাপোল স্থলবন্দরের ভারতীয় ট্রাক টার্মিনালের (টিটিআই) পশ্চিম পাশে বসবাসরত প্রায় ৬৫টি পরিবারের পাঁচ শতাধীক মানুষ বন্দী জীবন দশা থেকে মুক্তি পেতে চায়। বন্দর কর্তৃপক্ষের অবহেলায় নানা সমস্যার মধ্য দিয়ে তারা জীবন যাপন করছে।
জানা গেছে, ২০০৭ সালের ১১ই নভেম্বরের আগে এই জায়গাটি ছিলো উন্মুক্ত। পরে বেনাপোল বন্দর কর্তৃপক্ষ বন্দরকে সু-রক্ষিত রাখার জন্য গ্রামের পাশ দিয়ে নির্মান করে প্রাচীর। আটকা পড়ে এ সব বসবাসকারীরা। পরে তারা বন্দর কর্তৃপক্ষের বাঁধার মুখেও নিজেদের বন্দী দশা থেকে বাঁচতে নির্মিত প্রাচীরের কয়েক জায়গায় গোলাকারে ভেঙে যাতয়াত করতে থাকে। সে ক্ষেত্রে অসুস্থ্য রোগী ও স্কুলগামী ছোট শিশুদের ভোগান্তির যেন শেষ নেই।
তাছাড়া রাত হলেই শুরু হয় ভারত থেকে আমদানিকৃত লোহা ও লৌহ জাতীয় পণ্যের আনলোডের বিকট শব্দ। যে শব্দের কম্পন শুরু হয় সারা এলাকাজুড়ে। স্কুল-কলেজ পড়–য়া শিক্ষার্থীরা ও ছোট শিশুরা থাকে আতংকে। এ ব্যাপারে এলাকাবাসী কয়েকবার বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত ও মৌখিক ভাবে বিষয়টির সমাধান চেয়ে মানবিক আবেদন করলেও অদ্যবধি কোন কাজ হয়নি। তাছাড়া এলাকাবাসী তাদের আশু সমাধান ও প্রাচীর সরাতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে কয়েকবার। এ ব্যাপারে মানবাধিকার সংস্থাগুলো বন্দী বসবাসকারীদের পক্ষে সমাধান চেয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করলেও তার কার্যকারিতার ধীরগতি ভাবিয়ে তুলেছে বসবাসকারীদের। কবে নাগাত এর সমাধান হবে তারা তা নিশ্চিত জানেন না কেউ।
তাছাড়া বন্দরের পার্শ্ববতি বসবাসকারী ইসরাইল সর্দারের বাড়ির সামনেই বসানো হয়েছে আমদানি-রপ্তানী পণ্য পরীক্ষার স্ক্যানিং মেশিন। যে মেশিন থেকে বের হয় দুষিত বায়ু। যা মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর। তাছাড়া আমদানি পণ্য নিয়ে আসা ভারতীয় ট্রাকের ইঞ্জিনের কালো ধুয়ায় বায়ু দুষন তো নিত্য দিনের ঘটনা। এ দিকে বন্দরে ভারী জাতীয় মালামাল ও লৌহজাত পণ্য সামগ্রী লোড আনলোডের ফলে বসবাসকারীদের বাড়িঘরে প্রচন্ড ঝাঁকুনিসহ উচ্চ শব্দের সৃষ্টি হয়। যা বসবাসকারীদের জন্য অনুপোযোগী হয়ে উঠেছে বলে জানান বন্দরের পার্শ্ববর্তী বসবাসকারীরা।
এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী বসবাসকারী ইসরাইল সর্দার ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এনামুল হক লিটন জানান, এলাকার কোন বাড়িতে এখন আর ভাড়াটিয়ারা থাকতে চায় না। অনেক বাড়ি ভাড়াটিয়ার অভাবে ভুতুড়ে অন্ধকারে পড়ে আছে। তবে জনস্বার্থে জরুরী ভিত্তিতে ও বন্দরের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধির লক্ষে এ এলাকাটি অধিগ্রহন করলে সকল সমস্যার সমাধান হবে নিশ্চিত।
শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মোহম্মাদ ইউসুফ আলী জানান, বন্দরের পার্শ্ববতী সমস্যা কবলিত এলাকায় বসবাসরত মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকিপুর্ণ। এভাবে বায়ু দুষন ও কম্পন চলতে থাকলে ক্ষতিগ্রস্থ হবে তারা।
যশোর পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক হারুন অর রশীদ জানান, বন্দী জীবন বসবাসকারী জনগন এবং ওই এলাকায় পরিবেশ দুষন হচ্ছে এমন অভিযোগ আমরা পেয়েছি। ইতিমধ্যে একটি তদন্ত টিমের কাজও চলছে।
বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিচালক আব্দুল জলিল জানান, এলাকাবাসীর সমস্যা ও অভিযোগ আমরা লিখিত ভাবে পেয়েছি এবং বন্দর কর্তৃপক্ষের উর্ধতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। বিষযটি নিয়ে আমাদের সমাধানের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের সুপারিনটেনডেন্ট প্রকৌশলী মোহাম্মদ হাসান আলী জানান, বন্দরের (টিটিআই) পশ্চিম পার্শ্বে ৬৫টি পরিবারের প্রায় ৫ শতাধিত মানুষের সমস্যার কথা আমরা জেনেছি। বন্দরের প্রাচীর নির্মানের ফলে তারা আটকা পড়েছে। তাছাড়া এলাকাটি বন্দর এলাকায় হওয়ায় বায়ু দুষনসহ বসবাসে নানা সমস্যাও আছে। এ এলাকাটির সমস্যা সমাধান নিয়ে আমাদের চেষ্টা চলছে।
এলাকাবাসী তাদের বন্দী জীবনের মুক্তি ও দীর্ঘদিনের সমস্যার সমাধান চেয়ে প্রধান মন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
Get the latest Zoom Bangla News first — Follow us on Google News, Twitter, Facebook, Telegram and subscribe to our YouTube channel.