জুমবাংলা ডেস্ক : শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার আবুল কালাম আজাদ ওরফে ‘কবি কালাম’ ৬৭ বছর বয়সে জিপিএ-২.৯৫ পেয়ে এসএসসি পরীক্ষায় পাশ করেছেন। সোমবার (২৮ নভেম্বর) দুপুরে পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়।
তিনি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন পাশের জেলা জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার চন্দ্রাবাজ রশিদা বেগম হাইস্কুল থেকে ২০২২ সালের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন।
আবুল কালাম আজাদ জানান, তার বাড়ি শ্রীবরদী উপজেলার খড়িয়াকাজীরচর ইউনিয়নের লঙ্গরপাড়া গ্রামে। এলাকায় তিনি ‘কবি কালাম’ নামে পরিচিত। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তার জন্ম তারিখ ১৯৫৫ সালের ১ মার্চ। ১৯৭৬ সালে তিনি দশম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। ওই বছর তাদের বাড়িতে আগুন লাগে। আগুনে তার বই-খাতাসহ পরিবারের সবকিছু পুড়ে যায়। আর্থিক সংকটে পড়ে তার পরিবার। কাজ শুরু করতে হয় তাকে। পড়াশোনা আর শেষ করা হয়নি তার। তিনি ঢাকায় চলে আসেন। চাকরি নেন একটি ডকইয়ার্ডে। ঢাকায় থাকেন ২২ বছর। ঢাকায় থাকাকালে বিয়ে করেন। ১৯৯৫ সালে চাকরি নিয়ে সৌদি আরবে চলে যান। সেখানে দীর্ঘ ১৮ বছর প্রবাস জীবন কাটান। ২০১৩ সালে শ্রীবরদীর গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসেন তিনি।
তিনি আরও জানান, দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেও এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া হয়নি। সেই দুঃখ তিনি ভুলতে পারেননি। পড়াশোনার প্রতি দুর্বলতা থেকেই তিনি ২০২০ সালে বকশীগঞ্জের চন্দ্রাবাজ রশিদা বেগম হাইস্কুলে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন এসএসসি প্রোগ্রামে ভর্তি হন। ২০২১ সালে প্রথম সেমিস্টারে উত্তীর্ণ হন। এরপর গত সেপ্টেম্বরে রাহিলা কাদির উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় সেমিস্টার পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন।
পরীক্ষায় পাশের পর কেমন লাগছে- জানতে চাইলে আবুল কালাম আজাদ বলেন, ছোট ছেলে আরিফুলের কাছ থেকে পরীক্ষায় পাশের খবরটি প্রথম জানতে পারেন তিনি। এসএসসি পাশ করতে পেরে তার খুব ভালো লাগছে। আমার চাইতে আমার স্ত্রী ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যসহ এলাকাবাসী খুবই খুশি হয়েছেন। এই বৃদ্ধ বয়সে পড়ালেখা করাটা ছিল তার কাছে একটি চ্যালেঞ্জের বিষয়। সেই চ্যালেঞ্জে তিনি প্রাথমিকভাবে জয়ী হয়েছেন। এখন আরও অনেক দূর যেতে হবে। তিনি উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের জন্য পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
আবুল কালাম আজাদ বলেন, পড়ালেখার প্রতি আমার ভীষণ দুর্বলতা। সব সময় সংবাদপত্র ও বই পড়ি। গান লিখি। কবিতা লিখি। কয়েকটি উপন্যাস ও ছোটগল্প লিখেছি। এসবের পাণ্ডুলিপি যত্নের সঙ্গে সংরক্ষণ করছি। শিক্ষা আর জ্ঞানার্জনের জন্য বয়স কোনো বাধা নয়। প্রয়োজন শুধু ইচ্ছাশক্তি। সুশিক্ষা মানুষের জীবন ও মনকে উন্নত করে। কুসংস্কার থেকে মুক্ত রাখে।
খড়িয়াকাজীরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. দুলাল মিয়া বলেন, স্ব-শিক্ষিত আবুল কালাম আজাদের এসএসসি পরীক্ষায় পাশের খবর শুনে তিনি ও এলাকার লোকজন খুবই খুশি হয়েছেন। তিনি বৃদ্ধ বয়সে ধৈর্য ধরে পড়ালেখা করে এসএসসি পাশ করেছেন। তার এই কৃতিত্বের জন্য পরিষদের পক্ষ থেকে তাকে সংবর্ধনা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
৫২ বছর বয়সে মহসিনের এসএসসি পাসে স্ত্রী-সন্তানসহ গ্রামবাসীদের খুশি
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।