বিজ্ঞান ও প্রযক্তি ডেস্ক : বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী বিশ্ববাসী ৫-জি যুগে রয়েছে, তবে প্রযুক্তির পরবর্তী ধাপ হিসেবে ৬-জি ইন্টারনেটের আবির্ভাবের ঘোষণা ইতোমধ্যে উঠে এসেছে। উন্নত দেশগুলো ষষ্ঠ প্রজন্মের এই প্রযুক্তিকে বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে, যেখানে বাংলাদেশ এখনো মূলত ফোর-জি’র সীমানাতেই সীমাবদ্ধ। চলুন জেনে নেই, কেমন হতে যাচ্ছে ৬-জি প্রযুক্তি।
৬-জি কী?
৬-জি হলো ষষ্ঠ প্রজন্মের ইন্টারনেট যা ৫-জি’র পরবর্তী উন্নত সংস্করণ। এই প্রযুক্তি ইন্টারনেট ব্যবহারের গতি, স্থিতিশীলতা এবং সংযোগের ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটাবে। প্রতিটি নতুন জেনারেশনই পূর্ববর্তী প্রযুক্তির চেয়ে আরও গতিশীল ও শক্তিশালী হয়ে আসে, এবং ৬-জি এর ব্যতিক্রম নয়।
৬-জি প্রযুক্তি নিয়ে কারা কাজ করছে?
বিশ্বজুড়ে বেশ কয়েকটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এবং দেশ ৬-জি প্রযুক্তির গবেষণা ও উন্নয়নে কাজ করছে। চীনের ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান গিস্পেস প্রথমবারের মতো ৬-জি নেটওয়ার্কের একটি পরীক্ষামূলক সংস্করণ তৈরি করার দাবি করেছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা চ্যাং গুয়াং জানিয়েছেন যে, তাদের স্যাটেলাইট গ্রাউন্ড স্টেশন প্রতি সেকেন্ডে ১০০ গিগাবাইট পর্যন্ত ডেটা স্থানান্তর করতে সক্ষম। এছাড়াও, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রও এই প্রযুক্তি নিয়ে ব্যাপক গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে। মার্কিন ফেডারেল কমিউনিকেশন কমিশন (FCC) এবং জাপানের ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা যৌথভাবে একটি বিশেষ সিলিকন-ভিত্তিক মাইক্রোচিপ তৈরি করেছেন, যা প্রতি সেকেন্ডে ১১ গিগাবাইট গতিতে ডেটা পাঠাতে পারে। যেখানে ৫-জি’র সীমা সর্বোচ্চ ১০ জিবিপিএস, সেখানে ৬-জি প্রযুক্তি এক বিশাল অগ্রগতি আনবে।
এদিকে, দক্ষিণ কোরিয়া ২০২৬ সালের মধ্যে ৬-জি নেটওয়ার্ক উন্মোচনের ঘোষণা দিয়েছে। দেশটির বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্প্রতি ‘কে-নেটওয়ার্ক ২০৩০’ নামক একটি কৌশলগত পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে।
৬-জি কীভাবে কাজ করবে?
৬-জি প্রযুক্তি শুধুমাত্র ইন্টারনেটের গতি বৃদ্ধির জন্য নয়, এটি জননিরাপত্তা, শিল্পখাত এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটাবে। এর মাধ্যমে- অনলাইন নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী হবে: অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড শনাক্তকরণ ও প্রতিরোধ করা সহজতর হবে। চিকিৎসা বিজ্ঞানে নতুনত্ব আসবে: রিমোট মেডিকেল চেকআপ এবং রোবটিক সার্জারির মাধ্যমে চিকিৎসা পদ্ধতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। রিয়েল-টাইম হলোগ্রাফিক যোগাযোগ: মানুষ একে অপরের সাথে ভার্চুয়াল স্পেসে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারবে। ভবিষ্যতের স্মার্ট শহর ও স্মার্ট হোম: ইন্টারনেট অব থিংস (IoT) ব্যবহার করে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থাপনা আরও উন্নত হবে।
৬-জি কবে নাগাদ আসবে?
প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০৩০ থেকে ২০৩২ সালের মধ্যে ৬-জি ইন্টারনেট বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যিকভাবে চালু হতে পারে। স্যামসাং, নোকিয়া, হুয়াওয়ে ইতোমধ্যে এই প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছে, যাতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নতুন ডিভাইসগুলোতে ৬-জি চালু করা যায়।
৬-জি চালুর প্রত্যক্ষ সুবিধা
৬-জি চালু হলে ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। এর কিছু উল্লেখযোগ্য সুবিধা হলো: নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সংযোগ: ৬-জি’র মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহারে ‘লোডিং টাইম’ বলে কিছু থাকবে না। ড্রোনের মাধ্যমে পণ্য সরবরাহ: ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো ড্রোনের মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে পণ্য পৌঁছে দিতে পারবে। রোবটিক সার্জারি ও স্বাস্থ্যসেবা: দূরবর্তী চিকিৎসা আরও সহজ ও নির্ভরযোগ্য হবে।
Top 10 Best 5G Phone : ১০ হাজার টাকার মধ্যে সেরা 5G স্মার্টফোন
বাংলাদেশের অবস্থান কোথায়?
বাংলাদেশে বর্তমানে ফোর-জি নেটওয়ার্কই প্রধান প্রযুক্তি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ২০২১ সালে সীমিত পরিসরে ফাইভ-জি চালু করা হয়, তবে তা এখনও পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। তবে প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বাংলাদেশও বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে দ্রুত ৬-জি প্রযুক্তির অন্তর্ভুক্ত হবে। ৬-জি প্রযুক্তির বিস্তৃতি কেবল দ্রুতগতির ইন্টারনেট ব্যবহারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং এটি পুরো বিশ্বব্যবস্থায় এক নতুন বিপ্লব ঘটাবে। এই প্রযুক্তির ফলে ‘গ্লোবাল ভিলেজ’-এর ধারণা আরও সুসংহত হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কেউ যে সুবিধা পাচ্ছে, সেই একই সুবিধা আফ্রিকা কিংবা এশিয়াতেও পাওয়া যাবে। যে সময়টি আসছে, তা শুধুমাত্র গতি বাড়ানোর নয়, বরং বৈশ্বিক যোগাযোগকে আরও সমান্তরাল ও কার্যকর করার সময়। ৬-জি শুধু আমাদের জীবন সহজ করবে না, এটি পুরো মানবসভ্যতার বিকাশে যুগান্তকারী পরিবর্তন আনবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।