জুমবাংলা ডেস্ক : দেশের বিভিন্ন স্থানে সোমবার (২৮ এপ্রিল) বজ্রপাতে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে কুমিল্লার মুরাদনগর ও বরুড়া উপজেলায় চারজন, কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম ও মিঠামইনে তিনজন, নেত্রকোনার মদনে একজন, সুনামগঞ্জের শাল্লায় একজন এবং চাঁদপুরের কচুয়ায় একজন মারা গেছেন।
কুমিল্লা
কুমিল্লার মুরাদনগরে ধান কাটতে গিয়ে বজ্রপাতে দুই কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার (২৮ এপ্রিল) দুপুরে উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানাধীন কোরবানপুর পূর্ব পাড়া কবরস্থানের পাশের জমিতে এ ঘটনা ঘটে।
মৃতরা হলেন- পূর্বধইর পূর্ব ইউনিয়নের কোরবানপুর পশ্চিম পাড়ার মৃত বীর চরন দেবনাথের ছেলে নিখিল দেবনাথ (৫৫) ও উপজেলার আন্দিকোট ইউনিয়নের দেওড়া গ্রামের জসিম উদ্দিন ভূঁইয়ার ছেলে জুয়েল ভূঁইয়া (৩২)।
স্থানীয় ইউপি সদস্য সফিকুল ইসলাম জানান, কোরবানপুর পূর্ব পাড়া কবরস্থানের পাশের মাঠে কৃষকরা ধান কাটার সময় বৃষ্টি শুরু হয়। এ সময় আচমকা বজ্রপাতে আমাদের গ্রামের নিখিল ও দেওড়া গ্রামের জুয়েল মারা যায়।
বাঙ্গরা বাজার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহফুজুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
কুমিল্লার বরুড়ায় ঘুড়ি ওড়াতে গিয়ে বজ্রপাতে দুই কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় গুরুতর আহত হয়েছে এক শিশু। সোমবার (২৮ এপ্রিল) উপজেলার খোশবাস উত্তর ইউনিয়নের পয়ালগুচ্ছ গ্রামে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
মৃতরা হলো- মো. খোকন মিয়ার ছেলে জিহাদ (১৪) ও মো. বিল্লাল হোসেনের ছেলে ফাহাদ (১৩)। আহত হয়েছে কামাল হোসেনের ছেলে আবু সুফিয়ান (৭)।
জানা গেছে, তিনজন মিলে বাড়ির পাশের মাঠে ঘুড়ি ওড়াতে যায়। হঠাৎ বজ্রপাত হলে তারা মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। পরিবারের সদস্যরা আহত তিনজনকে বরুড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাজেদুর রহমান জানান, দুপুর সোয়া বারোটার দিকে দুই কিশোর ও ১ শিশুকে হাসপাতাল নিয়ে আসা হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক জিহাদ ও ফাহাদকে মৃত ঘোষণা করেন। আহত সুফিয়ানকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
নেত্রকোনা
নেত্রকোনার মদনে মাদ্রাসা যাওয়ার পথে বজ্রপাতে আরাফাত (১০) নামের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সোমবার (২৮ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৬টার দিকে উপজেলার তিয়শ্রী ইউনিয়নের তিয়শ্রী গ্রামে নিজ বাড়ির সামনেই বজ্রপাতে মৃত্যু হয় তার।
আরাফাত উপজেলার তিয়শ্রী গ্রামের আব্দুস ছালামের ছেলে।
মদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অলিদুজ্জামান ও সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য মোতাহার হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
স্থানীয় লোকজন ও মৃতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, আরাফাত বাড়ির পাশের একটি হাফেজিয়া মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে। প্রতিদিনের মতো সোমবার ভোরে ফজরের নামাজ শেষে মা বাবাকে বলে মাদ্রাসায় যাচ্ছিল আরাফাত। মাদ্রাসার পাশে পৌঁছালেই হঠাৎ বজ্রপাতে ঘটনাস্থলে মৃত্যু হয় তার।
মদন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) অলিদুজ্জামান জানান, আরাফাত নামের এক মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর বজ্রপাতে মারা যাওয়ার খবর পেয়েছি। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী তার পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা করা হবে।
কিশোরগঞ্জ
কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম ও মিঠামইনে বজ্রপাতে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার (২৮ এপ্রিল) সকালে অষ্টগ্রাম ও মিঠামইনের পৃথম স্থানে এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে।
তারা হলেন- ইন্দ্রজিত দাস (৩০), স্বাধীন মিয়া (১৪) ও ফুলেছা বেগম (৬৫)।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সোমবার সকালে অষ্টগ্রাম উপজেলার কলমা ইউনিয়নের হালালপুর গ্রামের জতীন্দ্র দাসের ছেলে ইন্দ্রজিৎ দাস হাওরে ধান কাটতে যান। এ সময় বজ্রপাতে ইন্দ্রজিৎ দাস মারা যান। এ ছাড়া দুপুরে আব্দুল্লাহপুর ইউনিয়নের খয়েরপুর গ্রামের বাসিন্দা ইদ্রিস মিয়ার ছেলে স্বাধীন মিয়া (১৪) খয়েরপুর হাওরে মাছ ধরতে যায়। মাছ ধরার সময় বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলে মারা যায় সে।
অন্যদিকে মিঠামইন উপজেলার কেওয়ারজোড় ইউনিয়নের রানীগঞ্জ গ্রামে ধানের খড় ঢাকতে গেলে বজ্রপাতে মৃত আশ্রব আলীর স্ত্রী ফুলেছা বেগম (৬৫) মারা যায়। বজ্রপাতে মর্মান্তিক মৃত্যু হয়।
অষ্টগ্রাম থানার ওসি রুহুল আমিন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, সকাল ও দুপুরে পৃথক স্থানে বজ্রপাতে দুজন মারা গেছেন।
সুনামগঞ্জ
সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলায় হাওরে গরুকে ঘাস খাওয়াতে গিয়ে বজ্রপাতে মো. রিমন তালুকদার (২০) নামে এক কলেজছাত্রের মৃত্যু হয়েছে।
সোমবার (২৮ এপ্রিল) সকালে উপজেলার আটগাঁও ইউনিয়নের আটগাঁও গ্রামের কাছের বুড়িগাঙ্গাল হাওরে এ ঘটনাটি ঘটে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শাল্লা থানার ওসি মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম।
মৃত্যু হওয়া রিমন তালুকদার শাল্লা কলেজের ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি আটগাঁও গ্রামের মো. জাজেদ তালুকদারের ছেলে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিনের মতো সকালে কালিকোটা হাওরে গরুকে নিয়ে ঘাস খাওয়াতে যায় সে। এ সময় হঠাৎ বৃষ্টিপাত শুরু হলে বজ্রপাতে রিমন তালুকদার ও তার সঙ্গে নিয়ে যাওয়া একটি গরুর মৃত্যু হয়।
শাল্লা থানার ওসি মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, বজ্রপাতে এক কলেজ শিক্ষার্থী ও একটি গরুর মৃত্যু হয়েছে। আইনি পক্রিয়া শেষে শিক্ষার্থীর মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
চাঁদপুর
কালবৈশাখী ঝড়ে চাঁদপুরের কচুয়ায় বজ্রপাতের বিকট শব্দে হার্ট অ্যাটাক করে বিশকা রানী সরকার (৪৫) নামে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। সোমবার দুপুরে উপজেলার উত্তর কচুয়া ইউনিয়ন পরিষদের নাহারা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
বিশকা রানী সরকার চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার ৩নং ইউনিয়নের নাহারা গ্রামের পূর্বপাড়া মন্দির ওয়ালা বাড়ির হরিপদ সরকারের স্ত্রী।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, বেলা সাড়ে ১১টায় তারা স্বামী-স্ত্রী দুজন ধানের জমিতে কাজ করছিলেন। ওই সময় বজ্রপাতের শব্দ শুনে স্ত্রী বিশকা রানী সরকার মাটিতে পড়ে যান। পরে তার স্বামী হরিদাস সরকার তাকে উদ্ধার করে কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক বিশকা রানী সরকারকে মৃত ঘোষণা করেন।
চিকিৎসকরা জানান, তার শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই। তবে বজ্রপাতে আতঙ্কিত হয়ে মারা যেতে পারেন। হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে মাঠে কাজ করার সময় বজ্রপাতে এক কৃষক মারা গেছেন। এ সময় আহত হয়েছেন আরও একজন। সোমবার (২৮ এপ্রিল) দুপুরে উপজেলার সোনারামপুর ইউনিয়নের চর-মরিচাকান্দি বিলপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
মৃত মানিক মিয়া (৬০) চর-মরিচাকান্দি বিলপাড়ার বাসিন্দা। আহত হয়েছেন হানিফ মিয়া (৬৫)।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দুপুরের দিকে জমিতে কৃষি কাজ করে বাড়ি ফেরার সময় আকস্মিক বজ্রপাত হলে তারা গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে দ্রুত বাঞ্ছারামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক মানিক মিয়াকে মৃত ঘোষণা করেন।
অন্যদিকে, হানিফ মিয়ার অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বাঞ্ছারামপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোর্শেদুল আলম চৌধুরী বলেন, ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছি। আইনি প্রক্রিয়া শেষে ময়নাতদন্ত ছাড়া মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।