জুমবাংলা ডেস্ক : ছয় বছর ধরে রাস্তার পাশে ঝুপড়ি ঘর বেঁধে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন ঠাকুরগাঁওয়ের সালন্দর সিংপাড়া গ্রামের ভূমিহীন রিকশা চালক হজরত আলী।
বাঁশের খুঁটির ওপর পাটকাঠি আর চটের বেড়া দিয়ে তৈরি করা হয়েছে ঘরটি। তাতেই কোনোমতে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নিয়েছে হজরত আলীর পরিবার। নেই বিশুদ্ধ পানি কিংবা স্যানিটেশনের ব্যবস্থা।
আগে রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন রোগ-শোক আর বয়সের ভারে রিকশাও চালাতে পারছেন না হজরত আলী। স্ত্রী আমেনার দিনমজুরি আর ছোট মেয়ে অন্যের বাড়িতে কাজ করে যেটুকু খাবার যোগাড় করেন তা দিয়ে খেয়ে-না খেয়ে কোনোরকমে বেঁচে আছে পরিবারটি।
অর্থাভাবে বন্ধ হয়ে গেছে ছোট মেয়ের পড়াশোনা। মেয়েটিকে বিয়েও দিতে পারছেন না এই অর্থকষ্টের কারণে। সংসারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন হজরত। উপার্জনের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়া স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে জীবন কাটে নিদারুণ অনটনে। রাস্তার পাশে ঝুপড়ি ঘরে মানবেতর জীবনযাপন করা পরিবারটিকে দেখার মতো যেন কেউই নেই!
শুক্রবার (২৫ ডিসেম্বর) একটি গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা হয় হজরত আলী ও তার পরিবারের।
হজরত জানান, দীর্ঘ ছয় বছর ধরে এই ঝুপড়িতে তাদের বসবাস। তার দুই মেয়ে ও দুই ছেলে। ছেলেরা ঢাকায় কাজ করে। বাবা-মায়ের কোনো খোঁজ-খবর তারা নেয় না। শেষ সম্বল বসতবাড়িটি বিক্রি করে বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছিলেন। তাই বাধ্য হয়েই সরকারি রাস্তার পাশে ঝুপড়ি ঘর বেঁধে জীবনযাপন করতে হচ্ছে।
এ পর্যন্ত কোনো ধরনের সরকারি সহায়তা পাননি বলেও জানান এই বৃদ্ধ।
হজরতের স্ত্রী আমেনা বলেন, ‘সে এখন রিকশা চালাতে পারে না। মেয়েকে রেখে কাজে গেলে এলাকার বখাটে ছেলেরা উৎপাত শুরু করে। সেজন্য সব সময় দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়। আমি আখের খামারে দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালাই।’
এই নারী আরও বলেন, ‘বয়সের কারণে আমাকে কেউ কাজে নিতে চায় না। তাই যেদিন কাজে যেতে পারি না, সেদিন না খেয়েই থাকতে হয় সবাইকে। শুনেছি সরকার নাকি গৃহহীনদের ঘর তৈরি করে দিচ্ছে। কিন্তু আমরা কার কাছে গেলে সেই সহযোগিতা পাব জানি না।’
স্থানীয় তরুণ মামুন বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে পরিবারটি রাস্তার পাশে ঝুপড়ি ঘরে থাকছে। কয়েকদিন আগে ওই ঘরটিকে একটি ট্রাক্টর এসে ভেঙে দেয়। তারপর থেকে তাদের বিপদ আরও বেড়েছে। শুনেছি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গৃহহীনদের পাকা ঘর তৈরি করে দিচ্ছেন। এমন একটি ঘর পেলে পরিবারটি একটু শান্তিতে বসবাস করতে পারবে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় সালন্দর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাহাবুব হোসেন মুকুল বলেন, ‘আমি আগে এই পরিবারটি সম্পর্কে জেনেছি। তাদেরকে একটি সরকারি ঘরসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা পাইয়ে দেয়ার ব্যাপারে আমার জোর প্রচেষ্টা থাকবে।’
ঠাকুরগাঁও উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘মুজিববর্ষে সরকার গৃহহীনদের জন্য পাকা ঘরের ব্যবস্থা করছে। আমরা হজরত আলীর পরিবারের বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’ সূত্র : জাগো নিউজ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।