বিনোদন ডেস্ক: বার্ধ্যক্যজনীত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত তিনি। তবুও লাঠিতে ভর দিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হেটে এফডিসিতে আসেন। বয়স তার প্রায় ৮০। এই বয়সেও অভিনয় চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে সেটা সিনেমায় নয় নাটকে। তার নাম জামিলুর রহমান শাখা। এফডিসিতে সবাই তাকে ‘শাখা ভাই’ নামেই ডাকে। দৈনিক সমকালের প্রতিবেদক অনিন্দ্য মামুন-এর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বিস্তারিত।
পর্দায় তিনি বাবা, জজ সাহেব, কুলি, চাকর, শিক্ষক থেকে এমন কোনো ‘চরিত্র’ নেই যা করেননি! ৪২ বছরের অভিনয় ক্যারিয়ারে ছয় শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন এই শাখা। তবে অভিনয় জীবনে তার একটি আফসোস তাড়া করে বেড়ায়। কখনও ‘সেন্ট্রাল ক্যারেক্টার’-এ অভিনয়ের সুযোগ পাননি প্রবীণ এই অভিনেতা।
এফডিসির প্রযোজক সমিতি, পরিবেশক সমিতির সামনেই দেখা হয় আঞ্জুমান, মাঝির ছেলে ব্যারিস্টার, হৃদয়ের কথা, খায়রুন সুন্দরী, সত্যের মৃত্যু নেই, প্রেম পিয়াসী, আমার প্রাণের স্বামীর মতো আলোচিত সব সিনেমায় ছোট ছোট চরিত্রে অভিনয় করে পরিচিতি পাওয়া জৈষ্ঠ্য অভিনেতা জামিলুর রহমান শাখার সঙ্গে। চলচ্চিত্রের মানুষদের কাছে তিনি ‘শাখা ভাই’ হিসেবে পরিচিত।
গল্পের শুরুতেই এই অভিনেতা জানান, তিনি দোহার নবাবগঞ্জ এলাকার একটি গ্রামে থাকেন। সেখান থেকে একটি চেক পেতে ঢাকায় এসেছিলেন। সেই সঙ্গে ভোটের আমেজ চলছে এফডিসিতে, সেটা জেনেই ঘুরে দেখতে এসেছিলেন বুধবার (১২ জানুয়ারি)। বলছিলেন, জ্যাম ঠেলে এফডিসি আসতে বেগ পোহাতে হয়ে তাকে।
ঢাকায় থাকেন না কেন জিজ্ঞেস করতেই জামিলুর রহমান শাখা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন, আমাদের যখন ক্যারিয়ার শুরু তখনকার অনেক পরিচালক আর বেঁচে নেই। অনেক শিল্পীরাও মারা গেছেন। যারা আছেন তারা সেভাবে কাজ করেন না। তবে অধিকাংশই ভালো আছেন। আমি গত ১৭ বছর যাবত গ্রামে থাকি। পরিবার নিয়ে ঢাকায় থাকার সামর্থ্য নেই। এতো বাসা ভাড়া দিয়ে পরিবার নিয়ে থাকা সম্ভব না। আমার দুই ছেলে মেয়ে। মেয়ে ঢাকায় পড়ে। ছেলে বাইরে চাকরী করে। সপ্তাহে একদিন বাড়িতে আসে।
এই বয়সে ঢাকায় বাস করা আমার জন্য জরুরী না। এখন এতোটা সিনেমায় কাজ হয় না। টুকটাক নাটকে কাজ করি। যেদিন শুটিং থাকে আসি। জীবনে সাড়ে ছয়শো’র মতো সিনেমায় অভিনয় করেও সেন্ট্রাল চরিত্র পাইনি। এটাকে আমি মনে করি আমার অক্ষমতা। তবে আমি নায়ক হওয়ার কম চেষ্টা করিনি। কিন্তু বলা হতো, শাবানার পাশে স্টার কাস্ট লাগবে। এভাবেই আমাকে ফিরিয়ে দেয়া হতো। এটা আমি আমার নিজের ব্যর্থতাই বলবো। আমি যদি যোগ্য হতাম তাহলে একবার হলেও সুযোগ পেতাম।
তবে এই জীবনে আমার আর তেমন কিছু চাওয়ার নেই। আমাকে দিয়ে সব ধরনের চরিত্র করানো হয়েছে। কেন্দ্রীয় চরিত্র এবং নায়ক বাদে কোনো চরিত্র বাদ আছে কিনা জানা নেই। তবে সবচেয়ে বেশি মনে পড়ে ‘রাজধানী’ সিনেমার কথা। অনেকটা ভিলেন টাইপের চরিত্র করেছিলাম। এছাড়া একবার জসিম ভাইয়ের কথায় ফাইটিংয়ের শুটিংয়ে সত্যি সত্যি তার বুকে ঘুষি মেরেছিলাম। এই জিনিসটা বেশি বেশি মনে পড়ে।
২০১৯ সাল নাগাদ চরমভাবে অর্থকষ্টে ভুগছিলেন জামিলুর রহমান শাখা। তখন শিল্পী সমিতি থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা অনুদানের ব্যবস্থা করে দেয়া হয় বলে জানান এই অভিনেতা। এরপর থেকে সেই টাকার উপর নির্ভরশীল তার পরিবার।
জামিলুর রহমান শাখা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়ীপত্র অনুদান পাই। সেখান থেকে প্রতিমাসে আট হাজার টাকা করে পাই। আমার মেয়ে প্রতিমাসে দেয় তিন হাজার টাকা। এই এগারো হাজার টাকায় সংসার চালাতে হয়। এভাবেই সংসার চলে। অভিনয় তো তেমন করা হয় না। গাড়িতে চড়ে দূর যাত্রায় শুটিংয়ে যেতে সবচেয়ে কষ্ট হয়। তাই দূরে শুটিং হলে করি না।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।