আন্তর্জাতিক ডেস্ক : একটানা ভারিবৃষ্টির কারণে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে চীনের বন্যা। পানিতে ভাসছে দেশটির পূর্ব ও দক্ষিণ অঞ্চল। হুবেই, জিয়াংজি এবং ঝেঝিয়াং প্রদেশের হাজার হাজার ঘরবাড়ি পানিতে তলিতে গেছে। উঁচু বাঁধের ওপর আশ্রয় নিয়েছে লাখ লাখ মানুষ। কিন্তু পানির চাপে বাঁধগুলোতেও ফাটল দেখা দিয়েছে। কখন ভেঙে পড়ে- সেই আশঙ্কায় পালা করে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছে অধিবাসীরা। খবর সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের।
খবরে বলা হয়েছে, গত ৭০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে চীন। চলতি বছরের জুন মাস থেকেই দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলজুড়ে মুষলধারে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। কিন্তু বর্ষার শুরুতেই নতুন মাত্রায় ভারিবৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। লাগাতার এই বর্ষণে একাধিক নদীর পানি উপচে প্লাবিত হয়েছে বিস্তীর্ণ অঞ্চল। কয়েকটি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে। কোথাও কোথাও ভূমিধসের ঘটনা ঘটছে। নদীর তীরবর্তী অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষকে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
সোমবার (১৩ জুলাই) চীনের জরুরি ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণলায়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, জুন থেকে বন্যার কবলে পড়ে চীনে এরই মধ্যে ক্ষতির মুখে পড়েছে প্রায় চার কোটি মানুষ (৩ কোটি ৮০ লাখ)। এই ক্ষতিগ্রস্তের সংখ্যা কানাডার মোট জনসংখ্যার চেয়েও বেশি। এরই মধ্যে ২২ লাখের বেশি মানুষ তাদের বাসস্থান হারিয়েছে। আর মৃত্যু ও নিখোঁজ হয়েছেন ১৪১ জন।
গত রোববার চীনা কর্তৃপক্ষ বন্যা সর্তকবার্তাকে ২য় সর্বোচ্চ স্তরে উন্নীত করেছে। চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এই বন্যা পরিস্থিতিকে ‘খুবই মারাত্মক’ হিসেবে উল্লেখ করে জীবন ও সম্পদ রক্ষায় আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানিয়েছেন।
করোনা আর বন্যা একসঙ্গে দাপুটে ভাব দেখানোর কারণে পুনর্বাসন প্রক্রিয়া খুবই জটিল আকার ধারণ করেছে। অনেক এলাকায় করোনার দাপট কমাতে লকডাউন কার্যকর থাকার মধ্যেই আবার আঘাত হেনেছে এবারের মারাত্মক বন্যা।
গ্রীষ্মে চীনে বন্যাকে স্বাভাবিক ধরা হলেও ব্যতিক্রম এবার। কারণ, দেশটির ৩১টি প্রদেশের মধ্যে বন্যার কবলে পড়েছে ২৭টি। কোন কোন অঞ্চলে বন্যার পানির উচ্চতা ১৯৯৮ সালের বন্যার চেয়ে বেশি উচ্চতায় ঠেকেছে। ওই বছর বন্যায় দেশটির ৩ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।
চীনের ৪৪৩টি নদীর মধ্যে ৩৩টির পানি ফুলে ফেঁপে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। চীনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ১৯৬১ সালের পর এবারই ইয়াংজ্জি নদীর অববাহিকায় সর্বোচ্চ উঠেছে পানির উচ্চতা।
দেশটির জাতীয় আবহাওয়া কেন্দ্রের পূর্বাভাস বিভাগের প্রধান চেন তাও জানান, বন্যা কবলিত কোন কোন অঞ্চলে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে এটা নিয়ন্ত্রণ করা খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে।
করোনা মহামারির দাপট আর এই ভয়াবহ বন্যায় বন্দিদশায় কঠিন হয়ে পড়েছে চীনের অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানো। কয়েক দশকের মধ্যে ভয়াবহ বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীন। করোনার কারণে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে চীনের অর্থনীতি সংকুচিত হয় ৬.৮ শতাংশ। ১৯৭৬ সালের পর বেইজিং এত বড় অর্থনৈতিক সংকোচনের মুখে পড়েছে।
গত মে-তে কর না নেয়া, অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলমান রাখা, দেশটির ৯০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করাসহ মহামারি কাটিয়ে উঠতে প্রণোদনার আওতায় ৫শ’ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করে চীন সরকার।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।