জুমবাংলা ডেস্ক : ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার ডুমাইন ইউনিয়নের ডুমাইন গ্রামের ১০ বছরের শিশু ফয়সাল হত্যাকাণ্ডের ৯ বছর পর উচ্চ আদালতের নির্দেশে ওই মামলায় তদন্ত শুরু করেছে সিআইডি। আর তদন্তে নেমে এরইমধ্যে সিআইডির হাতে নতুন করে গ্রেফতার হয়েছে দু’জন। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আজ রোববার দু’দিনের রিমাণ্ডে নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। শিঘ্রই ওই মামলার তদন্ত শেষ হবে জানিয়েছে সিআইডি।
গ্রেফতার ওই দু’জন হলেন, ডুমাইনের জসীম মোল্যা (৩৫) ও তুজাম বিশ্বাস (৫০)। গত ২ জুলাই সিআইডির অভিযানে পৃথকভাবে তাদের ডুমাইন গ্রাম হতে গ্রেফতার করা হয়।
জানা গেছে, তুজাম বিশ্বাস একটি রাইস মিলের মালিক। শিশু ফয়সালের লাশ উদ্ধারের পর সময় তার প্যান্টে লেগে থাকা কুড়া ও পোড়া মবিলের সূত্র ধরে তাকে গ্রেফতার করা হয়। হত্যার আগে তার রাইস মিলে নিয়ে ফয়সালকে নির্যাতন করা হয় বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। ফয়সালের লাশ উদ্ধারের পরপর তার রাইস মিলটি সিল করে দিয়েছিল পুলিশ। তবে সেসময় পরে আর তার বিরুদ্ধে তদন্ত এগোয়নি।
অন্যদিকে, গ্রেফতার জসীম মোল্যা পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রের নাইট গার্ড ছিলো। ফয়সালের লাশ উদ্ধারের পর সেও গা ঢাকা দিয়েছিল।
২০১১ সালের ১৫ এপ্রিল সকাল ১০টার দিকে ডুমাইন মাঠে ফুটবল খেলা দেখার সময় পাখি মারার কথা বলে দুর্বৃত্তরা ফয়সালকে সকলের সামনেই ডেকে নিয়ে অপহরণ করে। এরপর তার শরীর থেকে বিভিন্ন অঙ্গ-প্রতঙ্গ কেটে নিয়ে পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রের সেফটি ট্যাংকে লাশ গুম করে।
মুক্তিযোদ্ধা শেখ আব্দুস সাত্তারের সন্তান এই ফয়সাল চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র ছিলো। তিন ভাই তিন বোনের মধ্যে ফয়সাল সবার ছোট। ফয়সাল নিখোঁজ হওয়ার পর তার পিতার করা জিডির সূত্র ধরে ওই বছরের ১৭ এপ্রিল গ্রেফতার হয় প্রধান আসামী জাহাঙ্গির আলম পলাশ। তাকে দু’দিনের রিমাণ্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদের পর ৩০ এপ্রিল গ্রেফতার হয় অপর আসামী মুরাদ বিশ্বাস। তাকেও দু’দিনের রিমাণ্ডে নেয়া হয়। এরপর ১২ ও ১৩ মে তাদের দু’জনকে আবারও একসাথে রিমাণ্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। এরপরই ১৫ মে ফয়সালের লাশের সন্ধান মিলে। মাত্র চার মাসের মধ্যে তদন্ত শেষে ওই বছরের ১০ আগষ্ট আদালতে চার্জশীট দেয়া হয়।
ফয়সাল অপহরণ ও হত্যা মামলা তদন্তে শুরু হতেই আপত্তি তুলে নিহতের পরিবার। আসামীদের রক্ষার জন্য তড়িঘড়ি করে চার্জশীট দেয়ারও অভিযোগ করেন এনে নিম্ন আদালতে তারা নারাজি দিলেও না মঞ্জুর হয়। পরবর্তীতে ২০১৬ সালের ১৯ জানুয়ারী হাইকোর্টের শরণাপন্ন হন তারা। ওই আপিলের শুনানী শেষে বিচারপতি জাহাঙ্গির হোসেন ও বিচারপতি মো. রেজাউদ্দিন খান সমন্বয়ে বেঞ্চ ২০১৯ সালের ১২ নভেম্বর মামলাটি পুনরায় তদন্তের জন্য ফরিদপুর সিআইডিকে নির্দেশ দেন। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ওই আদেশ পেয়ে ফরিদপুর সিআইডি মামলা তদন্ত শুরু করে। এরপর নতুন করে গ্রেফতার হয় দু’জন।
মামলার বাদি ফয়সালের পিতা মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সাত্তার শেখ বলেন, ফয়সাল হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশের হাতে গ্রেফতার পলাশ ও মুরাদকে রিমাণ্ডে নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেলেও ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি নেয়া হয়নি সে সময়।
তিনি বলেন, ফয়সালকে হত্যার পর কিডনীসহ শরীরের অঙ্গ প্রতঙ্গ বিক্রি করে দেয় খুনিরা। পুলিশের তদন্তে তাদের নানা অপকর্ম বেরিয়ে আসে। দৃশ্যমান কোন আয় না থাকলেও তাদের বাড়িতে বিল্ডিং উঠছে! প্রথম যে দু’জন আসামী গ্রেফতার হয়েছিল তারা এরই মধ্যে জামিনে বেরিয়ে কয়েকজন স্বাক্ষীকে ম্যানেজ করে ফেলেছে।
ফরিদপুরে সিআইডির এসআই মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, মামলার তদন্ত চলছে। আমরা এই মামলার তদন্তে নেমে দু’জনকে গ্রেফতার করেছি। তাদের রিমাণ্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। আশা করি শিঘ্রই অধিকতর তদন্ত শেষে প্রতিবেদন দাখিল করতে পারবো। এব্যাপারে তদন্তের স্বার্থে তিনি বিস্তারিত কিছু জানাননি।
এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার সিআইডি মাসুম বিল্লাহ তালুকদারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বিষয়টি গুরুত্বের সাথে তদন্তের জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন। সিআইডির উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যেয়ে নতুন করে মামলাটির তদন্ত করবেন আবারও।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।