চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে বাংলাদেশে স্বর্ণের দাম রেকর্ড স্তরে পৌঁছেছে। শুধু সেপ্টেম্বরের প্রথম ১০ দিনেই ছয়বার দাম বেড়েছে। বর্তমানে ২২ ক্যারেট স্বর্ণের ভরি প্রতি দাম দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৮৫ হাজার ৯৪৭ টাকা, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
দামের লাগামহীন উত্থানে ক্রেতারা আগ্রহ হারাচ্ছেন, বিপাকে পড়েছেন জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা। সর্বশেষ একদিনের ব্যবধানে ২২ ক্যারেট স্বর্ণের দাম বেড়েছে ৩ হাজার ১৩৫ টাকা। এর সঙ্গে ৫ শতাংশ ভ্যাট ও ৬ শতাংশ মজুরি যোগ হওয়ায় একভরি গয়নার প্রকৃত মূল্য দাঁড়াচ্ছে প্রায় ২ লাখ টাকার বেশি।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, স্বর্ণের দাম কেবল বাজারে রেকর্ড গড়ছে না, এটি নিরাপদ বিনিয়োগের জনপ্রিয় মাধ্যম হিসেবেও শক্ত অবস্থান করছে। তবে তারা বলছেন, বাংলাদেশে ক্রেতা কমছে, কিন্তু বৈশ্বিক প্রভাব ও বিনিয়োগকারীর আগ্রহ দাম বাড়ানোর অন্যতম কারণ। আগামী বছর বা তার পরের সময়ে স্বর্ণের দাম প্রতিভরি দুই লাখ টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করছেন জুয়েলার্স ব্যবসায়ীরা।
বাজুসের হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছর এখন পর্যন্ত ৫১ বার সোনার দাম সমন্বয় করা হয়েছে, যার মধ্যে ৩৫ বার দাম বেড়েছে এবং ১৬ বার কমেছে। ব্যবসায়ীদের মতে, দামের লাগামহীন বৃদ্ধির কারণে নতুন গয়নার বিক্রি ৩০-৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে। কোথাও কোথাও এই হার ৫০ শতাংশে পৌঁছেছে। আগে যেখানে দোকানগুলোতে নতুন গয়না বিক্রি ছিল ৭০ শতাংশ এবং পুরোনো গয়না ক্রয় ৩০ শতাংশ, এখন তার উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে।
ঢাকার মানিকনগর- গোপীবাগের ক্রেতা আনোয়ার হোসেন বলেন, “মেয়ের বিয়ের জন্য ৫ লাখ টাকার বাজেট করেছিলাম। কিন্তু স্বর্ণের দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন আর পরিকল্পনা অনুযায়ী কেনাকাটা সম্ভব হচ্ছে না।”
বিশ্লেষকরা বলছেন, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা, আমদানি শুল্ক বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক বাজারের দামের ওঠানামা বাংলাদেশের বাজারে স্বর্ণের চাহিদা বাড়িয়েছে। নিরাপদ বিনিয়োগ মাধ্যম হিসেবে স্বর্ণের জনপ্রিয়তা বাড়ায় দেশের বাজারেও এর দাম লাগাতার ঊর্ধ্বমুখী।
স্বর্ণের দাম কি ৫ হাজার ডলার ছুঁবে?
বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম নতুন রেকর্ড গড়ছে। চলতি সপ্তাহে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ৩ হাজার ৬৪৭ ডলার ছাড়িয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, এ ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী বছরগুলোর মধ্যে দাম ৪ হাজার ডলার অতিক্রম করা সময়ের ব্যাপার, আর অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি হলে এক সময় অচিন্তনীয় ৫ হাজার ডলারের মাইলফলকও স্পর্শ করতে পারে।
আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ ব্যাংক গোল্ডম্যান স্যাকস স্বর্ণকে বর্তমানে তাদের “সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য বিনিয়োগ” হিসেবে উল্লেখ করেছে। প্রতিষ্ঠানটির পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ দাম পৌঁছাতে পারে ৩ হাজার ৭০০ ডলারে এবং ২০২৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে ৪ হাজার ডলারে। তাদের ধারণা, যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারিজে বেসরকারি বিনিয়োগের মাত্র ১ শতাংশ স্বর্ণে স্থানান্তরিত হলেও দাম ৫ হাজার ডলারের ঘরে পৌঁছে যেতে পারে।
বিশ্বব্যাপী স্বর্ণ ভাণ্ডারে পরিবর্তনও দামের ঊর্ধ্বগতিকে ত্বরান্বিত করছে। ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিল জানিয়েছে, বৈশ্বিক সরকারি স্বর্ণ মজুত বর্তমানে ৩৬,৭০০ টন ছাড়িয়েছে, যা বিশ্বে মোট বৈদেশিক রিজার্ভের প্রায় ২৭ শতাংশ। ২০২৪ সালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো ১১৮০ টন স্বর্ণ কিনেছে, যা ১৯৬৭ সালের পর সর্বোচ্চ।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রে ঋণ ৩৭ ট্রিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে, সুদের ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে ডলারের স্থিতিশীলতা প্রশ্নবিদ্ধ। ফলে বিনিয়োগকারীরা ‘অরাজনৈতিক’ সম্পদ হিসেবে স্বর্ণকে বেছে নিচ্ছেন।
স্বর্ণের দাম বারবার বাড়ার কারণ
বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ পণ্য হিসেবে স্বর্ণকে বেছে নিচ্ছেন। বিশেষত ইউক্রেন ও গাজায় যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যনীতি, এবং বৈশ্বিক মুদ্রা অস্থিরতার কারণে দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে।
অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক কেসিএম ট্রেডের প্রধান বাজার বিশ্লেষক টিম ওয়াটারার মনে করেন, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার সময় বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজার বা বন্ডের তুলনায় স্বর্ণকেই সবচেয়ে নিরাপদ বিনিয়োগ মনে করেন। তিনি রয়টার্সকে বলেন, “স্বর্ণের দাম তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল হওয়ায় অনিশ্চয়তার সময় বিনিয়োগকারীরা এর দিকে বেশি ঝুঁকছেন। শেয়ারবাজারে হঠাৎ ওঠা-নামার ঝুঁকি এড়াতে স্বর্ণকে নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে দেখা হচ্ছে।”
যুক্তরাষ্ট্রে ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার কমানোর সম্ভাবনা, ডলারের দুর্বলতা, এবং মার্কিন শুল্কনীতির প্রভাবও স্বর্ণের দাম বাড়াচ্ছে। ডলার দুর্বল হলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা তুলনামূলকভাবে বেশি স্বর্ণ কিনতে সক্ষম হন।
দেশের বাজারে প্রভাব
বাংলাদেশে স্বর্ণের দাম ২০০০ সালে ২২ ক্যারেট একভরি ছিল মাত্র ৬,৯০০ টাকা। ২০১০ সালে তা দাঁড়ায় ৪২,১৬৫ টাকা, ২০২০ সালে প্রায় ৭০,০০০ টাকা এবং ২০২৩ সালে প্রথমবারের মতো এক লাখ টাকা অতিক্রম করে। চলতি বছরের শুরুতে দাম ছিল দেড় লাখ, এখন পৌঁছেছে ১,৮৫,৯৪৭ টাকায়। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, চলমান ধারা অব্যাহত থাকলে ২০২৬ সালের মধ্যে একভরির দাম দুই লাখ টাকা ছুঁতে পারে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা, আমদানি শুল্ক বৃদ্ধি ও আন্তর্জাতিক অনিশ্চয়তার কারণে বিনিয়োগকারীরা সোনার প্রতি বেশি ঝুঁকছেন। নিরাপদ বিনিয়োগ মাধ্যম হিসেবে বিশ্ববাজারে চাহিদা বাড়ায় দেশের বাজারেও এর প্রভাব পড়ছে।
বাজুসের স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান জানিয়েছেন, “দামের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে বৈশ্বিক বাজারের ওপর। তবে আন্তর্জাতিক চাহিদা এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর স্বর্ণ মজুতের ধারা বিবেচনায় এ ধরনের বৃদ্ধি অস্বাভাবিক নয়।”
বাজুসের সহসভাপতি মাসুদুর রহমান বলেন, “সোনার দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। বিক্রি কমায় কারিগররা বেকার হয়ে পড়ছেন।”
ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের গুলশান শাখার ইনচার্জ সাগর সরকার জানান, সাধারণত দামের ঊর্ধ্বগতিতে বিক্রি বাড়ে, কিন্তু এবার উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে। অনেক ক্রেতাই আর সোনা কেনার সামর্থ্য রাখছেন না।
পুরান ঢাকার তাঁতিবাজারে প্রায় পাঁচ দশক ধরে স্বর্ণ ব্যবসা করছেন গোবিন্দ হালদার। তিনি বলেন, “স্বাধীনতার আগে গিনি স্বর্ণের দাম ছিল দেড়শ টাকা। তখনও মানুষের অভিযোগ ছিল, দাম নাগালের বাইরে। এখন তো অবস্থা আরও কঠিন। বছরখানেকের মধ্যে ভরিপ্রতি দাম ২ লাখ টাকা হওয়াও অসম্ভব নয়।”
২০২৪ সালে দেশে মোট ৬২ বার স্বর্ণের দাম সমন্বয় করা হয়েছিল—যার মধ্যে ৩৫ বার দাম বেড়েছে, আর ২৭ বার কমেছে।
ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের ২০২৫ সালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের পর থেকে ডলারের হিসাবে প্রতিবছর গড়ে ৮ শতাংশ হারে বেড়েছে স্বর্ণের দাম। বর্তমানে বিশ্ববাজারে স্বর্ণের বার্ষিক চাহিদা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৩৪ টন, যার মূল্য ২৩৩ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হচ্ছে প্রায় ৪০ শতাংশ, গহনার জন্য ৩৩ শতাংশ, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভে ২০ শতাংশ এবং প্রযুক্তি খাতে ৭ শতাংশ।
তবে বাংলাদেশে স্বর্ণের প্রকৃত মজুতের কোনও সরকারি বা প্রাতিষ্ঠানিক হিসাব নেই। মাসুদুর রহমান বলেন, “ভারতে সাধারণ মানুষের হাতে কত টন স্বর্ণ আছে— সে বিষয়ে সরকারি হিসাব রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে ব্যক্তি পর্যায়ের স্বর্ণ মজুতের কোনও তথ্য রাষ্ট্রীয়ভাবে নেই।”
অপরদিকে, ডলারের দাম বাড়া, কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর স্বর্ণ কেনার প্রবণতা এবং রাশিয়ার ওপর পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা— এসব কারণে বৈশ্বিক বাজারে দাম আরও বাড়ছে। সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতি নিয়েও বাজারে প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছে বাজুস।
বিনিয়োগের ক্ষেত্রে স্বর্ণ এখনও সাধারণ মানুষের কাছে খুব জনপ্রিয় নয়। অনেকেই মনে করেন, দাম অযৌক্তিকভাবে বেড়ে যাচ্ছে। তবে বাজুস কর্মকর্তাদের মতে, আর্থিক জ্ঞানের অভাবও বড় কারণ।
মাসুদুর রহমান বলেন, “পুঁজিবাজারে লাখ লাখ মানুষ ঝুঁকি জেনেও বিনিয়োগ করছেন। অথচ স্বর্ণে বিনিয়োগে লোকসান হয়েছে— এমন দৃষ্টান্ত পাওয়া বিরল। সাজসজ্জার বাইরে স্বর্ণকে যদি বিনিয়োগের মাধ্যম হিসেবে ধরা হয়, তবে দাম যতই বাড়ুক চাহিদা কমবে না।”
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভ্যাট-ট্যাক্সের জটিলতা নিরসন এবং সাধারণ মানুষকে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে স্বর্ণকে উৎসাহিত করার উদ্যোগ নিলে দেশের বাজারেও এর প্রতি আগ্রহ বাড়বে। ফলে বৈশ্বিক বাজারের মতো দেশীয় বাজারেও চাহিদা টিকে থাকবে।
স্বর্ণ ভাণ্ডারে ঐতিহাসিক পরিবর্তন
চীন, রাশিয়া, ভারত, তুরস্ক ও কাজাখস্তানসহ উদীয়মান অর্থনীতিগুলো দ্রুত মজুত বাড়াচ্ছে। এমনকি ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোও তাদের কৌশল নতুন করে সাজিয়েছে।
সরবরাহ সংকট বাড়াচ্ছে দাম
অপরদিকে, স্বর্ণ উৎপাদন বাড়াতে হিমশিম খাচ্ছে খনিশিল্প। নতুন খনিজভাণ্ডার আবিষ্কার কম, আর বিদ্যমান খনির মানও নিম্নমুখী। ফলে বাজারে সরবরাহ সীমিত হচ্ছে, যা চাহিদার সঙ্গে মিলে দামের ঊর্ধ্বগতিকে আরও ত্বরান্বিত করছে।
বিনিয়োগকারীদের জন্য বার্তা
বিশ্ব অর্থনীতি যখন অনিশ্চয়তায় নিমজ্জিত— শেয়ারবাজার অতিমূল্যায়িত, বাণিজ্যযুদ্ধ ও নতুন শুল্ক বাড়ছে, আর সরকারি ঋণ তীব্র চাপ তৈরি করছে— তখন স্বর্ণ আবারও হয়ে উঠছে নিরাপদ আশ্রয়। ইতিহাসে বারবার যেমন দেখা গেছে— ১৯৩০-এর মন্দা, ১৯৭০-এর ব্রেটন উডস ভাঙন, কিংবা ২০০৮ সালের বৈশ্বিক সংকট, প্রতিবারই স্বর্ণে ঝুঁকেছেন বিনিয়োগকারীরা।
বিশেষজ্ঞদের ভাষায়, “কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো এখন আর স্বর্ণ কিনছে না শুধু দামের কারণে, বরং বিকল্প সম্পদগুলো আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে বলে।”
কীভাবে স্বর্ণে বিনিয়োগ হচ্ছে
স্বর্ণের বিনিয়োগের দুটি প্রধান উপায় রয়েছে। প্রথমত, সরাসরি স্বর্ণের বার, গলানো স্বর্ণ, গয়না বা মুদ্রা কেনা। দ্বিতীয়ত, আর্থিক পণ্যের মাধ্যমে বেচাকেনা।
বিনিয়োগকারীরা ভবিষ্যৎ চুক্তি (ফিউচার্স) কেনাবেচাও করেন, যেখানে নির্দিষ্ট দামে ভবিষ্যতে স্বর্ণ কেনা বা বিক্রির শর্ত থাকে। এ ছাড়া বিনিয়োগ তহবিলও রয়েছে, যেগুলো স্বর্ণের দামের ওঠানামা অনুসরণ করে।
ব্যক্তি পর্যায়ে সরাসরি স্বর্ণ কেনা সহজ হলেও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত এসব পণ্য ব্যবহার করে। কারণ, এতে তাদের প্রচুর স্বর্ণ হাতে রাখতে বা সংরক্ষণ করতে হয় না।
স্বর্ণের মূল্য সাধারণত মার্কিন ডলারে নির্ধারিত হয় এবং ডলারের সঙ্গে এর সম্পর্ক উল্টো। অর্থাৎ ডলারের মান কমলে স্বর্ণের দাম বাড়ে, আর উল্টোটা ঘটলেও একইভাবে প্রভাব ফেলে।
ট্রাম্প যেভাবে স্বর্ণের দাম বাড়াচ্ছেন
এপ্রিল মাসে ট্রাম্প বিশ্বের বহু দেশের বিরুদ্ধে তার ‘লিবারেশন ডে’ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। এতে বৈশ্বিক বাণিজ্যের ভবিষ্যৎ নিয়ে বড় ধরনের অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। আর তখনই স্বর্ণের দাম হঠাৎ বেড়ে যায়।
এছাড়া সম্প্রতি ট্রাম্প মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের স্বাধীনতার ওপর আক্রমণ বাড়িয়েছেন, যা দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতির ঊর্ধ্বে হিসেবে বিবেচিত হতো। এটিও দাম বাড়ানোর পেছনে ভূমিকা রেখেছে।
আবার ট্রাম্প বারবার কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সুদের হার কমাতে চাপ দিয়েছেন অর্থনীতি চাঙা করার উদ্দেশ্যে। তিনি ডলারের মানও কমাতে চান, যাতে মার্কিন রফতানি আরও প্রতিযোগিতামূলক হয়।
ক্যাপিটাল ডট কমের সিনিয়র আর্থিক বিশ্লেষক কাইল রডার মতে, এই দুই পরিস্থিতিই স্বর্ণকে বিনিয়োগকারীদের কাছে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম আলজাজিরাকে তিনি বলেছেন, ‘যদি সুদের হার বাড়ে, তাহলে সোনা কম আকর্ষণীয় হয়। কারণ তখন ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মতো সুদযুক্ত সম্পদ থেকে বেশি আয় পাওয়া যায়। কিন্তু সুদের হার কমলে হাতে কম সুদ আসে, তখন সোনা ধরে রাখা তুলনামূলকভাবে বেশি লাভজনক হয়ে ওঠে।’
একই নিয়ম অন্যান্য সুদযুক্ত সম্পদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য, যেমন সরকারি বন্ড। রডা আরও বলেন, ‘‘ডলার দুর্বল হলে বিদেশি মুদ্রায় লেনদেন করা বিনিয়োগকারীরাও বেশি সোনা কেনেন। কারণ তখন তারা একই অর্থে তুলনামূলক বেশি সোনা কিনতে পারেন।’’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।