জুমবাংলা ডেস্ক : ঢাকার নবাবগঞ্জের নয়নশ্রী ইউনিয়নের শান্তিনগর এলাকায় খালের ওপর প্রায় এক যুগ আগে নির্মাণ করা হয় একটি সেতু। কিন্তু আজ পর্যন্ত সেই সেতুর দুই পাশে নির্মাণ হয়নি সংযোগ সড়ক। এক যুগ ধরে একাই দাঁড়িয়ে আছে সেতুটি।
সংযোগ সড়ক না থাকায় সেতুটি কোনো কাজেই আসছে না গ্রামবাসীদের। উপরন্তু তাদের ভোগান্তি বাড়িয়েছে অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত সেতুটি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার এক পাশে একা দাঁড়িয়ে আছে সড়কবিহীন সেতুটি। নেই কোনো সংযোগ সড়ক, অপরিকল্পিতভাবে সেতু নির্মাণ করায় একদিনের জন্যও ব্যবহার করতে পারেনি পথচারীরা। দুর্নীতি ঢাকতে সেতু নামফলকটিও উঠিয়ে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা।
সেতু না থাকায় এবং সামান্য বৃষ্টিতে সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ায় স্কুল শিক্ষার্থী ও পথচারীদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। কেউ অসুস্থ হলে হাসপাতালে নিতেও বেগ পেতে হয় স্থানীয়দের।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, অব্যবহৃত সেতুটি বখাটেদের আড্ডাস্থলে পরিণত হয়েছে। বিকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে বখাটের আড্ডা। উচ্ছৃঙ্খল যুবকদের অশ্লীল কথাবার্তায় বিব্রত অবস্থায় পড়তে হয় বলে জানান সেতুর পার্শ্ববর্তী বাসিন্দাদের।
স্থানীয়রা জানান, ২০১৩ সালে নয়নশ্রী ইউনিয়নের শান্তিনগর থেকে নলগোড়া হয়ে যন্ত্রাইল ও শোল্লা যাওয়ার জন্য খালের ওপর সেতুটি নির্মাণ করা হয়।
স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, প্রায় ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা সেতুটির দুপাশে মাটি ভরাট না করায় একদিনও ব্যবহার করতে পারেনি পথচারীরা। পাশাপাশি সেতুটি না হওয়ায় কাঁচা সড়কটি সংস্কার করা হয়নি। সেই সঙ্গে কাঁচা সড়কটি দিয়ে কৃষি জমি থেকে অবৈধভাবে বিক্রিকৃত মাটি মাহেন্দ্র দিয়ে সরবরাহ করায় রাস্তাটি চলাচলের আরও অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ফলে যোগাযোগের সুবিধাবঞ্চিত রয়ে যাচ্ছে এলাকাবাসী।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. সুমন জানান, সেতুটি আমাদের কোনো উপকারেই আসে নাই কারণ সেতুর দুপাশে কোনো মাটি নেই। শান্তিনগর প্রাইমারি স্কুল, মাদ্রাসা রয়েছে সেখানে শিক্ষার্থীদের যেতে খুব কষ্ট হয়। মানুষের বাড়ির উপর দিয়ে চলাচল করলে অনেক মানুষ কটু কথা বলে। আমরা খুব সমস্যায় আছি। চলাচলের জন্য সেতুর দুপাশে মাটি বা আলাদা কালভার্ট করা উচিত।
ববিতা আক্তার বলেন, আমাদের এলাকায় রাস্তা দিয়ে গাড়ি চলতে পারে না। কেউ অসুস্থ হলে মরে যাওয়ার অবস্থা। হাসপাতালে নিতে নিতেই শেষ। নির্বাচনের আগে চেয়ারম্যান আশা দেন রাস্তা ঠিক করে দিবেন, কিন্তু ভোট হলেই শেষ।
শান্তিনগরের বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ। প্রতি সপ্তাহ ঢাকা ও নবাবগঞ্জ সদরে যেতে হয় ডাক্তার দেখাতে। সেতুটির কারণে বাসার সামনে গাড়ি আসতে পারে না। খুব কষ্ট হয় বাজার পর্যন্ত হেঁটে যেতে।
তিনি আরও বলেন, এমন সেতু বানাইছে মানুষ তো দূরের কথা এখন পর্যন্ত মনে হয় একটা কুত্তাও উঠতে পারে নাই।
স্থানীয় বসিন্দা মিদুল বলেন, আমরা সাধারণত সেতু নিচ দিয়ে হেঁটে চলাচল করি। কিন্তু বর্ষার সময় আমাদের কষ্ট বেঁড়ে যায়। তখন সেতুর দুইপাশ পানিতে ডুবে যায়। সেতুটি কোনো কাজেই আসে না। এখন এটাকে ভেঙে এখানে কালভার্ট করা উচিত। তাহলে আমরা চলাচল করতে পারতাম। রাস্তাটাও সংস্কার হতো।
গৃহবধূ আনোয়ারা বেগম বলেন, ওই সেতু কাজে তো একদিনও লাগেনি বরং ক্ষতি হয়েছে। সেতু এখন মাদকসেবী ও বখাটেদের আড্ডা। বিকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এখানে পোলাপানের আনাগোনা থাকে। রাতে ঘুমাতেও পারি না ওদের চিল্লাচিল্লিতে। বিশ্রী ভাষায় গালিগালাজ করে, আমরা প্রতিবাদও করতে পারি না। বাড়ির বৌ-ঝিদের নিয়ে খুব বিপদে আছি। তবে মাঝে মাঝে পুলিশ আসে, তখন সবাই পালিয়ে যায়।
আ. জলিল নামে এক বৃদ্ধ বলেন, এটা তো সেতু করে নাই, পোলাপানের গাঁজা খাওয়ার আড্ডার জায়গা বানিয়ে দিছে। সন্ধ্যার পর এলেই গাঁজার গন্ধে থাকা যায় না। গাঁজা খাওয়া, তাস খেলায় মগ্ন থাকে পোলাপান। আমরা প্রতিবাদ করলে আমাদের উপর জুলুম করে। তাই প্রতিবাদও করি না।
নয়নশ্রী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পলাশ চৌধুরী বলেন, সেতুটির কারণে মানুষের চলাচলের খুব কষ্ট হচ্ছে। আমি একাধিকবার মাসিক সমন্বয় মিটিং এ বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছি কিন্তু উপজেলা পরিষদ থেকে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ১৯৯৮ বন্যার কথা চিন্তা করে ২০১৩ সালে সেতুটি হয়েছিল। যেন বর্ষায় সেখানে গরু ছাগল আশ্রয় নিতে পারেন। তবে আশেপাশের লোকজন জমি না দেওয়ায় এ্যাপোচের কাজ সম্পূর্ণ করা সম্ভব হয়নি বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
উপজেলা প্রকৌশলী জুলফিকার হক চৌধুরী বলেন, এটা আমাদের প্রকল্প না। এলজিইডির কোনো ব্রিজ এ্যাপ্রোচ ছাড়া নাই। আপনি প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় (পিআইও) অফিসে যোগাযোগ করেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. হাসান আহমেদ বলেন, আমি ব্যাপারটা অবগত ছিলাম না। আপনার মাধ্যমে জানতে পারলাম। দ্রুত সরজমিনে গিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। তবে যেহেতু ১০ বছরের উপরে হয়ে গেছে তাই নথি পাওয়াটা দুষ্কর।
সূত্র : যুগান্তর
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।